শত শত বছর ধরে টিকে থাকা এক ঐতিহ্য: ইস্তাম্বুলের কুলিদের জীবনযুদ্ধ।
ইস্তাম্বুলের সরু পথ আর অলিগলিতে যাদের আনাগোনা, তাদের হয়তো অনেকেই তেমন একটা চোখে দেখে না। তারা হলেন ইস্তাম্বুলের কুলিরা, যারা দিনের পর দিন মাথার ঘাম পায়ে ফেলে এই শহরের ঐতিহ্য টিকিয়ে রেখেছেন।
তুরস্কের এই ঐতিহাসিক শহরে ‘হামাল্লিক’ নামে পরিচিত এই পেশাটি যুগ যুগ ধরে চলে আসছে।
ঐতিহাসিক বাজারগুলো, যেমন— মিশরীয় বাজার, গ্র্যান্ড বাজার এবং এমিনোনু জেলায় এই কুলিদের দেখা মেলে। পুরনো দিনের ‘হানস’ নামের বাণিজ্যিক ভবনগুলোতে তাদের কাজ করতে হয়, যেখানে গয়না, বস্ত্র এবং অন্যান্য সামগ্রীর দোকান রয়েছে।
এই সব দোকানে মালামাল পৌঁছে দেওয়ার কঠিন কাজটি তারা করে থাকেন। আধুনিককালে অনেক ভবনে লিফট্ থাকলেও, অধিকাংশ পুরনো ভবনে এখনো সেই ব্যবস্থা নেই।
সংকীর্ণ রাস্তাগুলোর কারণে গাড়ির প্রবেশও কঠিন। ফলে কুলিরাই সেখানে একমাত্র ভরসা।
একজন কুলি তার পিঠে সেমের (কাঠ ও চামড়ার তৈরি বিশেষ ধরনের সরঞ্জাম) বেঁধে প্রায় ২০০ থেকে ৩০০ কিলোগ্রাম ওজনের মালপত্র নিয়ে পাঁচ তলার উপরেও উঠতে পারেন। এই কাজটি অত্যন্ত কষ্টসাধ্য।
ঐতিহ্যগতভাবে, এই পেশা পিতার থেকে পুত্রের কাছে যায়। সাধারণত পুরুষরাই এই পেশায় যুক্ত থাকেন, নারী কুলির সংখ্যা খুবই কম।
কুলিরা দলবদ্ধভাবে কাজ করেন। তাদের একজন নেতা থাকেন, যিনি শ্রমিকদের মধ্যে কাজের পরিমাণ ভাগ করে দেন। তারা প্রতিদিনের কাজের ভিত্তিতে মজুরি পান।
৬০ বছর বয়সী ওমর ওকান নামের এক কুলি জানান, তিনি গত ৩০ বছর ধরে এই পেশায় আছেন। একদিনে তিনি প্রায় ৫০০ কিলোগ্রামের বেশি ওজনের মালও বহন করেছেন।
এই কাজ অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। ওকান আরও বলেন, “আমরা অনেকেই কোনো বীমা করি না। অসুস্থ হলে বা কোনো আঘাত পেলে আমাদের রোজগার বন্ধ হয়ে যায়।”
ইস্তাম্বুলের এমিনোনু এলাকা থেকে বড় ব্যবসায়ীরা সরে যাওয়ায় তাদের কাজ কমে গেছে। “কাজের অভাবে অনেক দিন আমরা খালি হাতে বাড়ি ফিরি,”—বলেন তিনি।
কুলিরা তাদের কাজের প্রতি গর্বিত। তাদের এই পেশা প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে চলে আসছে।
৭৫ বছর বয়সী মেভলুত নামের আরেকজন কুলি জানান, একসময় সমাজে তাদের কাজের যথেষ্ট কদর ছিল।
“আমি যখন এই পেশা শুরু করি, তখন মানুষ আমাদের খুব সম্মান করত। এখন আর কেউ কাউকে সম্মান করে না,”—বলেন তিনি।
তাদের এই কঠোর পরিশ্রমের পরেও অনেক সময় তারা সমাজের চোখে উপেক্ষিত হন। তাদের জীবনযাত্রার অনিশ্চয়তা এবং সম্মানহানির বিষয়টি তাদের প্রতিনিয়ত হতাশ করে তোলে।
তথ্য সূত্র: Associated Press (AP)