ইতালিতে বংশগত সূত্রে নাগরিকত্ব লাভের প্রক্রিয়া কঠিন হতে চলেছে। সম্প্রতি দেশটির সরকার একটি নতুন ডিক্রি জারি করেছে, যার ফলে ইতালীয় বংশোদ্ভূত ব্যক্তিদের জন্য নাগরিকত্ব অর্জন করা আগের চেয়ে কঠিন হবে।
এই পরিবর্তনের মূল উদ্দেশ্য হলো, ইতালির পাসপোর্ট লাভের আকাঙ্ক্ষা থেকে নয়, বরং ইতালির সঙ্গে যাদের প্রকৃত সম্পর্ক রয়েছে, তাদের নাগরিকত্ব নিশ্চিত করা।
নতুন এই ডিক্রি অনুযায়ী, এখন থেকে যারা ইতালীয় নাগরিকত্ব পেতে চান, তাদের কিছু অতিরিক্ত শর্ত পূরণ করতে হবে। এতদিন পর্যন্ত, যে কেউ, যিনি ১৮৬১ সালের পর ইতালি ত্যাগ করা কোনো আত্মীয়ের বংশধর, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দেখালেই নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে পারতেন।
কিন্তু এখন থেকে ‘আইউরে স্যাঙ্গুইনিস’ বা বংশ পরম্পরায় নাগরিকত্বের নিয়মানুসারে, কেবল ইতালীয় পিতামাতা অথবা দাদা-দাদির বংশধররাই নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে পারবেন।
এছাড়াও, আবেদনকারীদের ইতালীয় ভাষায় দক্ষতা প্রমাণ করতে হবে এবং ইতালিতে তিন বছর বসবাস করতে হবে। আগে ইতালীয় কনস্যুলেটগুলোতে নাগরিকত্বের আবেদন জমা দেওয়া যেত, কিন্তু এখন থেকে এই আবেদনগুলো সরাসরি ইতালিতেই জমা দিতে হবে এবং আবেদনকারীদের ব্যক্তিগতভাবে সাক্ষাৎকারের জন্য উপস্থিত থাকতে হবে।
আগে যেখানে ইতালীয় নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করলে প্রায় দুই বছর সময় লাগতো, সেখানে নতুন এই নিয়মের কারণে এখন অনেক আবেদনকারীর ক্ষেত্রেই প্রক্রিয়াটি আরও দীর্ঘ হবে। এমনকি, যারা ইতিমধ্যে কাগজপত্র জমা দিয়েছেন, তাদের মধ্যেও অনেকে নতুন নিয়মের কারণে নাগরিকত্ব নাও পেতে পারেন।
গত এক দশকে যারা ইতালির নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করেছেন, তাদের মধ্যে অধিকাংশই এসেছেন আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিল থেকে। শুধুমাত্র গত বছরেই প্রায় ৩০ হাজার আর্জেন্টাইন এবং ২০ হাজার ব্রাজিলীয় নাগরিকত্ব পেয়েছেন।
নতুন ডিক্রির ফলে, এই সংখ্যা ভবিষ্যতে হ্রাস পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
নতুন এই ডিক্রিতে আরও বলা হয়েছে, যারা ইতালীয় নাগরিকত্ব নিয়েছেন এবং অন্য কোনো দেশেরও নাগরিক, তাদের ইতালির নাগরিকত্ব বাতিল হতে পারে যদি তারা কর পরিশোধ, আইডি কার্ড নবায়ন এবং নির্বাচনে ভোট দেওয়ার মতো নাগরিক দায়িত্বগুলো পালন না করেন।
এছাড়াও, যারা ইতালীয়দের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন, তাদের ক্ষেত্রেও নাগরিকত্বের জন্য ইতালিতে ২ বছর বসবাস করার নিয়ম রাখা হয়েছে।
অতীতে, ইতালিকে প্রায়শই নাগরিকত্ব পাওয়ার সহজ দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম হিসেবে বিবেচনা করা হতো। নতুন এই ডিক্রির মাধ্যমে সেই ধারণার পরিবর্তন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যারা বিদেশে অভিবাসন অথবা নাগরিকত্ব লাভের কথা ভাবছেন, তাদের জন্য এই ধরনের পরিবর্তনগুলো জানা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
তথ্য সূত্র: ট্রাভেল এন্ড লেজার