গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত ২৩, খাদ্য সংকটে চরম উদ্বেগ!

গাজায় ইসরায়েলি হামলায় মৃতের সংখ্যা বাড়ছে, ত্রাণ সহায়তা এখনো অপ্রতুল।

গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বাহিনীর বোমা হামলায় মৃতের সংখ্যা বাড়ছে, যেখানে মানবিক সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। বৃহস্পতিবার রাতভর চালানো হামলায় অন্তত ২৩ জন নিহত হয়েছে বলে জানা গেছে। স্থানীয় হাসপাতাল সূত্রে খবর, খান ইউনিসে ১০ জন, দেইর আল-বালাহ শহরে ৪ জন এবং জাবালিয়া শরণার্থী শিবিরে ৯ জন নিহত হয়েছে।

জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক মহল ইসরায়েলের এই অভিযানের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে। গাজায় ত্রাণ সহায়তা পর্যাপ্ত না হওয়ায় সেখানকার প্রায় ২০ লক্ষ মানুষ খাদ্য সংকটে পড়েছে। জাতিসংঘের মতে, গত প্রায় তিন মাস ধরে গাজা অবরুদ্ধ করে রেখেছে ইসরায়েল, যার ফলে সেখানকার বাসিন্দাদের জীবনযাত্রা চরম ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের মতো মিত্র দেশও এই পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।

অন্যদিকে, ওয়াশিংটন ডিসিতে ইসরায়েলি দূতাবাসের কর্মীদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। বৃহস্পতিবার এক আদালত সূত্রে জানা যায়, অভিযুক্ত ব্যক্তি জানিয়েছেন, তিনি ফিলিস্তিনের জন্য এই কাজ করেছেন।

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ওয়াশিংটনের এই হত্যাকাণ্ডকে ‘ভয়ংকর’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। একইসঙ্গে, ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের প্রস্তাব দেওয়ায় ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য এবং কানাডার কড়া সমালোচনা করেছেন তিনি। নেতানিয়াহু অভিযোগ করেন, এই দেশগুলো ইসরায়েলের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের হুমকি দিয়ে কার্যত হামাসকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখতে চাইছে।

আন্তর্জাতিক চাপের মুখে ইসরায়েল অবশ্য কিছু ত্রাণ সরবরাহ করতে রাজি হয়েছে। শুক্রবার ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তারা কেরেম শালোম ক্রসিং দিয়ে একশটির বেশি ট্রাকে করে খাদ্য, ঔষধ ও চিকিৎসা সরঞ্জাম পাঠিয়েছে। তবে জাতিসংঘের মতে, এই সহায়তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই সামান্য। একটি যুদ্ধবিরতি চলাকালীন সময়ে প্রতিদিন প্রায় ৬০০ ট্রাক ত্রাণ গাজায় প্রবেশ করত, যা সেখানকার মানুষের মৌলিক চাহিদা মেটানোর জন্য জরুরি ছিল। বর্তমানে ইসরায়েলি বিধিনিষেধ এবং গাজার আইন-শৃঙ্খলার অবনতির কারণে ত্রাণ বিতরণ কঠিন হয়ে পড়েছে।

এদিকে, বৃহস্পতিবার ভোরে উত্তর গাজার একটি হাসপাতালে ইসরায়েলি ট্যাংক ও ড্রোন হামলা চালায়, যার ফলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। স্থানীয় স্বাস্থ্যকর্মীরা জানিয়েছেন, হামলায় হাসপাতালের দেয়াল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং ধোঁয়ায় চারিদিক ঢেকে যায়।

ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, হামাস যদি এখনো আটক থাকা ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তি না দেয় এবং তাদের অস্ত্র সমর্পণ করতে রাজি না হয়, তাহলে তারা অভিযান চালিয়ে যাবে। বর্তমানে হামাসের হাতে থাকা ৫৮ জন জিম্মির মধ্যে অর্ধেকের বেশি জীবিত আছে কিনা, তা নিশ্চিত নয়।

অন্যদিকে, কাতার-এর রাজধানী দোহায় চলমান যুদ্ধবিরতি আলোচনা ভেস্তে গেছে। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু জানান, তিনি তাঁর আলোচক দলকে কাতার থেকে ফিরিয়ে এনেছেন। কাতারের প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ বিন আব্দুলরহমান আল-থানি বলেছেন, দুই পক্ষের মধ্যে এখনো ‘মৌলিক পার্থক্য’ বিদ্যমান রয়েছে। হামাস অভিযোগ করেছে, গত সপ্তাহ থেকে কোনো ফলপ্রসূ আলোচনা হয়নি এবং নেতানিয়াহু ‘মিথ্যা’ তথ্য দিয়ে বিশ্ব জনমতকে বিভ্রান্ত করছেন।

উল্লেখ্য, গত বছরের ৭ অক্টোবর হামাস যোদ্ধারা ইসরায়েলে হামলা চালায়, যাতে প্রায় ১,২০০ জন নিহত হয়। এরপর ইসরায়েল গাজায় প্রতিশোধমূলক অভিযান শুরু করে, যার ফলস্বরূপ গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, সেখানে নারী ও শিশুসহ প্রায় ৫৩,০০০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে।

তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *