গাজায় ইসরায়েলি হামলায় ৭০ জনের বেশি নিহত, নবজাতকও রয়েছে নিহতদের মধ্যে। গাজায় ইসরায়েলের বোমা হামলা আবারও তীব্র হয়েছে।
গত কয়েকদিনে চালানো হামলায় ৭০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে একটি নবজাতকও রয়েছে। বৃহস্পতিবার ভোরের দিকে চালানো হামলায় হতাহতের এই ঘটনা ঘটে।
ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গত রাতে ও বৃহস্পতিবার ভোরে গাজার উত্তরাঞ্চল ও দক্ষিণাঞ্চলে কমপক্ষে ৭১ জন নিহত হয়েছেন। এছাড়াও, বহু মানুষ আহত হয়েছেন।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম কাতার নিউজ নেটওয়ার্ক জানিয়েছে, ইসরায়েলি বাহিনী খান ইউনিসে বেশ কয়েকটি বাড়িতে আঘাত হানলে অন্তত ২০ জন নিহত হন।
অন্যদিকে, গাজার উত্তরে, বেইত লাহিয়ার পশ্চিমে অবস্থিত আস-সুলতান পাড়ার একটি পরিবারকে লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়, যেখানে কমপক্ষে সাতজন নিহত হয়েছেন।
গাজায় আল জাজিরার প্রতিনিধি তারেক আবু আজ্জুম জানিয়েছেন, “ইসরায়েলের হামলাগুলো, বিশেষ করে ভোরবেলায়, তীব্র আকার ধারণ করেছে। ইসরায়েলি বাহিনী কমপক্ষে ১১টি আবাসিক ভবন সম্পূর্ণভাবে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিয়েছে।
আমরা জানতে পেরেছি, মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৭১ জনে দাঁড়িয়েছে। নিহতদের মধ্যে একটি নবজাতক, নারী ও শিশুরাও রয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “ইসরায়েল একটি কৌশলগত পদ্ধতি অনুসরণ করছে, যেখানে ভবনগুলোতে আশ্রয় নেওয়া বেসামরিক নাগরিকদের কোনো ধরনের সতর্কবার্তা দেওয়া হচ্ছে না।”
গত মঙ্গলবার গাজায় প্রায় দুই মাস ধরে চলা যুদ্ধবিরতি ভেঙে যাওয়ার পর নতুন করে এই হামলা শুরু হয়েছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র খলিল আল-দাকরান আল জাজিরাকে জানিয়েছেন, যুদ্ধবিরতি ভেঙে যাওয়ার পর থেকে ইসরায়েলি হামলায় ৭০০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত এবং ৯০০ জনের বেশি আহত হয়েছেন।
আহতদের প্রায় ৭০ শতাংশই শিশু ও নারী।
বুধবার, জাতিসংঘের একটি স্থানে ইসরায়েলি বিমান হামলায় জাতিসংঘের এক বিদেশি কর্মী নিহত এবং আরও পাঁচজন আহত হয়েছেন। জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা প্রধান টম ফ্লেচার এই হামলাকে ‘উত্তেজক’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
তিনি বলেছেন, হামলাটি গাজায় ‘সুস্পষ্টভাবে চিহ্নিত’ একটি জাতিসংঘের কম্পাউন্ডকে লক্ষ্য করে চালানো হয়েছে। জাতিসংঘ এই ঘটনার ‘জবাবদিহি’ চাইছে এবং নিহত সহকর্মীর পরিবারের প্রতি শোক প্রকাশ করেছে।
ফ্লেচার এক বিবৃতিতে আরও বলেন, “আন্তর্জাতিক আইন স্পষ্ট। বেসামরিক নাগরিক – জাতিসংঘের কর্মচারী ও মানবিক সাহায্যকর্মীসহ – তাদের লক্ষ্যবস্তু করা যাবে না। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অবশ্যই একটি সত্যিকারের তদন্ত এবং জবাবদিহিতার জন্য আমাদের সঙ্গে যোগ দিতে হবে।”
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসও ইসরায়েলের এই হামলাকে তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। গুতেরেস বলেছেন, “গাজায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় আমি ক্ষুব্ধ।”
বুধবার ইসরায়েলি সেনারা গাজায় স্থল অভিযান পুনরায় শুরু করার পাশাপাশি নেজারিম করিডোর নিয়ন্ত্রণ পুনরুদ্ধার করেছে। এর ফলে গাজার উত্তরাঞ্চল কার্যত অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে।
গাজা শহর থেকে আল জাজিরার হানি মাহমুদ জানিয়েছেন, “নেজারিম করিডোর পুনর্দখলের মাধ্যমে যুদ্ধবিরতির আগের খারাপ স্মৃতিগুলো ফিরে আসছে। যুদ্ধবিরতির সময় ফিলিস্তিনিরা এই করিডোর অতিক্রম করে তাদের উত্তর দিকের বাড়িতে ফিরতে পারছিল।
কিন্তু এখন আর তা সম্ভব নয়। এখন মানুষের চলাচল বেশ সীমিত হয়ে পড়েছে। করিডোর পুনর্দখল প্রমাণ করে যে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী বৃহত্তর অভিযান চালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে।”
তিনি যোগ করেন, যুদ্ধবিরতির আগে নেজারিম করিডোর অনেক ইসরায়েলি সামরিক অভিযানের লঞ্চিং প্যাড হিসেবে কাজ করত এবং এটি অনেক ফিলিস্তিনির জন্য ‘মৃত্যুফাঁদ’ ছিল।
যুদ্ধবিরতি ভেঙে যাওয়ায় ইসরায়েলের অভ্যন্তরেও ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। সেখানে অনেক মানুষ গাজায় বন্দী তাদের স্বজনদের ফিরিয়ে আনার দাবিতে আন্দোলন করছেন।
বুধবার জেরুজালেমে হাজার হাজার ইসরায়েলি বিক্ষোভকারী জড়ো হয়ে প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে গাজায় হামলা পুনরায় শুরু করার অভিযোগ করেছেন। বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, নেতানিয়াহু গাজায় বন্দী ইসরায়েলিদের নিরাপত্তা বিবেচনা না করেই হামলা শুরু করেছেন।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা