গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহতের সংখ্যা বাড়ছে, বাড়ছে মানবিক বিপর্যয়।
গাজায় ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর আক্রমণ ক্রমশ তীব্র হচ্ছে, যার ফলস্বরূপ বাড়ছে হতাহতের সংখ্যা। সর্বশেষ খবর অনুযায়ী, গাজায় ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ৩০ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে।
চিকিৎসা সূত্রগুলো এই তথ্য নিশ্চিত করেছে। একইসাথে, ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী গাজার দক্ষিণে একটি তথাকথিত ‘নিরাপত্তা করিডোর’ তৈরি করতে সেখানে সেনা মোতায়েন করেছে।
আল জাজিরার খবরে বলা হয়েছে, খান ইউনিসে বিমান হামলায় অন্তত ৬ জন এবং উত্তর গাজার বেইত হানুন শহরে চালানো হামলায় আরও ৬ জন নিহত হয়েছে।
গত মার্চ মাসের মাঝামাঝি সময়ে হামাসের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি ভেঙে দেওয়ার পর থেকেই ইসরায়েল গাজায় তাদের অভিযান জোরদার করেছে।
ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ফিলিস্তিনি সংগঠন হামাস যতক্ষণ পর্যন্ত গত বছরের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে আটককৃত জিম্মিদের মুক্তি না দেবে, ততক্ষণ পর্যন্ত এই অভিযান চলবে।
শনিবার ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানায়, তারা গাজার দক্ষিণে নতুন একটি নিরাপত্তা করিডোর তৈরি করেছে।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সম্প্রতি ‘মোরাগ করিডোর’-এর ঘোষণা দেন এবং ধারণা করা হচ্ছে, এই করিডোর গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর রাফাহকে অবরুদ্ধ করে ফেলবে।
এর ফলে রাফাহ’র বাসিন্দাদের গাজার অন্যান্য অঞ্চল থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। তবে এই করিডোরে ঠিক কত সেনা মোতায়েন করা হয়েছে, তা এখনো স্পষ্ট নয়।
মোরাগ হলো একটি ইহুদি বসতির নাম, যা একসময় রাফাহ এবং খান ইউনিসের মাঝে অবস্থিত ছিল।
ইসরায়েলি গণমাধ্যমে প্রকাশিত মানচিত্রে দেখা গেছে, করিডোরটি গাজার সরু উপকূলীয় অঞ্চলের পূর্ব থেকে পশ্চিমে বিস্তৃত।
এদিকে, হামাসের সামরিক শাখা একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে, যেখানে দেখা যাচ্ছে, ইসরায়েলের দুই জন জিম্মি জীবিত রয়েছেন।
ভিডিওতে তারা তাদের জীবনধারণের বর্ণনা দিচ্ছিলেন এবং ইসরায়েলি হামলায় কীভাবে তারা বেঁচে গিয়েছেন, সে বিষয়ে কথা বলছিলেন।
ইসরায়েলি মিডিয়া সূত্রে জানা গেছে, ওই দুই জিম্মির মধ্যে একজন হলেন মাক্সিম হারকিন।
হারকিনের পরিবার মিডিয়াকে এই ভিডিও প্রকাশ না করার জন্য অনুরোধ করেছে। অপর জিম্মির নাম বার কুপারস্টেইন, যিনি একজন ইসরায়েলি সেনা।
তারা দু’জনকেই গত বছরের ৭ অক্টোবর হামাস কর্তৃক ইসরায়েলে চালানো এক হামলায় বন্দী করা হয়।
ওই হামলায় অন্তত ১,১৩৯ জন নিহত হয়েছিল। ইসরায়েলি পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে আল জাজিরার হিসাব অনুযায়ী, বর্তমানে গাজায় ৫৮ জন জিম্মি রয়েছে, যাদের মধ্যে ৩৪ জন এরই মধ্যে নিহত হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, ইসরায়েলি অভিযানের কারণে গাজায় বেসামরিক নাগরিক এবং শিশুদের হতাহতের সংখ্যা বাড়ছে।
জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা (UNRWA)-এর প্রধান ফিলিপ লাজারিনি বলেছেন, ‘শিশুদের হত্যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়’।
গাজায় যুদ্ধবিরতির জন্য কূটনৈতিক প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ জানিয়েছেন, তিনি মিশরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি এবং জর্ডানের বাদশাহ আবদুল্লাহ দ্বিতীয়ের সঙ্গে গাজার পরিস্থিতি নিয়ে একটি ত্রিপক্ষীয় শীর্ষ বৈঠক করবেন।
ম্যাক্রোঁ বলেছেন, তিনি রবিবার কায়রোতে মিশরের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন এবং সোমবার তাদের মধ্যে আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে।
ওই দিনই মিশরের রাজধানী কায়রোতে ত্রিপক্ষীয় শীর্ষ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।
মঙ্গলবার ম্যাক্রোঁ গাজার পশ্চিমে অবস্থিত এল-আরিশ বন্দরে যাবেন, যেখানে তিনি মানবিক ও নিরাপত্তা কর্মীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন এবং যুদ্ধবিরতির পক্ষে তার সমর্থন জানাবেন।
এল-আরিশ আন্তর্জাতিক ত্রাণ সহায়তার একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রবেশদ্বার।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা।