মার্কিন অর্থনীতির সম্ভাব্য মন্দা এবং উচ্চ মূল্যস্ফীতির (stagflation) আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশ্বখ্যাত ব্যাংক জেপি মর্গান চেজের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) জেমি ডিমন। তার মতে, যুক্তরাষ্ট্রের বিশাল বাজেট ঘাটতি, বাণিজ্য যুদ্ধের কারণে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্যে অচলাবস্থা এবং সামরিকীকরণের প্রবণতা—এগুলো সবই মূল্যস্ফীতি বাড়িয়ে দিচ্ছে।
এই পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি কঠিন পরিস্থিতির দিকে যেতে পারে, যা বাংলাদেশের জন্য উদ্বেগের কারণ হতে পারে।
স্ট্যাগফ্লেশন হলো এমন এক পরিস্থিতি, যেখানে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কমে যায় বা স্থবির হয়ে যায়, কিন্তু একই সঙ্গে মূল্যস্ফীতিও বাড়তে থাকে। এমন অবস্থায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর জন্য সুদের হার বাড়ানো বা কমানোর মতো পদক্ষেপ নেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে।
সুদের হার বাড়ালে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনা যেতে পারে, কিন্তু এর ফলে অর্থনৈতিক কার্যক্রম আরও কমে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে। আবার, সুদের হার কমালে অর্থনীতির গতি বাড়ানো যেতে পারে, তবে এতে মূল্যস্ফীতি আরও বাড়তে পারে।
জেমি ডিমনের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কর হ্রাসের প্রস্তাব এবং বাণিজ্য শুল্কের প্রভাব এখনো পুরোপুরি অনুভূত হয়নি। তিনি মনে করেন, বাজার এই ঝুঁকিগুলো সম্পর্কে যথেষ্ট সচেতন নয়।
সম্প্রতি, আন্তর্জাতিক ঋণমান সংস্থা মুডি’স যুক্তরাষ্ট্রের ঋণমান কমিয়ে দিয়েছে, যা দেশটির ক্রমবর্ধমান ঋণ বোঝা নির্দেশ করে।
যুক্তরাষ্ট্রের এই অর্থনৈতিক সংকট বাংলাদেশের জন্য বেশ উদ্বেগের কারণ হতে পারে। কারণ, এর সরাসরি প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে।
উদাহরণস্বরূপ, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকসহ বিভিন্ন পণ্যের রপ্তানি কমে যেতে পারে, যা দেশের অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। এছাড়াও, যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত অনেক বাংলাদেশি রেমিট্যান্স (প্রবাসী আয়) পাঠান, যা দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
স্ট্যাগফ্লেশনের কারণে যদি সেখানে অর্থনৈতিক মন্দা দেখা যায়, তাহলে এই রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে যেতে পারে।
এছাড়াও, বিশ্ববাজারে পণ্যের দাম বাড়লে, তার সরাসরি প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের বাজারে। কারণ, আমাদের আমদানি করা পণ্যের দাম বেড়ে যাবে, যা দেশের বাজারে মূল্যস্ফীতি আরও বাড়িয়ে দেবে।
এর ফলে জীবনযাত্রার খরচ বাড়বে এবং সাধারণ মানুষের কষ্ট বাড়বে। বিদেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রেও দেখা দিতে পারে শঙ্কা।
অর্থনৈতিক অস্থিরতা বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ভীতি তৈরি করতে পারে, ফলে বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগ কমে যেতে পারে।
জেমি ডিমনের সতর্কবার্তা এবং মুডি’সের ঋণমান কমানোর ফলে বাংলাদেশের নীতিনির্ধারকদের জন্য এখন সতর্ক হওয়ার সময় এসেছে। যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির গতিবিধির দিকে তীক্ষ্ণ নজর রাখতে হবে এবং দেশের অর্থনীতিকে স্থিতিশীল রাখতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।
বাণিজ্য চুক্তি এবং অর্থনৈতিক সম্পর্কগুলো নতুন করে পর্যালোচনা করে, দেশের স্বার্থ রক্ষার জন্য কৌশল নির্ধারণ করা প্রয়োজন।
তথ্য সূত্র: সিএনএন