ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে জাতিসংঘের ত্রাণ সংস্থার কার্যক্রম পরিচালনায় বাধা দেওয়ায় ইসরায়েলের প্রতি জাতিসংঘের উদ্বেগের বিষয়টি আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) উত্থাপিত হয়েছে। নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগে অবস্থিত আন্তর্জাতিক আদালতে শুনানি চলছে, যেখানে জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা এবং সদস্য রাষ্ট্রগুলো ইসরায়েলের বিরুদ্ধে তাদের বক্তব্য তুলে ধরছে।
তাদের মূল অভিযোগ, ফিলিস্তিনিদের জন্য ত্রাণ সরবরাহ এবং মানবিক সহায়তা কার্যক্রমে ইসরায়েল ইচ্ছাকৃতভাবে বাধা সৃষ্টি করছে, যা জাতিসংঘের কার্যক্রমের পরিপন্থী।
শুনানিতে জাতিসংঘের পক্ষ থেকে বলা হয়, ফিলিস্তিনি অঞ্চলে জাতিসংঘের সংস্থাগুলোর স্বাধীনভাবে কাজ করার অধিকারকে ইসরায়েল অস্বীকার করছে, যা জাতিসংঘের মৌলিক কাঠামোকে দুর্বল করে দিচ্ছে। জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল এলিনর হামারস্কজোল্ড আদালতের শুনানিতে বলেন, জাতিসংঘের সনদ এবং ১৯৪৬ সালের কনভেনশন অনুযায়ী, জাতিসংঘের সংস্থাগুলোর বিশেষ অধিকার রয়েছে এবং ইসরায়েল একতরফাভাবে তাদের কার্যক্রমকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারে না।
তিনি আরও উল্লেখ করেন, কোনো সদস্য রাষ্ট্রের যদি জাতিসংঘের কোনো সংস্থার নিরপেক্ষতা নিয়ে অভিযোগ থাকে, তবে তা সমাধানের জন্য নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া রয়েছে।
অন্যদিকে, ইসরায়েল তাদের অবস্থানে অনড় রয়েছে। তাদের দাবি, ফিলিস্তিনিদের জন্য ত্রাণ সরবরাহকারী সংস্থা ইউএনআরওয়া-এর সঙ্গে সহযোগিতা বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, কারণ হামাস এতে অনুপ্রবেশ করেছে। ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রী গিদিওন সা’র এই শুনানিকে ‘ইসরায়েলের বিরুদ্ধে একটি পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র’ হিসেবে অভিহিত করেছেন।
শুনানিতে ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূত আম্মার হিজাজি অভিযোগ করেন, ইসরায়েল আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে ফিলিস্তিনিদের খাদ্য, জল এবং চিকিৎসা সহায়তা থেকে বঞ্চিত করছে। তিনি বলেন, গাজায় বসবাসকারী প্রতি ১০ জনের মধ্যে ৯ জনই নিরাপদ পানীয় জল থেকে বঞ্চিত এবং জাতিসংঘের খাদ্য ভাণ্ডারগুলো খালি হয়ে গেছে।
গাজায় প্রায় ২৪ লাখ ফিলিস্তিনির জন্য আন্তর্জাতিক সহায়তা সরবরাহে ইসরায়েল কড়া নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেছে। গত ২ মার্চ থেকে তারা ত্রাণ সরবরাহ বন্ধ করে দেয়। জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি জানিয়েছে, তাদের হাতে মজুত থাকা শেষ খাদ্যসামগ্রীও তারা বিতরণ করেছে।
ফিলিস্তিনের পক্ষে শুনানিতে অংশ নেওয়া আইনজীবী পল রাইকলার বলেন, জেনেভা কনভেনশন অনুযায়ী, দখলদার শক্তি হিসেবে ইসরায়েলের ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনায় সহায়তা করা উচিত।
আদালতে প্রায় ৪০টি দেশ এবং চারটি আন্তর্জাতিক সংস্থা অংশ নিচ্ছে। আগামী কয়েক মাসের মধ্যে আদালত এ বিষয়ে তাদের পরামর্শমূলক রায় দেবে। যদিও এই রায়টি আইনগতভাবে বাধ্যতামূলক নয়, তবে আন্তর্জাতিক আইন, ইসরায়েলের প্রতি আন্তর্জাতিক সহায়তা এবং জনমতের ওপর এর গভীর প্রভাব ফেলতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান