জ্যাকির সামরিক জীবনের পাতা গায়েব: তোলপাড়!

যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট থেকে বিশিষ্ট বেসবল খেলোয়াড় জ্যাকি রবিনসনের সামরিক জীবনের ওপর লেখা একটি নিবন্ধ সরিয়ে ফেলা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, এই পদক্ষেপটি সরকারের ‘বৈচিত্র্য, সমতা ও অন্তর্ভুক্তি’ (Diversity, Equity, and Inclusion – DEI) বিষয়ক নীতিমালার সঙ্গে সম্পর্কিত নিবন্ধগুলো সরানোর প্রক্রিয়ার অংশ।

জ্যাকুই রবিনসন শুধু একজন ক্রীড়াবিদ ছিলেন না, বরং বর্ণবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত ছিলেন। ১৯৪৭ সালে তিনি মেজর লীগ বেসবলে কৃষ্ণাঙ্গ খেলোয়াড়দের অংশগ্রহণের পথ খুলে দেন, যা ছিল যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। তাঁর এই অবদানের জন্য তিনি সম্মানিত হয়েছেন এবং ক্রীড়াঙ্গনে ‘হল অফ ফেইম’-এর সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে তিনি মার্কিন সেনাবাহিনীতে দায়িত্ব পালন করেন।

জানা গেছে, সম্প্রতি পেন্টাগন তাদের ওয়েবসাইট থেকে ডিইআই বিষয়ক বিভিন্ন তথ্য সরিয়ে ফেলছে। এর অংশ হিসেবেই রবিনসনের সামরিক জীবনের ওপর লেখা নিবন্ধটিও ওয়েবসাইট থেকে সরিয়ে ফেলা হয়েছে। শুধু রবিনসনই নন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে আইও জিমা দ্বীপে যুক্তরাষ্ট্রের পতাকা উত্তোলনের ছবিটিতে থাকা আদিবাসী আমেরিকান সেনা ইরা হেইজের জীবনী এবং কোড টকারদের (যারা বিশেষ ভাষায় বার্তা আদান প্রদানে সাহায্য করতেন) নিয়েও লেখা কিছু নিবন্ধও সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।

তবে, এই ধরনের পদক্ষেপের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে অনেকে সোচ্চার হয়েছেন। উদাহরণস্বরূপ, কৃষ্ণাঙ্গ ‘মেডেল অফ অনার’ বিজয়ী মেজর জেনারেল চার্লস ক্যালভিন রজার্সের নিবন্ধ সরিয়ে ফেলার পর সমালোচনার মুখে তা পুনরায় ওয়েবসাইটে যুক্ত করা হয়।

প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র শন পার্নেল এই সিদ্ধান্তের পক্ষে যুক্তি দিয়ে বলেছেন, প্রেসিডেন্ট এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী উভয়েই ডিইআই বিষয়ক নীতির ব্যাপারে তাঁদের অবস্থান পরিষ্কার করেছেন। তাঁদের মতে, প্রতিরক্ষা বিভাগে ‘বৈচিত্র্যই আমাদের শক্তি’ – এমন ধারণা সঠিক নয়।

জ্যাকুই রবিনসনের সামরিক জীবন বেশ গুরুত্বপূর্ণ ছিল। ১৯৪৩ সালে তিনি সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট হিসেবে কমিশন লাভ করেন এবং একটি ট্যাংক রেজিমেন্টে যোগ দেন। তবে ১৯৪৪ সালে সেনাবাহিনীর একটি বাসের চালক তাঁকে পেছনে বসতে বললে তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন।

এর ফলস্বরূপ তাঁর কোর্ট মার্শল হয়, যদিও পরে তিনি নির্দোষ প্রমাণিত হন। এরপর তিনি অ্যাথলেটিক্স কোচের দায়িত্ব পালন করেন এবং ১৯৪৪ সালের নভেম্বরে সম্মানজনকভাবে সেনাবাহিনী থেকে অবসর গ্রহণ করেন।

এখানে উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এক সময় জ্যাকি রবিনসনকে নিয়ে ইতিবাচক মন্তব্য করেছিলেন। গত মাসে তিনি বলেছিলেন, রবিনসনের একটি মূর্তি তৈরি করে জাতীয় বীরদের বাগানে স্থাপন করা হবে।

তিনি রবিনসনকে ‘কালো কিংবদন্তি, চ্যাম্পিয়ন, যোদ্ধা এবং দেশপ্রেমিক’ হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন, যাঁরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করেছেন।

তথ্য সূত্র: The Guardian

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *