গাজায় ফিলিস্তিনি উদ্বাস্তুদেরদের সাহায্যকারী সংস্থা UNRWA-এর কর্মীদের উপর ইসরায়েলি বাহিনীর নির্যাতনের গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। জাতিসংঘের এই সংস্থার প্রধান ফিলিপ্পে লাজারি জানান, গাজায় চলমান সংঘাতে তাদের ৫০ জনের বেশি কর্মীকে আটক করে নির্যাতন করা হয়েছে।
এদের মধ্যে শিক্ষক, চিকিৎসক ও সমাজকর্মীরাও রয়েছেন। লাজারির অভিযোগ, আটককৃতদের উপর চালানো হয়েছে চরম নির্যাতন।
তাদের মারধর করা হয়েছে, মানব ঢাল হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে এবং ঘুমের অভাবসহ নানাভাবে মানসিক নিপীড়ন চালানো হয়েছে। এমনকি তাদের পরিবারকে ক্ষতি করার হুমকিও দেওয়া হয়েছে।
আটককৃতদের কাছ থেকে জোর করে স্বীকারোক্তি আদায় করা হয়েছে বলেও তিনি জানান। জাতিসংঘের কর্মকর্তাদের মতে, এই নির্যাতন গাজা এবং ইসরায়েলের সামরিক বন্দীশালাগুলোতে চালানো হয়েছে।
যদিও ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী সরাসরি লাজারির এই অভিযোগের জবাব দেয়নি, তবে তারা এর আগে তাদের বন্দীশালাগুলোতে ব্যাপক নির্যাতনের অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তবে, তারা কিছু ক্ষেত্রে সৈন্যদের দ্বারা বন্দী নির্যাতনের ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে এবং সৈন্যদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে।
অন্যদিকে, ফিলিস্তিন রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি (PRCS) জানিয়েছে, গত ২৩শে মার্চ ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় আহতদের উদ্ধারের জন্য যাওয়া তাদের এক কর্মীকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে।
ওই হামলায় PRCS-এর আটজন এবং গাজার বেসামরিক প্রতিরক্ষা বিভাগের ছয়জন কর্মী নিহত হন। এছাড়া নিহত হন UNRWA-এর একজন কর্মীও। জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার টুর্ক এই ঘটনায় সম্ভাব্য যুদ্ধাপরাধের আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
এই ঘটনার পর থেকে ইসরায়েল এবং UNRWA-এর মধ্যে সম্পর্ক আরও খারাপ হয়েছে। ইসরায়েল ইতোমধ্যেই গাজায় UNRWA-এর কার্যক্রমের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে এবং তাদের বিরুদ্ধে হামাসের সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগ এনেছে।
যদিও UNRWA এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (ICJ)-এ ইসরায়েলের প্রতি ফিলিস্তিনিদের মানবিক অধিকার রক্ষার বিষয়ে বিভিন্ন দেশ ও সংস্থার বক্তব্য শোনা হচ্ছে।
এখানে UNRWA-এর কার্যক্রমের ওপর ইসরায়েলের নিষেধাজ্ঞা কতটুকু বৈধ, সেই বিষয়টিও বিবেচনা করা হচ্ছে। ইসরায়েল অবশ্য ICJ-এর শুনানিতে অংশ নিচ্ছে না এবং একে তাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার হিসেবে উল্লেখ করেছে।
গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর বোমা হামলা এখনো অব্যাহত রয়েছে। স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের মতে, গত ৩৬ ঘণ্টায় অন্তত ২৭ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, তারা তিনজন জঙ্গি কমান্ডারকে হত্যা করেছে এবং আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের নিয়ম মেনেই অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে।
অন্যদিকে, গাজার স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা বলছেন, ১৮ই মার্চ থেকে ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় ৭৩২ জন শিশুসহ ২,১৫১ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
এছাড়া, গত দুই মাস ধরে গাজায় খাদ্য, জ্বালানি ও ঔষধ সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে ইসরায়েল। তাদের দাবি, এর মাধ্যমে তারা হামাসকে জিম্মিদের মুক্তি দিতে বাধ্য করতে চাইছে।
তবে মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, ইসরায়েলের এই পদক্ষেপ একটি ‘ক্ষুধা কৌশল’, যা পুরো জনগোষ্ঠীর জীবনকে ঝুঁকিতে ফেলছে এবং যুদ্ধাপরাধের পর্যায়ে পরে।
আলোচনা এখনো পর্যন্ত ফলপ্রসূ হয়নি, তবে বিশ্লেষকরা মনে করছেন, মে মাসে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সৌদি আরব, কাতার ও সংযুক্ত আরব আমিরাত সফর ইসরায়েলের উপর যুক্তরাষ্ট্রের চাপ বাড়াতে পারে, যা একটি সমাধানে পৌঁছাতে সহায়তা করতে পারে।
সংস্থাটির তথ্যমতে, গাজায় আক্রমণ শুরুর পর থেকে ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় এখন পর্যন্ত ৫২,০০০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান