গাজায় ইসরায়েলের নতুন সামরিক আগ্রাসন: অপারেশন গিদিয়োনের রথ কী?

গাজায় ইসরায়েলের নতুন সামরিক অভিযান: মানবিক বিপর্যয়ের আশঙ্কা। গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর নতুন করে ব্যাপকground offensive অভিযান ‘অপারেশন গিদিয়ন্স চারিওটস’ শুরু হওয়ায় সেখানকার পরিস্থিতি আরও শোচনীয় হয়ে উঠেছে।

গত কয়েকদিন ধরে চলা বিমান হামলার পর এই অভিযান শুরু হয়েছে, যা গাজার স্বাস্থ্যখাতকে আরও দুর্বল করে দিয়েছে। জাতিসংঘের পাশাপাশি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা ও মানবাধিকার সংগঠনগুলো ইসরায়েলের এই পদক্ষেপের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে।

খবর অনুযায়ী, গাজায় মানবিক বিপর্যয় আরও ঘনীভূত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। গত কয়েক মাস ধরে অবরুদ্ধ গাজায় ইসরায়েলি সামরিক অভিযান নতুন কোনো ঘটনা নয়।

তবে এবারের অভিযানটি আগের তুলনায় অনেক বেশি তীব্র। হামাসের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি ভেঙে দেওয়ার পর থেকেই গাজায় অবরোধ আরও কঠোর করা হয়েছে, যার ফলে সেখানকার সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা চরম দুর্ভোগের শিকার।

জানা গেছে, ইসরায়েলি বাহিনী গাজার দক্ষিণাঞ্চল ও উত্তরাঞ্চলে তাদের অভিযান চালাচ্ছে। এই অভিযানের মধ্যেই হামাস এবং ইসরায়েলের মধ্যে কাতারের রাজধানী দোহায় নতুন করে আলোচনা চলছে।

যদিও এই আলোচনার মধ্যেই ইসরায়েল গাজায় তাদের সামরিক তৎপরতা আরও জোরদার করেছে, যা আন্তর্জাতিক মহলে উদ্বেগের কারণ হয়েছে। ইসরায়েলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এই অভিযানের মূল লক্ষ্য হলো গাজায় তাদের ‘অপারেশনাল কন্ট্রোল’ বাড়ানো এবং হামাসকে পরাজিত করা।

এছাড়াও, গাজায় আটক জিম্মিদের মুক্ত করাও তাদের অন্যতম উদ্দেশ্য। কিন্তু ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু’র এই পদক্ষেপ নিয়ে দেশের ভেতরেও সমালোচনা হচ্ছে।

অনেকে মনে করছেন, জিম্মিদের ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে তিনি যথেষ্ট গুরুত্ব দিচ্ছেন না। সম্প্রতি নেতানিয়াহুর একটি বক্তব্য ফাঁস হয়েছে, যেখানে তিনি গাজার ফিলিস্তিনিদের এলাকা ছাড়তে বাধ্য করার কথা বলেছিলেন।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ইসরায়েলের সাম্প্রতিক হামলায় বহু মানুষ নিহত হয়েছেন। গত কয়েকদিনের হামলায় অন্তত ১৪৪ জন নিহত হয়েছেন, যার মধ্যে শুধু উত্তরাঞ্চলেই নিহত হয়েছেন ৪২ জন।

নিহতদের মধ্যে সাংবাদিকও রয়েছেন। এছাড়া, খান ইউনিসের আল-মাওয়াসি এলাকায় বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের একটি তাঁবুতে ইসরায়েলি বিমান হামলায় অন্তত ৩৬ জন নিহত হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন শতাধিক।

গত অক্টোবর মাস থেকে শুরু হওয়া এই যুদ্ধে এ পর্যন্ত ৫৩,০০০ এর বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন ১,২০,০০০ এর বেশি। মানবিক বিপর্যয়ের চরম রূপ দেখা যাচ্ছে গাজায়।

সেখানকার বাসিন্দারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাদের শেষ পোস্ট দেওয়ার কথা বলছেন, যা পরিস্থিতিকে আরও ভয়াবহ করে তুলেছে। জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো ইসরায়েলের প্রতি গাজায় ত্রাণ সরবরাহ স্বাভাবিক করার আহ্বান জানিয়েছে।

কিন্তু ইসরায়েল এখনো পর্যন্ত তাতে সাড়া দেয়নি। মার্চ মাস থেকে গাজায় কোনো ধরনের ত্রাণ প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান টেড্রোস আধানোম গেব্রেয়াসুস বলেছেন, “অবরোধের কারণে বর্তমানে ২০ লক্ষ মানুষ অনাহারে দিন কাটাচ্ছে এবং সীমান্তের কাছেই ১,১৬,০০০ টন খাদ্য সরবরাহ আটকে আছে।

জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, গাজার প্রতি পাঁচজনের মধ্যে একজন বর্তমানে খাদ্য সংকটে ভুগছে। চলতি বছর অপুষ্টির কারণে ৯,০০০ শিশু হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে।

যদিও সম্প্রতি নেতানিয়াহু গাজায় কিছু খাদ্য সরবরাহ করার কথা বলেছেন, তবে কবে নাগাদ তা শুরু হবে, তা এখনো নিশ্চিত নয়। এদিকে, হামাস এই হামলাকে ‘বর্বর’ এবং আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন হিসেবে অভিহিত করেছে।

হামাস যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি ইসরায়েলকে সমর্থন বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছে এবং এই ঘটনার জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে দায়ী করেছে। আন্তর্জাতিক চাপ সত্ত্বেও ইসরায়েলের এই ধরনের পদক্ষেপ গাজার পরিস্থিতিকে আরও খারাপের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।

জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এই ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এবং অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছেন। জার্মানি, ফ্রান্সসহ বিভিন্ন দেশ ইসরায়েলের এই অভিযানের তীব্র নিন্দা করেছে।

ইউরোপের সাতটি দেশ গাজায় মানবিক বিপর্যয় বন্ধের জন্য ইসরায়েলকে তাদের নীতি পরিবর্তনের আহ্বান জানিয়েছে। গাজায় খাদ্য, জ্বালানি, চিকিৎসা সামগ্রী ও শিশুদের জন্য ভ্যাকসিনের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে।

জাতিসংঘের মানবিক বিষয়ক প্রধান টম ফ্লেচার গাজায় গণহত্যা প্রতিরোধের জন্য দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তথ্যসূত্র: আল জাজিরা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *