গাজায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় নারী ও শিশুসহ অন্তত ৩৩ জন ফিলিস্তিনির মৃত্যু হয়েছে। রবিবার হাসপাতাল সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।
একই সময়ে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, তারা গত ২৪ ঘন্টায় গাজায় ১০০টির বেশি স্থানে আঘাত হেনেছে।
সংবাদ সংস্থা এপির খবর অনুযায়ী, ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু যখন যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনার জন্য হোয়াইট হাউসে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন, ঠিক তখনই এই হামলা চালানো হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প একটি প্রস্তাব দিয়েছেন, যেখানে হামাস কর্তৃক জিম্মিদের আংশিক মুক্তির বিনিময়ে প্রথমে ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতি এবং গাজায় মানবিক সহায়তা বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে।
এই প্রস্তাবের আওতায় ২১ মাস ধরে চলা যুদ্ধের সম্পূর্ণ অবসানের জন্য আলোচনা চালানোরও কথা রয়েছে।
গাজা শহরের দুটি বাড়িতে ইসরায়েলি হামলায় ২০ জন নিহত এবং ২৫ জন আহত হয়েছে বলে জানিয়েছেন সেখানকার আল-শিফা হাসপাতালের পরিচালক মোহাম্মদ আবু সালমিয়া।
অন্যদিকে, গাজার দক্ষিণাঞ্চলে, খান ইউনিসের কাছে মুয়াসী এলাকায়, যেখানে বাস্তুচ্যুত অনেক মানুষ তাঁবুতে আশ্রয় নিয়েছিল, সেখানে হামলায় ১৩ ফিলিস্তিনি নিহত হয়।
স্থানীয় নাসের হাসপাতালের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নিহতদের মধ্যে একই পরিবারের পাঁচ জন সদস্যও ছিলেন।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী তাৎক্ষণিকভাবে পৃথক এই হামলাগুলো নিয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।
তবে তারা জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় গাজা উপত্যকায় ১৩০টি স্থানে হামলা চালানো হয়েছে। তাদের দাবি, এসব হামলায় হামাসের কমান্ড ও কন্ট্রোল কাঠামো, অস্ত্রাগার এবং লঞ্চারগুলো লক্ষ্য করা হয়েছে এবং এতে গাজার উত্তরে বেশ কয়েকজন জঙ্গি নিহত হয়েছে।
গত বছরের ৭ অক্টোবর হামাস ইসরায়েলে হামলা চালালে এই যুদ্ধের সূত্রপাত হয়।
হামাসের হামলায় প্রায় ১,২০০ জন নিহত হয় এবং ২৫১ জনকে জিম্মি করা হয়। এর জবাবে ইসরায়েল গাজায় ব্যাপক সামরিক অভিযান শুরু করে, যাতে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, নিহত হয়েছেন ৫৭,০০০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি, যাদের মধ্যে অর্ধেকের বেশি নারী ও শিশু।
উল্লেখ্য, গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় হামাসের অধীনে থাকায় তারা বেসামরিক নাগরিক এবং যোদ্ধাদের মধ্যে কোনো পার্থক্য করে না।
তবে জাতিসংঘসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো হতাহতের সংখ্যা নির্ধারণের ক্ষেত্রে তাদের দেওয়া পরিসংখ্যানকে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য হিসেবে বিবেচনা করে।
যুদ্ধবিরতি চুক্তির সম্ভাবনা দেখা দেওয়ার মধ্যেই এই হামলাগুলো চালানো হয়।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় জানিয়েছে, কাতার-এ চলমান আলোচনাগুলোতে অংশ নিতে রবিবার তারা একটি প্রতিনিধি দল পাঠাবে।
তবে তারা জানিয়েছে, হামাস প্রস্তাবের মধ্যে “অগ্রহণযোগ্য” পরিবর্তন চাইছে।
নেতানিয়াহুর সোমবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার কথা রয়েছে, যেখানে এই চুক্তি নিয়ে আলোচনা হতে পারে।
তবে হোয়াইট হাউসে বৈঠকের আগেই কোনো চুক্তি হবে কিনা, তা এখনো স্পষ্ট নয়।
হামাস চাইছে, প্রাথমিক যুদ্ধবিরতি যেন যুদ্ধের সম্পূর্ণ সমাপ্তি এবং গাজা থেকে ইসরায়েলি সৈন্য প্রত্যাহার পর্যন্ত পৌঁছায়, সেই নিশ্চয়তা।
অন্যদিকে নেতানিয়াহু জোর দিয়ে বলেছেন, হামাসকে নির্মূল করতে ইসরায়েল লড়তে প্রস্তুত।
এর আগে, হামাসের পক্ষ থেকে যুদ্ধ বন্ধের নিশ্চয়তা চাওয়ার কারণে আলোচনা ভেস্তে গিয়েছিল।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস