গাজায় একটি হাসপাতালে ইসরায়েলি বিমান হামলায় অন্তত দুইজন নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে হামাসের একজন শীর্ষস্থানীয় নেতা এবং ১৬ বছর বয়সী এক কিশোর রয়েছে বলে জানা গেছে।
ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে এই খবর প্রকাশ করা হয়েছে। রবিবার খান ইউনিসে অবস্থিত নাসের হাসপাতালে এই হামলা চালানো হয়।
হামাস জানিয়েছে, নিহত নেতা হলেন তাদের রাজনৈতিক ব্যুরোর সদস্য ইসমাইল বারহুম। তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। হামাস এক বিবৃতিতে এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে।
তারা একে ‘সন্ত্রাসী কার্যক্রম’ হিসেবে উল্লেখ করেছে এবং আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ এনেছে। অন্যদিকে, ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা মন্ত্রী জানিয়েছেন, বারহুমকে লক্ষ্য করেই হামলাটি চালানো হয়েছে।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, ‘ক্ষতি কমাতে’ নির্ভুল অস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে এবং গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে এই হামলা চালানো হয়েছে। তারা হামাসের বিরুদ্ধে বেসামরিক অবকাঠামোকে কাজে লাগিয়ে ‘সন্ত্রাসী হামলা’ চালানোর অভিযোগ করেছে।
বারহুমের মৃত্যুর কয়েক ঘণ্টা আগে হামাস জানায়, ইসরায়েলি বাহিনী খান ইউনিসে একটি তাঁবুতে হামলা চালিয়ে হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরোর আরেক সদস্য সালাহ আল-বারদাওয়িল এবং তার স্ত্রীকে হত্যা করেছে।
মঙ্গলবার থেকে ইসরায়েলি বাহিনী গাজায় বড় ধরনের সামরিক অভিযান শুরু করেছে। এর মধ্যে হামাসের চারজন রাজনৈতিক ব্যুরো সদস্যকে হত্যা করা হয়েছে।
নাসের হাসপাতালের বাইরের ফুটেজে দেখা গেছে, একটি অগ্নিগোলক উপরের তলা থেকে বিস্ফোরিত হচ্ছে। আল জাজিরার আরবি সংবাদদাতা রামী আবু তাইমা ঘটনাস্থল থেকে সরাসরি সম্প্রচারের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন।
গাজার দেইর আল-বালাহ থেকে আল জাজিরার প্রতিনিধি হিন্দ খৌদারি জানিয়েছেন, হামলায় আহত হয়েছেন আরও আটজন ফিলিস্তিনি। তারা সবাই আগে থেকেই আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন।
হাসপাতালের ডাক্তাররা জানিয়েছেন, হামলার শিকার বিভাগের আগুন নেভাতে তাদের কয়েক ঘণ্টা লেগেছে। হিন্দ খৌদারি আরও জানান, গাজার হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা সরঞ্জামের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে।
ইসরায়েলি বাহিনী ২১ দিন ধরে সীমান্ত ক্রসিং বন্ধ করে রাখায় এই সংকট তৈরি হয়েছে। গাজার উত্তরাঞ্চলে বেইত লাহিয়া এবং দক্ষিণাঞ্চলে রাফাতে পরিস্থিতি আরও খারাপ হচ্ছে।
নাসের হাসপাতালে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করা ট্রমা সার্জন ফিরোজ সিধওয়া জানিয়েছেন, নিহত ১৬ বছর বয়সী কিশোর তার রোগী ছিল। তিনি জানান, ওই কিশোরের অস্ত্রোপচার করা হয়েছিল এবং সম্ভবত সোমবার তাকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হতো, কিন্তু এখন সে মৃত।
সিধওয়া বলেন, হাসপাতালের পুরুষ রোগীদের অস্ত্রোপচার ওয়ার্ডটি সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে এবং এটি পুনরায় তৈরি করতে হবে। সিধওয়া আরও বলেন, হাসপাতালের সবকিছুতে এখন ধোঁয়ার গন্ধ।
ওয়ার্ডের পুরো বৈদ্যুতিক ব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে গেছে। প্রতিটি দরজা ভেঙে গেছে, বেশিরভাগ জানালা ভেঙে গেছে এবং ছাদও ধসে পড়েছে। এটি ব্যবহারের উপযুক্ত নয় এবং এটি পুনরায় তৈরি করতে হবে।
ইসরায়েলি বাহিনীর সমালোচনা করে সিধওয়া বলেন, ‘বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সম্প্রতি শরীর খারাপ ছিল। তাকে গণহত্যার জন্য অভিযুক্ত করা হচ্ছে। কেউ মনে করে না হামাস হাসপাতালে বোমা মারবে কারণ সেখানে নেতানিয়াহু যান।
এটা সম্পূর্ণ পাগলামি। আপনারা হাসপাতালে বোমা মারেন না, সবাই এটা জানে।’ ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ইসরায়েলি বাহিনী গাজায় তাদের অভিযান পুনরায় শুরু করার পর ৬০০ জনের বেশি মানুষকে হত্যা করেছে, যাদের মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় নিহত হয়েছে কয়েক ডজন।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, রবিবার পর্যন্ত যুদ্ধে গাজায় মৃতের সংখ্যা ৫০,০০০ ছাড়িয়েছে, তবে অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি। তথ্য সূত্র: আল জাজিরা