ইতালির সবুজ পাহাড়ের মাঝে, যেন এক টুকরো শিল্পকর্ম! শিল্পী মার্কোনটেনিও রাইমন্ডি ম্যালেরবার বাড়িটি শুধু থাকার জায়গা নয়, বরং শিল্প, প্রকৃতি আর নকশার এক অপূর্ব মেলবন্ধন।
ইতালির বার্তিনোরো ও সেসেনার মাঝে অবস্থিত এই বাড়িটি যেন ম্যালেরবার স্বপ্ন আর কল্পনার প্রতিচ্ছবি।
খ্যাতিমান এই শিল্পী, ভাস্কর এবং ডিজাইনারের সৃজনশীল জগৎ মুগ্ধ করে বিশ্বকে, আর তাঁর এই আশ্রয়স্থলটি একইসঙ্গে তাঁর আশ্রয় এবং নিরন্তর অনুপ্রেরণার উৎস।
মার্কোনটেনিও জানান, “প্রথমবার যখন জায়গাটি দেখি, এর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আমাকে মুগ্ধ করেছিল।
চারপাশের দৃশ্য ছিল অসাধারণ – অনেকটা বর্গাকার পাহাড়ের চূড়ার মতো।
জায়গাটি ঘুরে দেখবার সময় দুটো হরিণ আমার পাশ দিয়ে হেঁটে গেল, যা ছিল এক জাদুকরী মুহূর্ত।
তখনই বুঝেছিলাম, এখানেই আমি আমার বাড়ি-স্টুডিও তৈরি করব।”
প্রকৃতির সঙ্গে এই গভীর সম্পর্ক তাঁর বাড়ির প্রতিটি অংশে বিদ্যমান।
সাদা রঙের ঘরগুলো যেন প্রকৃতির সঙ্গে মিশে গেছে, যা বাইরের জগৎ থেকে আলাদা নয়।
তিনি বলেন, “আমি এমন একটি বাড়ি চেয়েছিলাম যা পরিবেশের সঙ্গে মিশে যাবে, বরং এটিকে নিজের মতো করে চাপিয়ে দেবে না।
একইসঙ্গে, এটি আমার কাজকেও প্রতিফলিত করবে, অনেকটা ভাস্কর্যের মতো।”
এই বাড়ির নকশাটিও বেশ অভিনব।
ভেতরের স্থানগুলো একটি একক কাঠামোর পরিবর্তে ছোট ছোট ঘর বা স্থানের সমষ্টির মতো করে তৈরি করা হয়েছে, যা অনেকটা গ্রামের মতো দেখতে।
মার্কোনটেনিও বলেন, “আমার একটি বড় বাড়ির বদলে অনেকগুলো ছোট ছোট ঘর বানানোর ধারণা ভালো লেগেছিল।
এর ফলে প্রতিটি স্থানে আলো-ছায়ার খেলা তৈরি হয়েছে, যা খুবই মনোরম।”
তাঁর ব্যক্তিগত বাসভবন এবং স্টুডিওর মধ্যে রয়েছে কাঁচের একটি পথ।
এটি যেন কাজ এবং জীবনের মাঝে, চিন্তা ও সৃষ্টির মাঝে একটি সংযোগ স্থাপন করে।
বাড়ির বারান্দা থেকে রম্যাগনার প্রকৃতির সুন্দর দৃশ্য দেখা যায়।
মার্কোনটেনিও আরও বলেন, “এখানে বসবাস করা মানে প্রকৃতির সঙ্গে সবসময় একটি কথোপকথন চালিয়ে যাওয়া।
এমনকি, আমি বারান্দায় একটি আউটডোর বাথটাব ও শাওয়ার তৈরি করেছি, যা ইন্দোনেশিয়া ভ্রমণের সময় পাওয়া ধারণা থেকে অনুপ্রাণিত।
এর ফলে, আমি সবসময় বাইরের প্রকৃতির সঙ্গে থাকার অনুভূতি পাই।”
ঘরের ভেতরের অংশে প্রবেশ করলেই চোখে পড়ে শিল্পীর রুচিবোধ।
সাদা দেয়ালগুলো যেন এক একটি ক্যানভাস, যেখানে আসবাবপত্র ও শিল্পকর্মগুলো নিজেদের গল্প বলে।
এখানে রয়েছে গরিলা চেয়ার, সেলেত্তি থেকে নেওয়া ‘কম্ফি’ সোফা এবং কাঠের তৈরি একটি ফুল টেবিল।
“প্রতিটি জিনিসের নিজস্ব অর্থ আছে, তা আমি নিজে ডিজাইন করি বা কোনো পুরনো বাজার থেকে সংগ্রহ করি।
আমি সেগুলোকে একটি সম্মিলিত গল্পের চরিত্র হিসেবে দেখি।”
মার্কোনটেনিও যোগ করেন, “আমি এমন একটি জাদুকরী জিনিসের সন্ধান করি, যা একটি বিশেষ গল্প, ধারণা এবং অন্তর্নিহিত অর্থ বহন করে।
এমন একটি জিনিস, যা মালিকের কাছে বা যিনি সত্যিই দেখতে পান, তাঁর কাছে বাজারের মূল্যের চেয়ে অনেক বেশি মূল্যবান।
আমি শিল্প এবং নকশার মধ্যে কোনো বিভেদ দেখি না; বরং, আমি নকশার মধ্যে শিল্প খুঁজে বের করি এবং যা আমি অনুভব করি, তাকে কার্যকরী করে তুলি।”
ডাইনিং এলাকার একটি বৈশিষ্ট্য হলো—বন্ধু দ্বারা তৈরি একটি মজবুত ওক টেবিল, যা ঐতিহ্যবাহী রম্যাগনলো ওস্টেরিয়া চেয়ার এবং একটি আফ্রিকান টুলের সঙ্গে স্থাপন করা হয়েছে।
উপরের অংশে, বসার স্থানে, কার্মান প্ল্যাঙ্কটন ল্যাম্প একটি উজ্জ্বল আভা ছড়ায়।
“আমি স্থানীয় কারুশিল্প থেকে বিশ্বজুড়ে পাওয়া নানা ধরনের জিনিসের মিশ্রণ পছন্দ করি।
এখানে কোনো নির্দিষ্ট শৈলী নেই, বরং স্মৃতি এবং শৈল্পিকতার একটি স্তর রয়েছে।”
এই বাড়ির সবচেয়ে ব্যক্তিগত জিনিস সম্ভবত তাঁর ছোটবেলার বেঞ্চটি, যা এখন সাজসজ্জার অংশ হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
মার্কোনটেনিও বলেন, “প্রত্যেক জিনিসের একটি ইতিহাস আছে, একটি উপস্থিতি আছে।
এটিই সবকিছুকে একসঙ্গে বেঁধে রাখে।
আমার কাছে, নকশা শুধু নান্দনিকতা নয়, এটি গল্প বলারও একটি মাধ্যম।”
প্রকৃতির মাঝে, স্মৃতি আর শিল্পের এক শান্ত, সীমাহীন স্থানে মার্কোনটেনিও তাঁর স্বপ্ন বুনতে ভালোবাসেন।
তথ্য সূত্র: The Guardian