ইতালির টেনিস জয়যাত্রা: সাফল্যের নেপথ্যে লুকিয়ে থাকা কৌশল
সাধারণত, ইতালিকে শিল্প, ফ্যাশন আর রন্ধনশৈলীর দেশ হিসেবেই চেনে বিশ্ব। কিন্তু খেলাধুলার জগতে, বিশেষ করে টেনিসে, দেশটি এখন নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে।
সম্প্রতি, ইতালির বেশ কয়েকজন টেনিস খেলোয়াড় বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়ে উপরের দিকে উঠে এসেছেন। এদের মধ্যে সবচেয়ে উজ্জ্বল নক্ষত্র হলেন জ্যানিক সিনার।
বর্তমানে তিনি বিশ্বের এক নম্বর খেলোয়াড়।
খেলাধুলায় ইতালির এই অভাবনীয় সাফল্যের পেছনে রয়েছে দেশটির টেনিস ফেডারেশনের সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা। এক সময় ইতালিতে ফুটবলের জনপ্রিয়তা ছিল আকাশচুম্বী।
কিন্তু ফুটবল দল বিশ্বকাপে ভালো ফল করতে ব্যর্থ হওয়ায় টেনিসের প্রতি মানুষের আগ্রহ বেড়েছে। ইতালির ক্রীড়া সাংবাদিক উবালদো স্কানাগাত্তার মতে, সিনার এখন ইতালির সেরা ক্রীড়াবিদ এবং জাতীয় আইকন।
ইতালিয়ান টেনিস ফেডারেশন খেলোয়াড়দের উন্নতির জন্য বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে। তারা খেলোয়াড়দের প্রশিক্ষণের জন্য উন্নত মানের সুযোগ সুবিধা তৈরি করেছে।
শুধু তাই নয়, খেলোয়াড়দের ব্যক্তিগত প্রশিক্ষকদেরও ফেডারেশন সহায়তা করে। এর ফলে সেরা খেলোয়াড়রা সেরা সুযোগ পাচ্ছেন, তা তারা যেখানেই থাকুন না কেন। সিনার, লরেনজো মুসেত্তি এবং মাতেও বেরেত্তিনির মতো খেলোয়াড়রা এই সুযোগ সুবিধাগুলো গ্রহণ করে উপকৃত হয়েছেন।
ইতালির টেনিস উন্নয়নের পেছনে কৌশলগত প্রশিক্ষকদেরও অবদান রয়েছে। নোভাক জোকোভিচের সাবেক কোচ ক্রেইগ ও’শনসি ইতালিয়ান ফেডারেশনের পরামর্শক হিসেবে কাজ করছেন।
তিনি খেলোয়াড়দের খেলার ধরন এবং কৌশল নিয়ে কাজ করেন। তার মতে, ইতালি টেনিসের উন্নয়নে অনেক এগিয়ে গেছে।
শুধু খেলোয়াড়দের প্রশিক্ষণ এবং সুযোগ সুবিধাই নয়, ইতালিতে আন্তর্জাতিক টেনিস টুর্নামেন্টের সংখ্যাও বেড়েছে। টেনিস ইউরোপের তথ্য অনুযায়ী, ইতালিতে ১৪৮টি আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়, যা ইউরোপের মোট প্রতিযোগিতার আট শতাংশ।
এই টুর্নামেন্টগুলো তরুণ খেলোয়াড়দের জন্য নিজেদের প্রমাণ করার দারুণ সুযোগ তৈরি করে।
ইতালিতে গ্র্যান্ড স্ল্যাম টুর্নামেন্ট না থাকলেও, সেখানে এটিপি ফাইনালসের মতো গুরুত্বপূর্ণ টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত হয়।
এছাড়াও, ইতালিয়ান ওপেন এখানকার অন্যতম জনপ্রিয় একটি টুর্নামেন্ট।
খেলা সম্প্রচারের ক্ষেত্রেও ইতালির রয়েছে নিজস্ব ব্যবস্থা। দেশটির টেনিস ফেডারেশন ‘সুপারটেনিস’ নামে একটি টিভি চ্যানেল পরিচালনা করে।
এই চ্যানেলে ইউএস ওপেনের মতো গুরুত্বপূর্ণ টুর্নামেন্টগুলো সরাসরি সম্প্রচার করা হয়, যা দর্শকদের কাছে খেলাটিকে আরও বেশি জনপ্রিয় করে তুলেছে।
অতীতে ইতালির টেনিসে খুব বেশি সাফল্য ছিল না। ১৯৭৬ সালে অ্যাড্রিয়ানো পানাটা একমাত্র গ্র্যান্ড স্ল্যাম জিতেছিলেন।
কিন্তু বর্তমানে, জ্যানিক সিনারের হাত ধরে ইতালিয়ান টেনিস নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে। এছাড়া, মহিলা বিভাগে ফ্রান্সেসকা স্কিয়াভোনে এবং ফ্লাভিয়া পেনেত্তার মতো খেলোয়াড়রাও গ্র্যান্ড স্ল্যাম জিতেছেন।
ইতালির টেনিসের এই সাফল্যের কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, খেলোয়াড়দের জন্য উন্নত প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা, পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধা এবং টুর্নামেন্টের আয়োজন—এগুলো সবই সাফল্যের চাবিকাঠি।
ভবিষ্যতে ইতালির টেনিস আরও কতদূর যাবে, সেটাই এখন দেখার বিষয়। তবে দেশটির টেনিস ফেডারেশনের নেওয়া পদক্ষেপগুলো প্রমাণ করে, তারা দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন