সাভিনি’র দলের ‘বিদ্বেষপূর্ণ’ এআই ছবি: তীব্র প্রতিবাদ!

ইতালির উপ-প্রধানমন্ত্রী মাত্তেও সালভিনির নেতৃত্বাধীন চরম-ডানপন্থী দলের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) দ্বারা তৈরি করা ছবি ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে। বিরোধী দলগুলো এই ছবিগুলোকে ‘বর্ণবাদী’, ‘ইসলামবিদ্বেষী’ এবং ‘বিদেশি বিদ্বেষপূর্ণ’ আখ্যা দিয়ে দেশটির যোগাযোগ নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ দায়ের করেছে।

অভিযোগকারীদের মধ্যে রয়েছে মধ্য-বামপন্থী ডেমোক্রেটিক পার্টি (পিডি)। তাদের অভিযোগ, লিগ পার্টি (স্যালভিনির দল) ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম এবং এক্স-এর মতো সামাজিক মাধ্যমগুলোতে যেসব ছবি ব্যবহার করেছে, সেগুলোতে ঘৃণা ও বিদ্বেষপূর্ণ বক্তব্য রয়েছে। ছবিগুলোতে প্রায়ই দেখা যায়, কৃষ্ণাঙ্গ পুরুষরা ছুরি হাতে নারী বা পুলিশের ওপর আক্রমণ করছে।

পিডি’র সিনেটর আন্তোনিও নিচিতা বলেন, “স্যালভিনির দলের প্রকাশিত এআই-নির্মিত ছবিগুলোতে বর্ণবাদ, জাতিবিদ্বেষ এবং ইসলামভীতিসহ ঘৃণাসূচক বক্তব্যের প্রায় সব ধরনই বিদ্যমান। তারা অভিবাসী ও আরবদের মতো একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠীকে লক্ষ্যবস্তু বানাচ্ছে, যাদেরকে সম্ভাব্য অপরাধী, চোর ও ধর্ষক হিসেবে চিত্রিত করা হচ্ছে। এই ছবিগুলো শুধু সহিংসই নয়, বরং প্রতারণামূলকও। ভুক্তভোগীদের মুখ অস্পষ্ট করে দেওয়ার মাধ্যমে যেন তারা আক্রান্ত ব্যক্তির পরিচয় রক্ষা করতে চাইছে, যা ব্যবহারকারীদের ভুল ধারণা দিতে পারে।”

সবুজ ও বাম জোটের সংসদ সদস্য ফ্রান্সেসকো এমিলিও বোরেলি বলেন, “এআই আমাদের নির্দেশনার ভিত্তিতে বিষয়বস্তু তৈরি করে। এক্ষেত্রে, এটি স্পষ্টভাবে কৃষ্ণাঙ্গ মানুষদের বৃদ্ধ মহিলাকে ছিনতাই করতে অথবা ভীতু নারীর ছবি তৈরি করতে নির্দেশিত হয়েছে। এটি নাগরিকদের মধ্যে ভীতি তৈরি করার কৌশল।”

যদিও স্যালভিনির দলের একজন মুখপাত্র স্বীকার করেছেন যে, তাদের সামাজিক মাধ্যমগুলোতে প্রদর্শিত ছবিগুলোর কিছু ‘ডিজিটালভাবে তৈরি করা’। তারা তাদের বিবৃতিতে জানিয়েছে, ‘এখানে ছবিটা মুখ্য নয়, বরং ঘটনাটি গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিটি পোস্ট ইতালীয় সংবাদপত্রের সত্য ঘটনার উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে, যেখানে নাম, তারিখ ও স্থান উল্লেখ করা হয়েছে। যদি বাস্তবতা কঠোর হয়, তবে যারা এটি প্রকাশ করে তাদের দোষারোপ না করে যারা এটি তৈরি করেছে তাদের দায়ী করুন। যদি এটি কোনো অপরাধের সঙ্গে সম্পর্কিত হয়, তবে সেই খবরের সঙ্গে আনন্দদায়ক বা স্বস্তিদায়ক ছবি ব্যবহার করা কঠিন।’

এদিকে, অলাভজনক সংস্থা এআই ফরেনসিকসের গবেষণা প্রধান সালভাতোরে রোমানো বলেছেন, লিগ পার্টির ছবিগুলোতে ‘কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সব বৈশিষ্ট্য’ বিদ্যমান। তিনি বলেন, ‘এগুলো এমন ছবি, যেখানে বিষয়বস্তুগুলো প্রেক্ষাপটের বাইরে এবং বিষয়টিকে সম্পূর্ণ অস্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। আমার উদ্বেগের বিষয় হলো, এআই-নির্মিত ছবিগুলো আরও বেশি বাস্তব হয়ে উঠছে।’

অভিযোগে বলা হয়েছে, ছবিগুলো মূলধারার গণমাধ্যমের প্রতিবেদনের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে, যেখানে অপরাধের কথা উল্লেখ করা হয়েছে, তবে অভিযুক্তদের কোনো ছবি ব্যবহার করা হয়নি। উদাহরণস্বরূপ, লিগ পার্টির একটি পোস্টে লেখা ছিল, ‘একজন বিদেশি ট্রেনের কন্ডাকটরের ওপর হামলা করেছে’। এর সঙ্গে একজন কৃষ্ণাঙ্গ ব্যক্তির ছবি জুড়ে দেওয়া হয়, যিনি তার মুষ্টিবদ্ধ হাত তুলে ধরেছিলেন।

এ ধরনের এআই-নির্মিত ছবি ব্যবহার করে প্রচার চালানো বর্তমানে একটি ক্রমবর্ধমান প্রবণতা। বিশেষ করে গত বছরের ইউরোপীয় নির্বাচনের সময় এটি বেশ আলোচনায় আসে, যখন অভিবাসন নিয়ে ভয় বা ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর মতো নেতাদের হেয় করার উদ্দেশ্যে ছবিগুলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল।

রোমানো আরও বলেন, ‘এরপর ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং ইলন মাস্কের সঙ্গে আমেরিকান নির্বাচন এই প্রবণতাকে স্বাভাবিক করে তোলে। বর্তমানে আমরা দেখছি, চরম-ডানপন্থী দলগুলো কেবল প্রচারের জন্য জাল ছবি তৈরি করাই অব্যাহত রাখেনি, বরং এআই সরঞ্জামগুলোর মাধ্যমে বিষয়বস্তুর গুণগত মান উন্নত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তারা এর ব্যবহারও বাড়িয়েছে, যা উদ্বেগের কারণ।’

যদিও সামাজিক মাধ্যম প্ল্যাটফর্মগুলোর এই ঝুঁকিগুলো মোকাবিলার পদক্ষেপ নেওয়ার কথা, যেমন – ছবিগুলো এআই দ্বারা তৈরি হয়েছে, তা উল্লেখ করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তবে বাস্তবে, এই ব্যবস্থাটি প্রায়শই কার্যকর হয় না।

যদি ইতালির যোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা (এজিওকম) বিতর্কিত বিষয়বস্তুকে আপত্তিকর মনে করে, তবে তারা পোস্টগুলো সরানোর, অ্যাকাউন্টগুলো বাতিল করার এবং সামাজিক মাধ্যম প্ল্যাটফর্মগুলোকে ব্যবহারকারীর আচরণ নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হওয়ার জন্য জরিমানা করার নির্দেশ দিতে পারে।

তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *