যুদ্ধবিরতি: জিম্মিদের ফেরাতে ইসরায়েলি সেনাদের বরখাস্ত!

যুদ্ধবিরতির আহ্বানে সাড়া দেওয়ায় ইসরায়েলি রিজার্ভ সেনা বরখাস্ত

গাজায় জিম্মিদের মুক্তি নিশ্চিত করতে যুদ্ধবিরতির দাবি জানানোয় ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী (আইডিএফ) দেশটির বিমানবাহিনীর রিজার্ভ সেনাদের বরখাস্ত করেছে। সম্প্রতি ইসরায়েলের প্রধান কয়েকটি সংবাদপত্রে প্রকাশিত এক চিঠিতে, কয়েক’শ বিমান সেনা ও অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা অবিলম্বে গাজায় যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানান।

তাদের মতে, জিম্মিদের ফিরিয়ে আনতে এটি জরুরি।

চিঠিতে তারা অভিযোগ করেন, ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী কোনো সামরিক লক্ষ্য ছাড়াই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের মতে, এই যুদ্ধের কারণে জিম্মি, সেনা ও সাধারণ মানুষের মৃত্যু হচ্ছে এবং রিজার্ভ সেনাদের ওপর বাড়ছে চাপ।

চিঠিতে স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে পাইলট ও বিমান ক্রু’রাও ছিলেন। তবে, এতে সামরিক দায়িত্ব পালনে অস্বীকৃতি জানানোর কোনো কথা উল্লেখ করা হয়নি।

প্রকাশিত এই চিঠিটি, ১৮ মাস ধরে চলা যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে ইসরায়েলের অভ্যন্তরে ক্রমবর্ধমান অসন্তোষের একটি ইঙ্গিত। দেশটির অনেক নাগরিক এখনো গাজায় জিম্মি থাকা ৫৯ জনকে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে উদ্বিগ্ন।

ইসরায়েলের একটি জরিপে দেখা গেছে, প্রায় ৭০ শতাংশ ইসরায়েলি নাগরিক জিম্মিদের মুক্তির বিনিময়ে যুদ্ধ বন্ধের পক্ষে।

গত মাসে হামাসের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি ভেঙে দেওয়ার পর রিজার্ভ সেনারা ক্রমশ সরব হয়েছেন। তারা একাধিকবার রিজার্ভ ডিউটিতে অংশ নেওয়া এবং সরকারের জিম্মিদের ফিরিয়ে আনার বিষয়ে আলোচনার প্রতিশ্রুতির অভাব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।

তাদের এই ক্ষোভ সামরিক বাহিনীর জন্য উদ্বেগের কারণ, কারণ যুদ্ধকালীন সময়ে তারা রিজার্ভ সেনাদের ওপর নির্ভরশীল।

চিঠিতে স্বাক্ষরকারীদের বরখাস্ত করার সিদ্ধান্ত নেন আইডিএফ প্রধান এবং বিমান বাহিনীর কমান্ডার। বরখাস্ত হওয়া সেনাদের মধ্যে সক্রিয় সেনারাও রয়েছেন।

ঠিক কতজন সেনা এখনো সামরিক বাহিনীতে কর্মরত আছেন, তা এখনো স্পষ্ট নয়। তবে, আইডিএফ জানিয়েছে, তারা তালিকাটি যাচাই করছে।

আইডিএফ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, “যিনি বিমানবাহিনীর একটি ইউনিটে কাজ করেন, তিনি কিভাবে পরে এই মিশনের প্রতি অনাস্থা প্রকাশ করেন? এটা হতে পারে না।”

রিজার্ভ নেভিগেটর আলন গুর, যিনি এই চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন, তাকেও গত মাসে বরখাস্ত করা হয়। গুর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখেছিলেন, ইসরায়েল এমন এক পর্যায়ে পৌঁছেছে যেখানে “রাষ্ট্র তার নাগরিকদের দিনের আলোয় পরিত্যাগ করে” এবং “যখন রাজা রাজ্যের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে”।

ইসরায়েলের সামরিক অভিযান শুরুর দিন তিনি তার স্কোয়াড্রন কমান্ডারকে সামরিক বাহিনী ছাড়ার কথা জানান।

প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট এই চিঠির নিন্দা করে বরখাস্তের সিদ্ধান্তকে সমর্থন করেছেন।

নেতানিয়াহু এই চিঠিকে “একটি চরমপন্থী গোষ্ঠীর কাজ” হিসেবে উল্লেখ করেছেন, যারা “আবারও ইসরায়েলি সমাজকে ভাঙার চেষ্টা করছে।”

যুদ্ধ শেষ হলে সরকার ছাড়ার হুমকি দেওয়া চরম-ডানপন্থী অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোট্রিচ বরখাস্তের সিদ্ধান্তের জন্য আইডিএফ প্রধান ও বিমান বাহিনীর কমান্ডারকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখেছেন, “যারা সামরিক দায়িত্ব পালনে অস্বীকৃতি জানাচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া অপরিহার্য।”

২০২৩ সালেও নেতানিয়াহুর বিচার বিভাগের সংস্কার পরিকল্পনার প্রতিবাদে রিজার্ভ সেনাদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা গিয়েছিল। যদিও পরবর্তীতে তারা সবাই সেনা আহ্বানে সাড়া দিয়েছিলেন, তবে যুদ্ধের দীর্ঘসূত্রিতায় সেই ঐক্য এখন দুর্বল হতে শুরু করেছে।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *