গাজায় ইসরায়েলি হামলায় মৃতের সংখ্যা বাড়ছে, উদ্বাস্তু শিবিরেও আঘাত।
গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় নিহতের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। বুধবার পাওয়া খবর অনুযায়ী, হামলায় অন্তত ৫৯ জন নিহত হয়েছে, যাদের মধ্যে নারী ও শিশুও রয়েছে।
হাসপাতাল সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী গাজায় হামাস বিরোধী অভিযান আরও জোরদার করার প্রস্তুতি নিচ্ছে, এমন পরিস্থিতিতে এই হতাহতের ঘটনা ঘটল।
জানা গেছে, মঙ্গলবার রাতে বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের আশ্রয় নেওয়া একটি স্কুলে বোমা হামলায় অন্তত ২৭ জন নিহত হয়। নিহতদের মধ্যে ৯ জন নারী ও ৩ জন শিশু রয়েছে।
আল-আকসা হাসপাতাল সূত্রে এই খবর নিশ্চিত করা হয়েছে। গাজার মধ্যাঞ্চলে অবস্থিত এই স্কুলটিতে যুদ্ধের শুরু থেকে এ নিয়ে পাঁচবার আঘাত হানা হয়েছে।
এছাড়াও, বুধবার সকালে গাজা শহরের আরেকটি স্কুলে আশ্রয় নেওয়া মানুষের ওপর হামলায় অন্তত ১৬ জন নিহত হয়েছে বলে আল-আহলি হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে। অন্যান্য স্থানে চালানো হামলায়ও আরও অন্তত ১৬ জন নিহত হয়েছে।
বুরাইজ শরণার্থী শিবিরে উদ্বাস্তু মানুষেরা আশ্রয় নিয়েছিল, সেখানে একটি স্কুলের উপর বোমা হামলায় আকাশ কালো ধোঁয়ায় ঢেকে যায়। আহতদের উদ্ধারের জন্য ছুটে যায় উদ্ধারকারী দল।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী তাৎক্ষণিকভাবে এসব হামলার বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। তবে তারা হতাহতের জন্য হামাসকে দায়ী করেছে, কারণ হামাস বেসামরিক অবকাঠামো ব্যবহার করে, যার মধ্যে স্কুলও রয়েছে।
এদিকে, ইসরায়েল ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে তাদের অভিযান আরও জোরদার করার পরিকল্পনা করছে। এর অংশ হিসেবে গাজা দখলের পাশাপাশি অধিকৃত এলাকাগুলোতে তারা নিজেদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে চায়।
এমনকি ফিলিস্তিনিদের গাজার দক্ষিণে সরিয়ে নেওয়া এবং বেসরকারি নিরাপত্তা কোম্পানির মাধ্যমে ত্রাণ বিতরণের ব্যবস্থা করারও পরিকল্পনা রয়েছে তাদের। এই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ইসরায়েল হাজার হাজার রিজার্ভ সেনা সদস্যকে ডাকার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
তবে ইসরায়েলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আসন্ন সফরের পরেই তারা এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করবে।
অন্যদিকে, হামাসের হামলায় নিহত ইসরায়েলি জিম্মিদের বিষয়েও জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। ট্রাম্প মঙ্গলবার এক বক্তব্যে জানান, গাজায় এখনো যে ৫৯ জন জিম্মি রয়েছে, তাদের মধ্যে মাত্র ২১ জন জীবিত আছে।
তবে ইসরায়েল বলছে, জীবিত জিম্মির সংখ্যা ২৪। যদিও ইসরায়েলের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, তিনজন জিম্মির জীবন নিয়ে তারা “গুরুতর উদ্বেগে” রয়েছেন।
ওই কর্মকর্তার মতে, যতক্ষণ পর্যন্ত তাদের জীবিত থাকার প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে না, ততক্ষণ পর্যন্ত তাদের জীবিত বলেই ধরা হবে।
জিম্মিদের পরিবারের সংগঠন, ‘দ্য হোস্টেজ অ্যান্ড মিসিং ফ্যামিলিস ফোরাম’ ইসরায়েল সরকারের কাছে জিম্মিদের বিষয়ে নতুন কোনো তথ্য থাকলে তা দ্রুত জানানোর দাবি জানিয়েছে।
একইসঙ্গে তারা গাজায় যুদ্ধ বন্ধের জন্য ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে, যতক্ষণ না পর্যন্ত সব জিম্মিকে ফেরত আনা হচ্ছে।
যুদ্ধ বন্ধের জন্য কাতার ও মিশরের মধ্যস্থতা চললেও, ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে এখনো সমঝোতা হয়নি। ইসরায়েল বলছে, হামাসের সামরিক সক্ষমতা ধ্বংস না হওয়া পর্যন্ত তারা যুদ্ধ বন্ধ করবে না।
অন্যদিকে, হামাস জানিয়েছে, তারা যুদ্ধ বন্ধ এবং ইসরায়েলের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধবিরতি চুক্তির বিনিময়ে সকল জিম্মিকে মুক্তি দিতে প্রস্তুত।
গাজায় এই উত্তেজনার মধ্যেই, ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীরাও ইসরায়েলের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছে। হুতি বিদ্রোহীরা ইসরায়েলের প্রধান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে।
এর জবাবে ইসরায়েলও ইয়েমেনের রাজধানী সানার বিমানবন্দরে বিমান হামলা চালিয়েছে।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস