গাজা উপত্যকায় খাদ্য সহায়তার জন্য অপেক্ষারত ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিবর্ষণের অভিযোগ এনেছে জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি)। রবিবার (৯ জুন) সংঘটিত এই ঘটনায় অন্তত ৮০ জন নিহত হয়েছে বলে জানা গেছে, যা যুদ্ধ শুরুর পর ত্রাণপ্রার্থীদের ওপর চালানো সবচেয়ে মারাত্মক হামলাগুলোর মধ্যে একটি।
ডব্লিউএফপি’র বিবৃতিতে বলা হয়েছে, গাজার উত্তরে খাদ্য বোঝাই একটি কনভয়ের কাছে যাওয়ার সময় ফিলিস্তিনিরা ইসরায়েলি ট্যাংক, স্নাইপার এবং অন্যান্য অস্ত্রের হামলার শিকার হয়। যদিও ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী দাবি করেছে যে তারা “তাৎক্ষণিক হুমকি” অপসারণের জন্য সতর্কতামূলক গুলি ছুড়েছিল, তবে হতাহতের সংখ্যা নিয়ে তারা প্রশ্ন তুলেছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, রবিবার খাদ্য সংগ্রহের সময় ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে কমপক্ষে ৮০ জন নিহত হয়েছে।
সংস্থাটির অভিযোগের প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েলি সামরিক মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট কর্নেল নাদাভ শশানি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ভিডিও পোস্ট করেছেন, যেখানে সৈন্যদের “গুলিতে লিপ্ত না হতে” নির্দেশ দিতে শোনা যাচ্ছে। তবে, ঘটনার সত্যতা যাচাই করা সম্ভব হয়নি।
গাজায় খাদ্য সহায়তার জন্য হাহাকার চলছে। ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতির আলোচনা চললেও কোনো সমাধান আসেনি। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, যুদ্ধে এ পর্যন্ত ৫৯,০০০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। হতাহতদের মধ্যে নারী ও শিশুর সংখ্যা অর্ধেকের বেশি। জাতিসংঘের পাশাপাশি অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোও হতাহতের নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র হিসেবে মন্ত্রণালয়কে বিবেচনা করে।
যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজায় মানবিক সহায়তা পৌঁছানো ক্রমশ কঠিন হয়ে পড়ছে। জাতিসংঘের খাদ্য সহায়তা বিতরণের ওপর নির্ভরশীল ফিলিস্তিনিরা খাদ্য ও অন্যান্য জরুরি সামগ্রীর জন্য চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। ইতোমধ্যেই, গাজায় মানবিক সহায়তা প্রদানের জন্য গঠিত একটি মার্কিন-ইসরায়েলি সহায়তা ব্যবস্থার ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে।
অন্যদিকে, গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর হামলা অব্যাহত রয়েছে। সোমবার (১০ জুন) সকালে গাজার মধ্যাঞ্চলে ত্রাণ ট্রাকে অপেক্ষারত ফিলিস্তিনিদের ওপর গুলি চালানো হয়, এতে কমপক্ষে ২ জন নিহত হয়েছে। এছাড়া, খান ইউনিসের মুওয়াসি এলাকায় একটি তাঁবুতে ইসরায়েলি বিমান হামলায় কমপক্ষে ৫ জন নিহত হয়েছে, যাদের মধ্যে নারী ও শিশুও রয়েছে।
গাজায় চলমান সংঘাতের কারণে আঞ্চলিক পরিস্থিতি আরও খারাপ হচ্ছে। এর মধ্যে, ইরান-সমর্থিত হুতি বিদ্রোহীরা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালাচ্ছে। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী সোমবার (১০ জুন) সকালে ইয়েমেনের হুদাইদা বন্দরে হামলা চালিয়েছে। ইসরায়েলের দাবি, হুতি বিদ্রোহীরা বন্দরটিকে ইরান থেকে অস্ত্র গ্রহণের জন্য এবং ইসরায়েলের দিকে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ার কাজে ব্যবহার করছে।
সংবাদ সংস্থা এপির তথ্য অনুযায়ী, গাজার পরিস্থিতি দিন দিন আরও খারাপ হচ্ছে। সেখানকার বাসিন্দারা খাদ্য, জল এবং আশ্রয়ের জন্য চরম সংকটে দিন কাটাচ্ছে।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস