গাজায় হাসপাতাল সংলগ্ন মিডিয়া তাঁবুতে ইসরায়েলি হামলায় সাংবাদিকসহ নিহত ২, আহত ৬
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় একটি হাসপাতালে কাছে মিডিয়া কর্মীদের জন্য তৈরি করা তাঁবুতে ইসরায়েলি বিমান হামলায় একজন সাংবাদিকসহ অন্তত দুইজন নিহত হয়েছেন।
সোমবার ভোরের দিকে চালানো এই হামলায় আহত হয়েছেন আরও ছয়জন সাংবাদিক। আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা সূত্রে এই খবর জানা গেছে।
হামলার শিকার হওয়া তাঁবুটি খান ইউনিসের নাসের হাসপাতালের কাছে অবস্থিত ছিল। নিহতদের মধ্যে একজন হলেন স্থানীয় সাংবাদিক ইউসুফ আল-ফাকাবি।
ফিলিস্তিন টুডে নিউজ ওয়েবসাইটের হয়ে তিনি কাজ করতেন। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, তারা হামাসের একজন জঙ্গিকে লক্ষ্য করে এই হামলা চালিয়েছিল, যিনি সাংবাদিকের ছদ্মবেশে ছিলেন।
তাদের দাবি, নিহত ব্যক্তি হলেন হাসান এসলাইয়া।
তবে, হামলায় এসলাইয়াও আহত হয়েছেন। তিনি আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা এপি এবং অন্যান্য গণমাধ্যমে ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক হিসেবে কাজ করতেন এবং ৭ই অক্টোবর ইসরায়েলে চালানো হামলায়ও তার ছবি ছিল।
যদিও এপির সঙ্গে তার এক বছরের বেশি সময় ধরে কোনো কাজ ছিল না।
এদিকে, গাজার দেইর আল-বালাহ শহরের আল-আকসা শহীদ হাসপাতালের কাছেও বোমা হামলা চালানো হয়েছে।
এতে তিনজন আহত হয়েছেন। নাসের হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তারা আলাদা হামলায় নিহত আরও ২০ জনের মরদেহ গ্রহণ করেছে, যাদের মধ্যে আটজন নারী ও পাঁচজন শিশুও ছিল।
আল-আকসা হাসপাতালে আশ্রয় নেওয়া দুইটি পরিবারকেও লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়, যেখানে তিনজন নারী ও তিনজন শিশুসহ আটজন নিহত হয়েছে।
সংঘর্ষ শুরুর পর থেকে গাজায় হাজার হাজার মানুষ হাসপাতালের ভেতরে তাঁবু তৈরি করে আশ্রয় নিয়েছেন।
তাদের ধারণা ছিল, হাসপাতালগুলোতে হামলা চালানো হবে না। তবে ইসরায়েলি বাহিনী ইতোমধ্যেই কয়েকবার হাসপাতালগুলোতে অভিযান চালিয়েছে এবং হামাসকে সামরিক উদ্দেশ্যে হাসপাতাল ব্যবহারের অভিযোগ করেছে, যদিও হাসপাতাল কর্মীরা তা অস্বীকার করেছেন।
গত ৭ই অক্টোবর হামাস যোদ্ধারা ইসরায়েলে হামলা চালিয়েছিল, যাতে প্রায় ১,২০০ জন নিহত হয়। নিহতদের মধ্যে অধিকাংশই ছিল বেসামরিক নাগরিক।
এছাড়া, হামাস ২৫১ জনকে বন্দী করে এবং তাদের মধ্যে এখনো ৫৯ জন বন্দীকে তারা আটকে রেখেছে। এদের মধ্যে ২৪ জন জীবিত রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ইসরায়েল জানিয়েছে, হামাস অবশিষ্ট জিম্মিদের মুক্তি না দেওয়া পর্যন্ত এবং অস্ত্র সমর্পণ করে এলাকা না ছাড়া পর্যন্ত তারা সামরিক চাপ অব্যাহত রাখবে।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, এরপর তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাব অনুযায়ী গাজার একটি বড় অংশকে অন্য দেশে পুনর্বাসন করার পরিকল্পনা করবেন।
ফিলিস্তিনিরা তাদের জন্মভূমি ছাড়তে রাজি নয়। মানবাধিকার সংস্থাগুলো সতর্ক করেছে যে, ট্রাম্পের এই প্রস্তাব বাস্তবায়ন করা হলে তা আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন হবে এবং ব্যাপক হারে মানুষ বাস্তুচ্যুত হবে।
অন্যদিকে, গাজাসহ অন্যান্য বিষয় নিয়ে আলোচনার জন্য নেতানিয়াহু বর্তমানে ওয়াশিংটনে ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকে মিলিত হয়েছেন।
নেতানিয়াহুর সরকারি বাসভবনের বাইরে ডজনখানেক বিক্ষোভকারী জিম্মিদের মুক্তির দাবিতে সমাবেশ করেছে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ইসরায়েলি হামলায় এ পর্যন্ত ৫০,০০০ এর বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে, যাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু।
ইসরায়েল দাবি করেছে, তারা প্রায় ২০,০০০ জঙ্গি নিধন করেছে, তবে এর স্বপক্ষে কোনো প্রমাণ তারা দেখাতে পারেনি।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস