ইতালির সংস্কৃতি মানেই যেন এক ভিন্ন জগৎ। খাবার, পানীয় আর আড্ডার এক দারুণ মিশেল হলো এই দেশ। আর ইতালির একটি বিশেষ দিক হলো ‘অ্যাপেরিটিভো’ – বন্ধুদের সঙ্গে মিলে সন্ধ্যার আগে হালকা পানীয় আর মুখরোচক খাবার উপভোগ করা।
যারা অ্যালকোহল পান করেন না, তাদের জন্যও ইতালিতে দারুণ কিছু ব্যবস্থা রয়েছে। আসুন, জেনে নেওয়া যাক ইতালির এই আনন্দ-অনুষ্ঠানের কিছু মজাদার দিক।
সন্ধ্যা ৬টা থেকে ৮টার মধ্যে ইতালির বার ও ক্যাফেগুলোতে অন্যরকম একটা পরিবেশ তৈরি হয়। ইতালীয়দের কাছে ‘অ্যাপেরিটিভো’ মানে শুধু হ্যাপি আওয়ার নয়, বরং এটি একটি মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ। কর্মব্যস্ত দিন শেষে বন্ধু ও পরিবারের সঙ্গে হালকা পানীয় আর গল্পে মেতে ওঠার দারুণ সুযোগ এটি।
এই সময়টাকে তারা উপভোগ করে।
‘অ্যাপেরিটিভো’ শব্দটি এসেছে ল্যাটিন শব্দ ‘অ্যাপেরিরে’ থেকে, যার অর্থ ‘খুলে দেওয়া’। ডিনার বা রাতের খাবারের আগে মুখটা হালকা খাবারের জন্য প্রস্তুত করা। প্রাচীন রোমে ধনী পরিবারগুলো ভেষজ মিশ্রিত ওয়াইন পান করত, যা ক্ষুধা বাড়াতে সাহায্য করত।
সময়ের সাথে সাথে, এই রীতি ইতালির সংস্কৃতিতে মিশে গেছে, বিশেষ করে দেশটির উত্তরে এর বেশি প্রচলন দেখা যায়।
যারা অ্যালকোহল পান করেন না, তাদের জন্যও এই সংস্কৃতি উপভোগ করার সুযোগ রয়েছে। ইতালির বারগুলোতে এখন ‘নন-অ্যালকোহলিক’ বা অ্যালকোহল-মুক্ত পানীয়ের চাহিদা বাড়ছে।
বিভিন্ন ক্লাসিক ককটেলের পাশাপাশি তারা নতুন ধরনের রিফ্রেশিং পানীয়ও তৈরি করছে।
এবার আসা যাক কয়েকটি শহরের কথায়, যেখানে এই অ্যাপেরিটিভো’র সংস্কৃতি বেশ জনপ্রিয়:
১. তুরিন (Turin):
এই শহরের সাথেই আধুনিক ‘অ্যাপেরিটিভো’র ইতিহাস জড়িত। আঠারো শতকে আন্তোনিও বেনেদেত্তো কার্পানো নামের এক ব্যক্তি মিষ্টি ওয়াইন ও ভেষজ মিশিয়ে ভার্মুথ তৈরি করেন।
এই পানীয়টি খুব দ্রুতই সকলের কাছে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। তুরিনের ক্যাফে প্লাত্তি-র মতো পুরনো ক্যাফেগুলোতে এখনো সেই পুরনো আমলের পরিবেশ বজায় আছে।
এখানে আপনি ‘অ্যালকোহল-ফ্রি’ ‘অ্যাপরল স্প্রিজ’ পান করতে পারেন, যেখানে ‘স্যানবিটার’ ব্যবহার করা হয়। এছাড়াও, কমলালেবুর রস ও টনিক ওয়াটার অথবা ক্লাসিক ‘শার্লি টেম্পল’-এর মতো পানীয়ও সেখানে পাওয়া যায়।
এছাড়াও, তুরিনের সেন্ট্রাল মার্কেটে রয়েছে প্রথম ‘ড্রাই ককটেল বার’। এখানে স্থানীয় উপকরণ দিয়ে তৈরি বিভিন্ন ‘লো-অ্যালকোহল’ পানীয় পাওয়া যায়।
এদের মধ্যে ‘তুরিন মোল’ অন্যতম, যা জুনিয়র জল, লেবু, আদা সিরাপ ও কম্বুচা দিয়ে তৈরি করা হয়।
২. মিলান (Milan):
মিলান ‘অ্যাপেরিটিভো’র জন্য সুপরিচিত। এখানকার বারগুলোতে ‘ক্যাম্পারি’র মতো জনপ্রিয় পানীয়র চাহিদা রয়েছে।
এখানকার ‘ক্যাম্পারিনো’র মতো ঐতিহাসিক বারগুলোতে ‘অ্যালকোহল-ফ্রি’ ‘ক্রোডিনো স্প্রিজ’ পাওয়া যায়।
এছাড়াও, ‘ইল ড্যান্ডি’তে আর্টিচোক ও তুলসী পাতা দিয়ে তৈরি বিশেষ ধরনের নন-অ্যালকোহলিক পানীয় পাওয়া যায়।
মিলানের ‘ম্যাগ ক্যাফে’-তে সিজন ও রুচি অনুযায়ী বিভিন্ন ধরনের পানীয় পরিবেশন করা হয়। এখানে জিরো পার্সেন্ট অ্যালকোহলযুক্ত বিভিন্ন পানীয় পাওয়া যায়।
তাদের ‘ডা গ্রান্দে সারো উন নেগ্রোনি’ হলো ‘নেগ্রোনি’র অ্যালকোহল-মুক্ত সংস্করণ।
৩. ভেনিস (Venice):
ভেনিসে অবস্থিত ‘আর্টস বার’-এ বিভিন্ন ধরনের আকর্ষণীয় ‘মকটেল’ পাওয়া যায়, যা বিশেষভাবে তৈরি করা হয়।
সেন্ট রেজিস ভেনিসের পেছনের এই বারটি ‘গ্র্যান্ড ক্যানেল’-এর সুন্দর দৃশ্যের জন্য পরিচিত। এখানে আপনি ক্লদ মোনে-র চিত্রকর্ম ‘ইল ক্যানেল গ্রান্দে’ থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে তৈরি ‘ব্রিটানিয়া ১২০১’ অথবা একটি পোশাকের ভাস্কর্য থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে তৈরি ‘স্পিরিট ইলিউশন’-এর মতো অ্যালকোহল-মুক্ত স্প্রিজ উপভোগ করতে পারেন।
অ্যালকোহল-মুক্ত কিছু পানীয়:
ইতালির এই ‘অ্যাপেরিটিভো’র সংস্কৃতি এখন সারা দেশেই জনপ্রিয়। এখানে কিছু নন-অ্যালকোহলিক পানীয়ের কথা বলা হলো:
* সেড্রাতা (Cedrata): এটি একটি মিষ্টি ও টক স্বাদের ইতালীয় পানীয়। ১৯৫৬ সালে তৈরি হওয়া ‘তাসসোনি’র সেড্রাতা-র প্রধান উপাদান হলো ক্যালব্রেয়ার সিট্রাস ফল।
* কিনোটো (Chinotto): এটি একটি ক্লাসিক পানীয়, যা চিনোটো ফল থেকে তৈরি করা হয়। এই গাছের ফলগুলি দেখতে অনেকটা ছোট আকারের কমলালেবুর মতো।
* ক্রোডিনো (Crodino): এটি ১৫টি ভেষজ উপাদানের মিশ্রণে তৈরি একটি নন-অ্যালকোহলিক পানীয়।
সুতরাং, আপনি যদি ইতালিতে যান, তাহলে এই নন-অ্যালকোহলিক পানীয়গুলো চেখে দেখতে পারেন। বন্ধুদের সঙ্গে গল্প করতে করতে এই পানীয়গুলো আপনাকে এনে দেবে অন্যরকম এক আনন্দ।
তথ্য সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক