যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক এফবিআই প্রধান জেমস কোমিকে মিথ্যা তথ্য প্রদান এবং কংগ্রেসের কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে বুধবার আদালতে হাজির করা হবে। প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক বিরোধের জের ধরে এই মামলাটিকে অনেকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হিসেবে দেখছেন।
২০১৭ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এফবিআই পরিচালক জেমস কোমিকে বরখাস্ত করেন। কোমি তখন ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারণার বিষয়ে তদন্ত করছিলেন। বুধবার, ভার্জিনিয়ার আলেকজান্দ্রিয়ায় একটি ফেডারেল আদালতে কোমিকে হাজির করা হবে।
অভিযোগ প্রমাণিত হলে তার সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের কারাদণ্ড হতে পারে।
অভিযোগের সূত্রপাত ২০২০ সালের কংগ্রেসের শুনানিতে কোমির দেওয়া সাক্ষ্য থেকে। অভিযোগ উঠেছে, তিনি একটি গোপন তথ্য ফাঁসের বিষয়ে মিথ্যা তথ্য দিয়েছিলেন। সংবাদ মাধ্যমের রিপোর্টে এই তথ্য প্রকাশিত হওয়ার পরেই এমনটা হয়।
অভিযোগনামায় বলা হয়েছে, কোমি সাক্ষ্য দিয়েছিলেন যে তিনি “অন্য কাউকে সংবাদ প্রতিবেদনে বেনামী সূত্র হওয়ার অনুমতি দেননি।” এই বক্তব্যটি মিথ্যা ছিল।
২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রাশিয়ার হস্তক্ষেপ নিয়ে এফবিআইয়ের তদন্তের কারণে ট্রাম্প তার মেয়াদকালের প্রথম কয়েক মাসের মধ্যেই কোমিকে বরখাস্ত করেন। সেপ্টেম্বরে, প্রেসিডেন্ট পাম বন্ডিকে উদ্দেশ্য করে একটি সামাজিক মাধ্যম পোস্টে কোমি সহ তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বিচার বিভাগকে প্রকাশ্যে আহ্বান জানান।
ট্রাম্প তার পোস্টে লিখেছিলেন, “আমরা আর দেরি করতে পারি না, এটা আমাদের সম্মান ও বিশ্বাসযোগ্যতাকে ধ্বংস করছে।” তিনি আরও লেখেন, “তারা আমাকে দুবার অভিশংসন করেছে এবং (৫ বার!) অভিযুক্ত করেছে, তাও কোনও কারণ ছাড়াই। ন্যায়বিচার এখনই প্রতিষ্ঠিত হওয়া উচিত।
বুধবারের শুনানিতে কোমি তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য দেবেন বলে আশা করা হচ্ছে। এই মামলার শুনানির তারিখ এবং সময় নির্ধারণ করতে পারেন বিচারক।
কোমি এক ভিডিও বার্তায় বলেন, “বিচার বিভাগের জন্য আমার হৃদয় ভেঙে গেছে, তবে ফেডারেল বিচার ব্যবস্থার উপর আমার গভীর আস্থা আছে এবং আমি নির্দোষ।” তিনি আরও বলেন, “আসুন, বিচার হোক। এবং বিশ্বাস রাখুন।
কোমির বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা বিচার বিভাগের জন্য কঠিন ছিল। জানা যায়, কোমির বিরুদ্ধে ফৌজদারি অভিযোগ আনার জন্য চাপ দেওয়ায় একজন অন্তর্বর্তীকালীন মার্কিন অ্যাটর্নি পদত্যাগ করেছিলেন।
ট্রাম্প তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ, নিউইয়র্কের অ্যাটর্নি জেনারেল লেটিটিয়া জেমসের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে চেয়েছিলেন।
কোমির বিরুদ্ধে মামলা পরিচালনার জন্য, ট্রাম্প হোয়াইট হাউসের একজন সহযোগী লিন্ডসে হ্যালিগানকে ভার্জিনিয়ার পূর্বাঞ্চলীয় জেলার অন্তর্বর্তীকালীন মার্কিন অ্যাটর্নি হিসেবে নিয়োগ করেন।
হ্যালিগান, যিনি আগে কোনো প্রসিকিউটর ছিলেন না, তিনি সফলভাবে কোমির বিরুদ্ধে আনা তিনটি অভিযোগের মধ্যে দুটি প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছেন।
তিনি নর্থ ক্যারোলিনার দুইজন ফেডারেল প্রসিকিউটরকে এই মামলায় সহায়তা করার জন্য নিয়ে এসেছেন: নাথানিয়েল টাইলর লেমন্স এবং গ্যাব্রিয়েল ডিয়াজ।
এই বছরের শুরুতে, কোমিকে সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল। এমনকি তাকে সিক্রেট সার্ভিসের ওয়াশিংটন ফিল্ড অফিসেও নেওয়া হয়েছিল।
কারণ, তিনি সমুদ্র সৈকতে “৮৬ ৪৭” সংখ্যাগুলো লিখে একটি ছবি পোস্ট করেছিলেন। এই সংখ্যাগুলোর মাধ্যমে সম্ভবত ট্রাম্পের ক্ষমতা থেকে অপসারণের ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছিল। যদিও কোমির বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের সঙ্গে এই সামাজিক মাধ্যম পোস্টের কোনো সম্পর্ক নেই।
মামলার ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ : প্রসিকিউটররা কোমির বিরুদ্ধে অভিযোগ আনতে পারলেও, তাদের জন্য পথটা কঠিন হতে পারে।
কারণ, ট্রাম্প কোমি সম্পর্কে যে সমস্ত বক্তব্য দিয়েছেন, তা সম্ভবত তারা ব্যবহার করতে পারেন। ট্রাম্পের আইনজীবীরাও তাদের প্রাক্তন প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে আনা মামলাগুলোতে একই যুক্তি ব্যবহার করেছিলেন।
হ্যালিগানের নিয়োগ নিয়েও প্রশ্ন উঠতে পারে। রিপাবলিকানদের কিছু আইনজীবী মনে করেন, পূর্বাঞ্চলীয় জেলার অন্তর্বর্তীকালীন মার্কিন অ্যাটর্নি হিসেবে হ্যালিগানের নিয়োগ বৈধ ছিল না, কারণ সিনেট কর্তৃক নিশ্চিত না হওয়ায় তার মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়েছিল।
তথ্য সূত্র: সিএনএন