আগুনে জীবন, গানে মৃত্যু: জ্যাকসন সি ফ্র্যাঙ্কের বেদনাদায়ক গল্প!

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের লোকসংগীত শিল্পী জ্যাকসন সি ফ্রাঙ্ক-এর জীবন ছিল এক গভীর ট্র্যাজেডির প্রতিচ্ছবি। শৈশবে ভয়াবহ এক অগ্নিকাণ্ডের শিকার হয়ে তিনি শারীরিক ও মানসিক দিক থেকে গুরুতর আঘাত পান। এরপর জীবনের পথচলায় দারিদ্র্য, মানসিক বৈকল্য এবং একাকীত্বের সঙ্গে লড়াই করে গেছেন এই শিল্পী।

তার সঙ্গীতজীবন স্বল্প সময়ের হলেও, পরবর্তীতে তা নতুন করে মানুষের কাছে পরিচিতি লাভ করে। সম্প্রতি তার জীবন ও সঙ্গীত নিয়ে নির্মিত একটি প্রামাণ্যচিত্র মুক্তি পেতে যাচ্ছে, যা বিশ্বজুড়ে তার কাজকে আরও বেশি পরিচিত করবে।

১৯৫৪ সালে, নিউ ইয়র্কের বাফেলোর কাছে ফ্রাঙ্কের স্কুলে এক ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ঘটে। এই দুর্ঘটনায় তার ১৫ জন সহপাঠীর মর্মান্তিক মৃত্যু হয় এবং ফ্রাঙ্ক নিজেও শরীরের বিভিন্ন অংশে মারাত্মকভাবে ঝলসে যান।

এই ঘটনার স্মৃতি তাকে সারা জীবন তাড়া করে ফিরেছে। শরীরের ক্ষত সারিয়ে তোলার দীর্ঘ প্রক্রিয়ার পাশাপাশি, বন্ধুদের হারানোর গভীর শোক তাকে মানসিকভাবেও বিপর্যস্ত করে তোলে। চিকিৎসকরা ফ্রাঙ্কের শরীরের ক্ষতিগ্রস্ত হাড়ের সংযোগ মেরামতের জন্য অস্ত্রোপচার করেন, যা তার জন্য ছিল অসহনীয় কষ্টের কারণ।

চিকিৎসারত অবস্থায় হাসপাতালে থাকাকালীন সময়ে, এক সঙ্গীত শিক্ষক তাকে একটি অ্যাকোস্টিক গিটার ধরিয়ে দেন। গিটার বাজানো শেখার মাধ্যমে ফ্রাঙ্ক যেন তার ভেতরের কষ্টগুলো প্রকাশ করার একটি পথ খুঁজে পান। গিটার বাজানোর এই কৌশলই তার সঙ্গীতকে একটি বিশেষত্ব এনে দেয়।

তার গানের কথা এবং সুরে গভীর যন্ত্রণা ও মানবিক অনুভূতির প্রকাশ ছিল সুস্পষ্ট। “ইয়োলো ওয়ালস” (Yellow Walls) ও “মার্লিন”-এর মতো গানে তিনি তার ব্যক্তিগত শোক ও অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেন।

ফ্রাঙ্কের সঙ্গীতজীবন শুরু হয় ১৯৬০-এর দশকে। পল সাইমনের (Paul Simon) মতো বিখ্যাত সঙ্গীতজ্ঞের তত্ত্বাবধানে তিনি তার অ্যালবাম তৈরি করেন। এই অ্যালবামে “ব্লুজ রান দ্য গেম” (Blues Run the Game) গানটি বিশেষভাবে জনপ্রিয়তা লাভ করে।

এই অ্যালবামের মাধ্যমে তিনি পরিচিতি পেলেও, পরবর্তীতে আর্থিক অনটন ও মানসিক অস্থিরতার কারণে তার জীবন কঠিন হয়ে পড়ে।

ফ্রাঙ্কের জীবন ছিল সংগ্রাম ও বেদনার এক দীর্ঘ কাহিনী। অল্প বয়সেই তিনি প্যারানয়েড স্কিজোফ্রেনিয়ায় (paranoid schizophrenia) আক্রান্ত হন। এক সময় তিনি গৃহহীন হয়ে পড়েন এবং রাস্তায় ভিক্ষা করতে বাধ্য হন।

১৯৯৯ সালে ৫৬ বছর বয়সে নিউমোনিয়া ও হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি মারা যান।

জ্যাকসন সি ফ্রাঙ্কের জীবন নিয়ে নির্মিত “ব্লুজ রান দ্য গেম: দ্য স্ট্রেঞ্জ টেল অফ জ্যাকসন সি ফ্রাঙ্ক” (Blues Run the Game: The Strange Tale of Jackson C Frank) শীর্ষক প্রামাণ্যচিত্রটি তার জীবনের অজানা দিকগুলো তুলে ধরে। ফ্রান্সের চলচ্চিত্র নির্মাতা ড্যামিয়েন এমেই ডু্পন্ট (Damien Aimé Dupont) এই চলচ্চিত্রটি নির্মাণ করেছেন।

এছাড়াও, লেখক জিম অ্যাবট (Jim Abbott) ফ্রাঙ্কের জীবন ও সঙ্গীত নিয়ে “জ্যাকসন সি ফ্রাঙ্ক: দ্য ক্লিয়ার হার্ড লাইট অফ জিনিয়াস” (Jackson C Frank: The Clear Hard Light of Genius) নামে একটি বই লিখেছেন।

ফ্রাঙ্কের সঙ্গীত আজও বিভিন্ন সিনেমা ও টেলিভিশন অনুষ্ঠানে ব্যবহৃত হয়, যা প্রমাণ করে, তিনি আজও সঙ্গীতপ্রেমীদের মাঝে বেঁচে আছেন। তার গানগুলো মানুষের হৃদয়ে গভীর রেখাপাত করে, যা তাকে অমর করে রাখবে।

তথ্য সূত্র: The Guardian

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *