গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত কমপক্ষে ২৭ ফিলিস্তিনি।
গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় অন্তত ২৭ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা সোমবার এই তথ্য জানিয়েছেন। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য করেনি।
গত মাসের শেষ দিকে হামাসের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি ভেঙে যাওয়ার পর থেকে ইসরায়েল গাজায় নিয়মিত হামলা চালাচ্ছে। মার্চ মাস থেকে তারা গাজার প্রায় ২০ লাখ মানুষের জন্য খাদ্য ও ওষুধসহ সব ধরনের আমদানি বন্ধ করে দিয়েছে। ইসরায়েলের দাবি, তারা হামাসকে জিম্মিদের মুক্তি দিতে চাপ প্রয়োগ করছে।
দৈনিক বোমা হামলা এবং খাদ্য সংকটের কারণে গাজার সাধারণ মানুষের, বিশেষ করে নারী ও শিশুদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। সোমবার জাতিসংঘের সর্বোচ্চ আদালত ইসরায়েলের প্রতি অধিকৃত অঞ্চলগুলোতে মানবিক সহায়তা সহজলভ্য করার বাধ্যবাধকতা নিয়ে শুনানি শুরু করেছে।
ইসরায়েলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক বিচার আদালত তাদের প্রতি পক্ষপাতদুষ্ট। তারা আরও দাবি করে, যুদ্ধবিরতির সময় যথেষ্ট পরিমাণ সহায়তা প্রবেশ করেছিল এবং হামাস তা সরিয়ে নিয়েছে।
মানবিক কর্মীরা জানিয়েছেন, সেখানে খাদ্য ও সরবরাহের চরম সংকট চলছে। বেশিরভাগ মানুষ দিনে এক বেলা বা তার চেয়েও কম খাচ্ছে। জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে সহায়তা বিতরণ করা হচ্ছে এবং কোনো ধরনের পণ্য সরিয়ে নেওয়ার অভিযোগ তারা অস্বীকার করেছেন।
বিমান হামলায় তিনটি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বেইত লাহিয়ায় একটি বাড়িতে হামলায় ১০ জন নিহত হয়েছে, যাদের মধ্যে একজন ফিলিস্তিনি বন্দী ছিলেন, যিনি যুদ্ধবিরতির সময় মুক্তি পেয়েছিলেন। নিহতদের মধ্যে তার স্ত্রী, দুই সন্তান এবং এক নাতিও ছিল। ইন্দোনেশীয় হাসপাতাল জানিয়েছে, তারা নিহতদের মরদেহ গ্রহণ করেছে।
গাজা শহরের একটি বাড়িতে হামলায় দুই নারীসহ সাতজন নিহত হয়েছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের জরুরি বিভাগ এই তথ্য জানিয়েছে। এছাড়া, আরও দুজন আহত হয়েছে।
রবিবার রাতে খান ইউনিসে একটি বাড়িতে হামলায় অন্তত ১০ জন নিহত হয়, যাদের মধ্যে চার বছর বয়সী শিশুসহ পাঁচ ভাইবোন ছিল। নাসের হাসপাতাল জানিয়েছে, নিহতদের মধ্যে আরও দুই শিশু ও তাদের বাবা-মা রয়েছেন।
ইসরায়েল দাবি করে, তারা বেসামরিক নাগরিকদের ক্ষতি করা এড়িয়ে যায় এবং হামাসকে তাদের মৃত্যুর জন্য দায়ী করে, কারণ তারা ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় কাজ করে। ফিলিস্তিনিরা বলছেন, অবরুদ্ধ গাজায় কেউই নিরাপদ নয়।
যুদ্ধ শুরুর ১৮ মাস পরেও এর কোনো সমাপ্তি দেখা যাচ্ছে না। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাস-নেতৃত্বাধীন জঙ্গিরা দক্ষিণ ইসরায়েলে হামলা চালায়, যাতে বেশিরভাগ বেসামরিক নাগরিকসহ প্রায় ১,২০০ জন নিহত হয় এবং ২৫১ জনকে জিম্মি করা হয়। হামাস এখনো ৫৯ জন জিম্মিকে ধরে রেখেছে, যাদের মধ্যে ২৪ জন জীবিত আছে বলে ধারণা করা হয়।
ইসরায়েলের প্রতিশোধমূলক হামলায় এ পর্যন্ত ৫২,০০০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে, যাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, নিহতদের মধ্যে কতজন যোদ্ধা বা বেসামরিক নাগরিক, সে বিষয়ে তারা কোনো তথ্য জানায়নি। ইসরায়েলের বোমা হামলা এবং স্থল অভিযানে গাজার বিস্তীর্ণ এলাকা ধ্বংস হয়ে গেছে এবং এখানকার অধিকাংশ মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েছে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় আরও জানিয়েছে, ইসরায়েল গত ১৮ মার্চ যুদ্ধবিরতি ভাঙার পর থেকে ২,১৫১ জন নিহত হয়েছে, যাদের মধ্যে ৭৩২ জন শিশু।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু অঙ্গীকার করেছেন, জিম্মিদের ফিরিয়ে আনা এবং হামাসকে হয় ধ্বংস করতে হবে, না হয় অস্ত্র সমর্পন করে এলাকা ছাড়তে রাজি করাতে হবে। এরপর তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাব অনুযায়ী, গাজার বেশিরভাগ মানুষকে অন্য দেশে পুনর্বাসন করার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করবেন। ইসরায়েলি নেতা এটিকে “স্বেচ্ছায় দেশত্যাগ” হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
ফিলিস্তিনিরা বলছে, এই পরিকল্পনা তাদের জন্মভূমি থেকে জোরপূর্বক বিতাড়িত করার শামিল হবে। মানবাধিকার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি সম্ভবত আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন।
হামাস জানিয়েছে, তারা অবশিষ্ট জিম্মিদের মুক্তি দেবে, যদি তাদের আরও ফিলিস্তিনি বন্দীর মুক্তি, একটি স্থায়ী যুদ্ধবিরতি এবং গাজা থেকে ইসরায়েলের সম্পূর্ণ সেনা প্রত্যাহার করা হয়।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস