যুক্তরাষ্ট্রে গাড়ি পাঠানো বন্ধ: উদ্বেগে জাগুয়ার ল্যান্ড রোভার!

যুক্তরাষ্ট্রে গাড়ি রপ্তানি বন্ধ করছে জাগুয়ার ল্যান্ড রোভার, কারণ ট্রাম্পের শুল্কনীতি

যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে গাড়ি পাঠানো আপাতত বন্ধ করে দিয়েছে বিলাসবহুল গাড়ি প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান জাগুয়ার ল্যান্ড রোভার (Jaguar Land Rover)। যুক্তরাজ্যের এই বিখ্যাত গাড়ি প্রস্তুতকারক সংস্থাটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গাড়ি রপ্তানি বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

এর মূল কারণ হলো, যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আরোপ করা ২৫ শতাংশ শুল্ক।

এই পদক্ষেপটি নেওয়া হয়েছে মূলত স্বল্প মেয়াদে, যখন সংস্থাটি নতুন বাণিজ্য নীতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে তাদের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা তৈরি করছে।

শনিবার (স্থানীয় সময়) এক বিবৃতিতে কোম্পানিটি জানায়, যুক্তরাষ্ট্র তাদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বাজার। নতুন বাণিজ্য শর্তগুলো মোকাবিলায় তারা তাদের অংশীদারদের সঙ্গে কাজ করছে এবং এপ্রিল মাস থেকে কিছুদিনের জন্য গাড়ি পাঠানো বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, জাগুয়ার ল্যান্ড রোভারের এই সিদ্ধান্তের পথে অন্যান্য ব্রিটিশ গাড়ি প্রস্তুতকারক কোম্পানিগুলোও হাঁটতে পারে।

কারণ, এরই মধ্যে অভ্যন্তরীণ বাজারে চাহিদা কমে যাওয়া এবং বৈদ্যুতিক গাড়ির দিকে পরিবর্তনের কারণে এই শিল্পটি বেশ চাপের মধ্যে রয়েছে।

বার্মিংহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায়িক অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এবং অটোমোবাইল শিল্পের বিশেষজ্ঞ ডেভিড বেইলি বলেন, “আমি মনে করি, অন্যান্য উৎপাদকরাও পরিস্থিতি বিবেচনা করে এমন পদক্ষেপ নিতে পারে।”

যুক্তরাজ্যের মোটর ম্যানুফ্যাকচারারস অ্যান্ড ট্রেডার্স সোসাইটি (SMMT)-এর তথ্য অনুযায়ী, গত বছর যুক্তরাজ্যে গাড়ির উৎপাদন ১৩.৯ শতাংশ কমে ৭,৭৯,৫৮৪টিতে দাঁড়িয়েছে।

উৎপাদিত গাড়ির মধ্যে ৭৭ শতাংশের বেশি রপ্তানি করা হয়।

যুক্তরাজ্যের কারখানাগুলো থেকে নিসান ক্যাসকাই (Nissan Qashqai), জুক (Juke), বিএমডব্লিউ মিনি (BMW Mini), টয়োটা করোলা (Toyota Corolla)-এর মতো গাড়ি, সেই সঙ্গে ল্যান্ড রোভার এবং জাগুয়ার মডেলগুলোও রপ্তানি করা হয়।

ব্রিটিশ গাড়ি নির্মাতারা অবশ্য শুল্কের প্রভাব কমাতে এরই মধ্যে কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে।

শুল্ক আরোপের আগে তারা যুক্তরাষ্ট্রে তাদের গাড়ির মজুত তৈরি করতে শুরু করে।

এসএসএমটি-র হিসাব অনুযায়ী, গত ডিসেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি আগের বছরের তুলনায় ৩৮.৫ শতাংশ, জানুয়ারিতে ১২.৪ শতাংশ এবং ফেব্রুয়ারিতে ৩৪.৬ শতাংশ বেড়েছে।

যুক্তরাজ্যের অর্থনীতিতে গাড়ির একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।

সরকারি হিসাব অনুযায়ী, গত বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এক বছরে যুক্তরাজ্য ৮.৩ বিলিয়ন পাউন্ড (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১ লাখ ১৫ হাজার কোটি টাকা) মূল্যের গাড়ি যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করেছে।

তবে, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে গাড়ির অবদান তুলনামূলকভাবে কম।

দুই দেশের বাণিজ্যে সেবার (service) অংশ অনেক বেশি।

গত বছর সেপ্টেম্বর পর্যন্ত যুক্তরাজ্য যুক্তরাষ্ট্রকে ১৭৯.৪ বিলিয়ন পাউন্ড (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ২৫ লাখ কোটি টাকা) মূল্যের পণ্য ও সেবা রপ্তানি করেছে, যার মধ্যে ৬৮.২ শতাংশ ছিল সেবা খাত।

এই পরিস্থিতিতে, ব্রিটিশ গাড়ি শিল্পের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে।

বিশেষ করে, শুল্কের কারণে গাড়ির দাম বাড়লে তা বিক্রিকে আরও কঠিন করে তুলবে।

ফলে, যুক্তরাজ্যের অর্থনীতিতে এর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব পড়তে পারে।

তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *