ইসরায়েলি সমাজে বেড়ে ওঠা তরুণ প্রজন্মের মাঝে চরমপন্থী মানসিকতার বিস্তার এখন গভীর উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখা গেছে, ১৫ থেকে ২৪ বছর বয়সী ইসরায়েলি তরুণদের মধ্যে ৭৩ শতাংশই নিজেদের ডানপন্থী হিসেবে পরিচয় দেয়।
আর এই সংখ্যাটি ৬৫ বছরের বেশি বয়সীদের মধ্যে ৪৬ শতাংশ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতায় থাকা রাজনীতিবিদদের প্রভাবে এবং ফিলিস্তিনিদের প্রতি বিদ্বেষপূর্ণ ধারণার কারণে তরুণদের মধ্যে এই প্রবণতা বাড়ছে।
জেরুজালেমের রাস্তায় সম্প্রতি দেখা যায়, একদল কিশোরী ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সমর্থনে স্লোগান দিচ্ছে। তাদের হাতে ছিল নেতানিয়াহুর ছবি এবং ফিলিস্তিনিদের প্রতি ঘৃণা প্রকাশ করা বিভিন্ন বক্তব্য সংবলিত প্ল্যাকার্ড।
তারা ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার পক্ষে মত দেয় এবং নেতানিয়াহুর নেতৃত্বকে সমর্থন করে। তাদের মতে, ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে শান্তি আলোচনা সম্ভব নয়।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই ধরনের চরমপন্থী মানসিকতা তরুণদের মধ্যে বেড়ে ওঠার মূল কারণ হলো নেতানিয়াহুর দীর্ঘদিনের শাসন। বিগত ১৪ বছরের মধ্যে ১২ বছর ধরেই তিনি ক্ষমতায় আছেন এবং তরুণ প্রজন্ম তাকে ছাড়া অন্য কোনো নেতাকে সেভাবে দেখেনি।
নেতানিয়াহু সবসময় ফিলিস্তিনিদের প্রতি কঠোর অবস্থান নিয়েছেন এবং তাদের সঙ্গে কোনো প্রকার আপস করতে রাজি নন।
গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বাহিনীর আক্রমণে গত অক্টোবর মাস থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ৫০ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে, যাদের মধ্যে ১৫,৬০০ জন শিশু। তরুণ প্রজন্মের মধ্যে এই সহিংসতার প্রতি সমর্থন এবং ফিলিস্তিনিদের প্রতি ঘৃণা প্রকাশের প্রবণতা ভবিষ্যতে ইসরায়েলি সমাজে গভীর সংকট ডেকে আনতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
তবে, কিছু প্রগতিশীল সংগঠন তরুণদের মধ্যে শান্তি ও সহমর্মিতার বার্তা পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করছে। ‘স্ট্যান্ডিং টুগেদার’ নামের একটি সংগঠন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফিলিস্তিনিদের মানুষ হিসেবে গণ্য করার আহ্বান জানাচ্ছে।
তারা যুদ্ধ বন্ধের জন্য এবং শান্তি ফিরিয়ে আনার জন্য কাজ করছে।
বিশ্লেষকরা মনে করেন, তরুণদের মধ্যে এই ধরনের চরমপন্থী মনোভাব দূর করতে হলে সমাজের সকল স্তরে সচেতনতা তৈরি করতে হবে। নেতৃত্ব থেকে শুরু করে সমাজের প্রতিটি সদস্যকে সহনশীলতা ও শান্তির বার্তা দিতে হবে।
তরুণদের বোঝাতে হবে, ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান ইসরায়েলের ভবিষ্যতের জন্য জরুরি। তাদের মনে রাখতে হবে, ঘৃণা ও সহিংসতার পথ কখনোই সমাধান বয়ে আনতে পারে না।
তথ্য সূত্র: সিএনএন