ইতালিতে ছাত্রী হত্যার ঘটনা: ফুঁসছে জনতা, প্রতিরোধের ডাক!

ইতালিতে দুই তরুণীর হত্যাকাণ্ডের ঘটনা দেশটিতে ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে।

ঘটনা দুটির প্রতিবাদে বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভ হয়েছে, সেই সাথে নারী নির্যাতন বন্ধে একটি ‘সাংস্কৃতিক বিদ্রোহ’ গড়ে তোলার ডাক দেওয়া হয়েছে। চলতি বছরের শুরু থেকে এ পর্যন্ত ইতালিতে নারী বিদ্বেষী হত্যাকাণ্ডের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১-তে।

প্রথম ঘটনাটি ঘটে সিসিলির মেসিনা শহরে।

২২ বছর বয়সী সারা ক্যাম্পানেলা নামের এক বায়োমেডিকেল ছাত্রী বাসের জন্য অপেক্ষা করার সময় ছুরিকাঘাতের শিকার হন। গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে নেওয়ার পথে তিনি মারা যান।

এই ঘটনায় মেসিনার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ২৭ বছর বয়সী স্তেফানো আর্জেন্টিনোকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পুলিশের কাছে তিনি হত্যার কথা স্বীকার করেছেন।

তদন্তে জানা গেছে, ক্যাম্পানেলার ওপর আর্জেন্টিনো দীর্ঘদিন ধরে কুপ্রস্তাব দিত এবং উত্ত্যক্ত করত।

অন্যদিকে, রাজধানী রোমে ২২ বছর বয়সী ইলারিয়া সুলা নামের এক পরিসংখ্যানের ছাত্রীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে একটি স্যুটকেসের ভেতর থেকে। তিনি গত ২৩শে মার্চ থেকে নিখোঁজ ছিলেন।

ধারণা করা হচ্ছে, তাকে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করা হয়েছে। এই ঘটনায় ইলারিয়ার প্রাক্তন প্রেমিক ২৩ বছর বয়সী মার্ক স্যামসনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে পুলিশ।

মেসিনা ও রোম সহ ইতালির অন্যান্য শহরে, যেমন- বোলোনিয়াতেও, এই হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে বিক্ষোভ হয়েছে।

নিহত তরুণীদের স্মরণে শোকসভা ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সাপিয়েঞ্জা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেক্টর আন্তোনেলা পোলিমেনি এই হত্যাকাণ্ডকে ‘ভয়াবহ ও নৃশংস নারী বিদ্বেষ’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের আর চুপ করে বসে থাকার সুযোগ নেই’।

ইতালির সরকার এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে।

এই ঘটনার জেরে দেশটিতে নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে নতুন করে রাজনৈতিক বিতর্ক শুরু হয়েছে।

সেন্টার-রাইট দল ‘নই মডেরাতি’-র সেক্রেটারি মারিয়া কারফাগনা একটি ‘সাংস্কৃতিক বিদ্রোহ’ ঘোষণার আহ্বান জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, ‘আইনগত দিক থেকে ইতালি অন্যান্য দেশ থেকে এগিয়ে থাকলেও, সংস্কৃতিগতভাবে আমরা এখনও সেই গতিতে এগোতে পারিনি।

তাই, সবার সম্মিলিত বিদ্রোহ প্রয়োজন।’

উল্লেখ্য, ২০২৩ সালে ইতালিতে ১১৩ জন নারী ‘ফেমিসাইড’-এর শিকার হয়েছিলেন।

এদের মধ্যে ৯৯ জন আত্মীয়, সঙ্গী অথবা প্রাক্তন সঙ্গীর হাতে নিহত হন।

‘ফেমিসাইড’ শব্দটির অর্থ হলো, কোনো নারীকে লিঙ্গবৈষম্যের কারণে হত্যা করা।

নারী নির্যাতন বন্ধে ইতালি সরকার বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে।

সম্প্রতি, সরকার ‘ফেমিসাইড’-এর সংজ্ঞা অন্তর্ভুক্ত করে একটি খসড়া আইন অনুমোদন করেছে।

এই আইনে, নারী বিদ্বেষী হত্যাকাণ্ডের জন্য যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে।

এছাড়া, নিপীড়ন, যৌন সহিংসতা এবং ‘প্রতিশোধমূলক পর্নোগ্রাফি’র মতো অপরাধের সাজা বাড়ানোরও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

বিরোধী দল ডেমোক্রেটিক পার্টির এমপিরা মনে করেন, নারীদের ওপর এই ‘নিরন্তর সহিংসতা’ বন্ধ করতে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া দরকার, যার শুরুটা হতে পারে স্কুলগুলোতে সচেতনতা বাড়ানোর মাধ্যমে।

তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *