গাজায় ইসরায়েলি হামলায় ১০ জনের পরিবারের মৃত্যু: বিশ্বজুড়ে শোক!

গাজায় ইসরায়েলি হামলায় এক পরিবারের ১০ জনসহ নিহত কমপক্ষে ২৩ জন, খাদ্য সংকটে জাতিসংঘের উদ্বেগ। গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় নারী ও শিশুসহ অন্তত ২৩ জন নিহত হয়েছে।

স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা এই তথ্য জানিয়েছেন। নিহতদের মধ্যে খান ইউনিসে একই পরিবারের ১০ জন সদস্যও রয়েছেন। জাতিসংঘের পক্ষ থেকে ইসরায়েলের অবরোধের কারণে গাজায় খাদ্য সংকট তীব্র হওয়ায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে।

সংবাদ সংস্থা সূত্রে জানা যায়, গত কয়েক সপ্তাহে গাজায় ইসরায়েলি সামরিক অভিযান অব্যাহত রয়েছে। হামাস যোদ্ধাদের নির্মূল করতে চালানো এই অভিযানে ইতোমধ্যে বিপুল সংখ্যক ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।

খান ইউনিসে একটি আবাসিক এলাকায় চালানো হামলায় একই পরিবারের ৫ জন শিশু, ৪ জন নারী এবং ১ জন পুরুষের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া, উত্তরাঞ্চলে চালানো হামলায় ৯ জন শিশুসহ ১৩ জন নিহত হয়েছে।

জাতিসংঘের মানবিক বিষয়ক সংস্থা (OCHA) জানিয়েছে, গাজার প্রায় ২০ লাখেরও বেশি মানুষ বর্তমানে খাদ্য সহায়তার ওপর নির্ভরশীল। সাহায্য সংস্থাগুলোর মাধ্যমে পরিচালিত দাতব্য রান্নাঘরে প্রতিদিন প্রস্তুত করা হওয়া ১০ লাখ খাবারের ওপর তাদের প্রধান ভরসা।

অবরোধের কারণে খাদ্য সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অন্যান্য খাদ্য বিতরণ কর্মসূচিও বন্ধ হয়ে গেছে। জাতিসংঘের খাদ্য বিষয়ক সংস্থা এবং অন্যান্য সাহায্য সংস্থাগুলো তাদের অবশিষ্ট খাদ্য মজুদ এখন এই দাতব্য রান্নাঘরগুলোতে পাঠাচ্ছে।

বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (World Food Programme) এপ্রিল মাসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজার বাজারে খাদ্যদ্রব্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় এবং তীব্র খাদ্য সংকটের কারণে সেখানকার ৮০ শতাংশ মানুষ মানবিক সহায়তার ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। ওচা’র মতে, ২০২৩ সালের অক্টোবর মাস থেকে চলমান সংঘাতের কারণে গাজা সম্ভবত সবচেয়ে ভয়াবহ মানবিক সংকটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে।

নরওয়েজিয়ান রিফিউজি কাউন্সিলের মুখপাত্র শাইনা লো জানিয়েছেন, বর্তমানে গাজার অধিকাংশ মানুষ দিনে মাত্র একবার খাবার খাচ্ছে। যা তাদের প্রয়োজনীয়তার তুলনায় অনেক কম।

খাবার পানিরও তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। সেখানকার বাসিন্দারা খাবার পানি সংগ্রহের জন্য দীর্ঘ লাইনে দাঁড়াচ্ছে। জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, মানুষের মৌলিক চাহিদা মেটানোর জন্য প্রতিদিন যে পরিমাণ পানির প্রয়োজন, গাজায় বর্তমানে মানুষ তার চেয়ে অনেক কম, দিনে ৬ থেকে ৭ লিটার পানি ব্যবহার করতে বাধ্য হচ্ছে।

ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল ক্যাটজ বুধবার বলেছেন, হামাসের ওপর চাপ সৃষ্টির জন্য মানবিক সহায়তা বন্ধ করা তাদের কৌশলগুলোর একটি। ইসরায়েল অভিযোগ করে আসছে, হামাস তাদের নিয়ন্ত্রণে থাকা এলাকার জন্য আসা ত্রাণ নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করছে।

ইসরায়েল চাইছে, নতুন করে কোনো যুদ্ধবিরতি শুরুর আগে হামাস যেন জিম্মিদের মুক্তি দেয় এবং অস্ত্র সমর্পণ করে গাজা ত্যাগ করে। ক্যাটজ আরও বলেছেন, এরপরও ইসরায়েল গাজার ভেতরে ‘নিরাপত্তা অঞ্চল’ হিসেবে পরিচিত এলাকাগুলোতে তাদের নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখবে।

বর্তমানে হামাসের হাতে ৫৯ জন জিম্মি রয়েছে, যাদের মধ্যে ২৪ জন জীবিত আছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। হামাস জানিয়েছে, ফিলিস্তিনি বন্দীদের মুক্তি, গাজা থেকে ইসরায়েলি সৈন্য প্রত্যাহার এবং দীর্ঘমেয়াদী যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত করা না হলে তারা জিম্মিদের মুক্তি দেবে না।

গাজা স্যুপ কিচেনের সহ-প্রতিষ্ঠাতা হানি আল-মাদহুন জানিয়েছেন, তাদের কাছে আর হয়তো তিন সপ্তাহের মতো খাবার মজুদ আছে। তিনি বলেন, ‘আমাদের কাছে মূলত পাস্তা ও চাল রয়েছে, এর বাইরে তেমন কিছু নেই।

কোনো তাজা সবজি নেই, মাংস বা মুরগি কিছুই নেই। আমাদের কাছে যা আছে, তা হলো টিনের খাবার।’ তিনি আরও জানান, তাদের রান্নাঘরে খাবার নিতে আসা ১৫ থেকে ২০ শতাংশ মানুষ খাবার না পেয়ে ফিরে যাচ্ছে।

উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাস যোদ্ধারা ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে হামলা চালায়। এতে ১,২০০ জন নিহত হয়, যাদের অধিকাংশই ছিল বেসামরিক নাগরিক। এরপর ইসরায়েল গাজায় ব্যাপক সামরিক অভিযান শুরু করে।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ইসরায়েলি হামলায় এখন পর্যন্ত ৫১ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে, যাদের মধ্যে নারী ও শিশুর সংখ্যাই বেশি।

তথ্য সূত্র:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *