গাজায় একটি হাসপাতালে ইসরায়েলি বিমান হামলায় ১৯ জন নিহত, এদের মধ্যে চারজন সাংবাদিকও রয়েছেন। সোমবার খান ইউনিসের নাসের হাসপাতালে এই হামলা চালানো হয়। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের রেকর্ড বিভাগের প্রধান জাবের আল-ওয়াহেদ এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, হাসপাতালের চতুর্থ তলায় একটি ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানার পর, উদ্ধারকর্মীরা পৌঁছানোর মুহূর্তে একই স্থানে দ্বিতীয় আরেকটি ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানে। এতে হতাহতের ঘটনা ঘটে।
নিহতদের মধ্যে ছিলেন সাংবাদিক মারিয়াম দাগ্গাসহ আরও তিনজন। মারিয়াম দাগ্গা ছিলেন একজন ভিজ্যুয়াল সাংবাদিক, যিনি যুদ্ধের শুরু থেকে অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের (এপি) হয়ে কাজ করছিলেন। আল জাজিরা এবং রয়টার্সও নিশ্চিত করেছে যে তাদের সাংবাদিক এবং ফ্রিল্যান্সারদের কয়েকজন নিহতদের মধ্যে রয়েছেন।
নাসের হাসপাতাল, যা খান ইউনিসের সবচেয়ে বড় হাসপাতাল, বিগত ২২ মাস ধরে চলমান যুদ্ধে একাধিকবার হামলার শিকার হয়েছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সেখানে ওষুধ ও জনবলের তীব্র সংকট চলছে।
গাজা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, এ পর্যন্ত ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধে প্রায় ৬২,৬৮৬ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। তবে নিহতদের মধ্যে কতজন যোদ্ধা এবং কতজন বেসামরিক নাগরিক, সেই হিসাব তারা আলাদাভাবে জানায়নি।
জাতিসংঘের পাশাপাশি স্বাধীন বিশেষজ্ঞরা হতাহতের এই সংখ্যাকে নির্ভরযোগ্য হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
গাজা শহরের একটি আবাসিক এলাকায় ইসরায়েলি হামলায় তিনজন নিহত হয়েছে, যাদের মধ্যে একজন শিশুও ছিল। অপরদিকে, গাজার মধ্যাঞ্চলে ত্রাণ বিতরণের জন্য অপেক্ষারত অবস্থায় ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে ছয়জন নিহত এবং ১৫ জন আহত হয়েছেন।
আল-আওদা হাসপাতাল এই তথ্য জানিয়েছে।
যুদ্ধ শুরুর পর থেকে গণমাধ্যমকর্মীদের জন্য এই সংঘাত অত্যন্ত রক্তক্ষয়ী হয়ে উঠেছে। কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টস (সিপিজে)-এর তথ্য অনুযায়ী, গত ২২ মাসের সংঘাতে গাজায় মোট ১৯২ জন সাংবাদিক নিহত হয়েছেন।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী অথবা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় তাৎক্ষণিকভাবে এই হামলার বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। অতীতেও হাসপাতালগুলোতে হামলার ঘটনা ঘটেছে।
ইসরায়েল দাবি করেছে, তারা হাসপাতালের ভেতরে থাকা জঙ্গিদের লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছিল, যদিও এর স্বপক্ষে তারা কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেনি।
গত জুনে নাসের হাসপাতালে চালানো এক হামলায় তিনজন নিহত এবং ১০ জন আহত হয়েছিল। সেই সময় ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী জানিয়েছিল, তারা হাসপাতালের ভেতরে থাকা একটি সামরিক কমান্ড ও কন্ট্রোল সেন্টারে আঘাত হেনেছিল।
এছাড়া, যুদ্ধবিরতি ভেঙে যাওয়ার পর মার্চ মাসে হাসপাতালের অস্ত্রোপচার ইউনিটে চালানো হামলায় দুই জন নিহত হয়েছিলেন।
তথ্যসূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস