**ইস্তাম্বুলের মেয়র গ্রেপ্তার, প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক উত্তেজনা তুঙ্গে**
তুরস্কের বৃহত্তম শহর ইস্তাম্বুলের মেয়র একরাম ইমামোগলুকে বুধবার (আজ) গ্রেপ্তার করেছে দেশটির পুলিশ। ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে পরিচিত ইমামোগলুর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ আনা হয়েছে।
রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, সন্ত্রাসবাদের সঙ্গেও তার যোগসাজশ থাকতে পারে। একইসঙ্গে, এই ঘটনায় জড়িত সন্দেহে আরও ১০০ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।
গ্রেপ্তারের পর শহরে সম্ভাব্য বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ ঠেকাতে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। ইস্তাম্বুলের গুরুত্বপূর্ণ কিছু সড়কের যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে এবং চার দিনের জন্য সব ধরনের সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
এদিকে, ইমামোগলুর আটকের কয়েক ঘণ্টা পরেই তুরস্কের সামাজিক মাধ্যমগুলোতে প্রবেশে বাধার সৃষ্টি হয়েছে। দেশটির ইন্টারনেট পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা নেটব্লকস জানিয়েছে, টুইটার (X), ইউটিউব, ইনস্টাগ্রাম ও টিকটকের মতো জনপ্রিয় সাইটগুলোতে ঢুকতে ব্যবহারকারীদের সমস্যা হচ্ছে।
আগামী ২৩শে মার্চ তুরস্কের প্রধান বিরোধী দল রিপাবলিকান পিপলস পার্টি (সিএইচপি)-র প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য প্রাথমিক ভোট হওয়ার কথা রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, এই নির্বাচনে ইমামোগলুই দলটির প্রার্থী হতে পারেন।
যদিও, ২০২৮ সালে তুরস্কে পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে, তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এর আগেই নির্বাচন হতে পারে।
গ্রেপ্তারের আগে দেওয়া এক ভিডিও বার্তায় ইমামোগলু বলেন, “আমরা এক কঠিন পরিস্থিতির শিকার। তবে আমি হতাশ নই।” তিনি সরকারের বিরুদ্ধে জনগণের ইচ্ছার ওপর হস্তক্ষেপের অভিযোগ করেন।
সিএইচপি’র চেয়ারম্যান ওজগার ওজেল ইমামোগলুর গ্রেপ্তারকে ‘সামরিক অভ্যুত্থান’-এর সঙ্গে তুলনা করেছেন। তিনি বলেন, “ক্ষমতাসীন সরকার চাইছে, দেশের মানুষ যেন তাদের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করতে না পারে।”
ইমামোগলুর আটকের আগের দিন মঙ্গলবার তার বাসভবনে তল্লাশি চালানো হয়। এর আগে, একটি বিশ্ববিদ্যালয় তার স্নাতক সনদ বাতিল করে দেয়।
এই সিদ্ধান্তের ফলে আসন্ন নির্বাচনে তার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সম্ভাবনা কার্যত শেষ হয়ে যায়। তুরস্কের আইন অনুযায়ী, নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে একজন প্রার্থীর শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকতে হয়।
ইমামোগলু’র সনদ বাতিলের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানায়, ১৯৯০ সালে উত্তর সাইপ্রাসের একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইস্তাম্বুল বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগে স্থানান্তরের সময় কিছু নিয়মভঙ্গ হয়েছিল।
যদিও, ইমামোগলু এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন এবং বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের এই সিদ্ধান্তকে ‘বেআইনি’ বলে উল্লেখ করেছেন। তার মতে, সনদ বাতিলের কোনো অধিকার তাদের নেই।
ইমামোগলু এক বিবৃতিতে বলেন, “যাদের কারণে এমনটা হলো, তাদের একদিন বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে। ন্যায়বিচার, আইন ও গণতন্ত্রের জন্য আমাদের জনগণের যে পথচলা, তা কেউ থামাতে পারবে না।” তিনি আরও অভিযোগ করেন, এরদোয়ানের সরকারের চাপেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে এবং বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিয়েও তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
ইমামোগলু বলেন, “আমার পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে? আমি সিংহের মতো লড়াই চালিয়ে যাবো। পিছপা হওয়ার কোনো সুযোগ নেই, বরং আমি আরও কঠোরভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাবো।”
২০১৯ সালের মার্চে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে এরদোয়ানের দল জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টিকে পরাজিত করে ইস্তাম্বুলের মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন ইমামোগলু। ওই নির্বাচনে এরদোয়ানের দল পরাজয় মেনে নিতে রাজি ছিল না।
তারা নির্বাচনের ফল বাতিলের জন্য চাপ সৃষ্টি করেছিল, কিন্তু শেষ পর্যন্ত ইমামোগলু জয়ী হন। গত বছর অনুষ্ঠিত স্থানীয় নির্বাচনেও তার দল উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান