সাহায্য বন্ধ: আইভরি কোস্টের সীমান্তে বাড়ছে জঙ্গি, বাড়ছে বিপদ!

পশ্চিম আফ্রিকার দেশ আইভরি কোস্ট (Côte d’Ivoire)-এ চরমপন্থী সংগঠনগুলোর প্রভাব বিস্তারের আশঙ্কার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র তাদের সাহায্য বন্ধ করে দিয়েছে। আল-কায়েদা এবং ইসলামিক স্টেট (আইএস)-এর মতো জঙ্গিগোষ্ঠীর উত্থানের কারণে দেশটির সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে অস্থিরতা বাড়ছে।

খবর অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপ সন্ত্রাসবিরোধী কার্যক্রমকে দুর্বল করে দেবে এবং স্থানীয় জনগণের জীবনযাত্রায় খারাপ প্রভাব ফেলবে।

সাহারা মরুভূমির দক্ষিণাঞ্চলে অবস্থিত সাহেল (Sahel) অঞ্চলে জঙ্গি তৎপরতা বেড়ে যাওয়ায় আইভরি কোস্টের সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোতে চরমপন্থীদের আনাগোনা বেড়েছে। মালিতে ২০১৫ সালে জঙ্গি হামলার পর থেকে যুক্তরাষ্ট্র আইভরি কোস্টের এই অঞ্চলে সন্ত্রাস দমনে প্রায় ২০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার সাহায্য করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল।

কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসনের সময় বৈদেশিক সাহায্য কমানোর সিদ্ধান্তের কারণে সেই সহায়তা এখন বন্ধ হয়ে গেছে। এর ফলে স্থানীয় বাসিন্দারা চরম উদ্বেগের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন।

আইভরি কোস্টের উত্তরাঞ্চলের একটি গ্রাম কিম্বিরিলা-নর্ড। সেখানকার বাসিন্দারা জানিয়েছেন, আগে তাঁরা যুক্তরাষ্ট্রের আর্থিক সহায়তায় বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ করছিলেন।

  • এর মধ্যে ছিল যুবকদের প্রশিক্ষণ
  • গবাদি পশুর চারণভূমি তৈরি
  • এবং তথ্য আদান-প্রদানের ব্যবস্থা।

কিন্তু সাহায্য বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তাঁরা এখন চরমপন্থীদের হামলার ঝুঁকিতে রয়েছেন। গ্রামের প্রধান ইয়াকুবা ডুম্বিয়া (৭৮) জানান, “দারিদ্র্য ও ক্ষুধার কারণেই যুবকেরা জঙ্গিবাদের দিকে আকৃষ্ট হয়।

আগে আমাদের এলাকা নিরাপদ ছিল, কিন্তু এখন আমরা শঙ্কিত।”

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভূমি ও সম্পদের অভাব, প্রান্তিকীকরণ এবং অর্থনৈতিক সুযোগের অভাবে স্থানীয় জনগণের মধ্যে চরমপন্থী গোষ্ঠীগুলোর প্রতি সমর্থন বাড়ছে।

জাতিসংঘের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, “আইভরি কোস্ট সাহেল অঞ্চলের সন্ত্রাসী হুমকির বিরুদ্ধে এখনো প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে।

সীমান্ত এলাকার বাসিন্দাদের সহায়তা করা না হলে, সামান্য একটি ঘটনাও তাদের চরমপন্থীদের দিকে ঠেলে দিতে পারে।”

যুক্তরাষ্ট্রের বৈদেশিক সাহায্য বন্ধের ফলে এখন কিম্বিরিলা-নর্ডের বাসিন্দারা চরম দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন।

তাঁদের আশঙ্কা, সাহায্য বন্ধ হওয়ার কারণে এলাকার উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হবে এবং চরমপন্থীদের বিরুদ্ধে লড়াই দুর্বল হয়ে পড়বে।

স্থানীয় এক বাসিন্দা সিফাতা বেরতে (২৩) জানান, তিনি আগে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় প্রশিক্ষণ পেয়েছিলেন এবং এখন একটি কর্মশালায় কাজ করেন।

সাহায্য বন্ধ হয়ে গেলে তাঁর মতো আরও অনেকের জীবন কঠিন হয়ে পড়বে।

যুক্তরাষ্ট্রের আফ্রিকা কমান্ড (US Africa Command) আইভরি কোস্টের সন্ত্রাসবিরোধী ও সীমান্ত নিরাপত্তা প্রকল্পে এর আগে ৬৫ মিলিয়ন ডলারের বেশি বিনিয়োগ করেছে।

তবে সাহায্য কমানোর ফলে এই কার্যক্রমগুলোও ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। আইভরি কোস্টের সরকারও বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্প হাতে নিয়েছে, কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের সাহায্য বন্ধ হওয়ায় সেই কাজেও ব্যাঘাত সৃষ্টি হতে পারে।

আইভরি কোস্টের সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে চরমপন্থী গোষ্ঠীর বিস্তার একটি গুরুতর উদ্বেগের বিষয়। যুক্তরাষ্ট্রের সাহায্য বন্ধের ফলে সেখানকার মানুষের জীবন আরও কঠিন হয়ে উঠবে এবং সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াই দুর্বল হবে।

তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *