আতঙ্কে বাজার! ডাইমনের সতর্কবার্তা, শীঘ্রই বড় বিপদ!

বিশ্ব অর্থনীতির অস্থিরতা: সতর্ক করলেন জেপি মর্গান-চেজের প্রধান নির্বাহী।

বৈশ্বিক বাণিজ্য পরিস্থিতি এবং সম্ভাব্য অর্থনৈতিক ঝুঁকি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন জেপি মর্গান-চেজের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) জেমি ডিমন। তার মতে, বাজারের বিনিয়োগকারীরা শুল্ক এবং অন্যান্য ঝুঁকির বিষয়ে ‘অস্বাভাবিক মাত্রায় আত্মতুষ্ট’ রয়েছেন।

ডিমন আশঙ্কা করছেন, বাণিজ্য যুদ্ধের কারণে মূল্যস্ফীতি বাড়তে পারে এবং এর ফলস্বরূপ ‘স্ট্যাগফ্লেশন’-এর মতো পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।

সোমবার এক বিনিয়োগকারী সম্মেলনে দেওয়া ভাষণে ডিমন বলেন, “বিভিন্ন বিষয় একত্র করলে চরম পরিস্থিতির আভাস পাওয়া যাচ্ছে। আমি মনে করি, এর ফলস্বরূপ মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ার এবং স্ট্যাগফ্লেশন দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা অনেকের ধারণার চেয়ে বেশি।”

তিনি আরও যোগ করেন, “বর্তমানে শুল্কের হার বেশ উচ্চ এবং দেশগুলো কীভাবে এর জবাব দেবে, তা এখনো স্পষ্ট নয়।” এছাড়া, বাণিজ্য অংশীদার দেশগুলো অন্য দেশগুলোর সঙ্গে চুক্তি করছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

ডিমন সতর্ক করে বলেন, কোনো দেশ চাইলেই দ্রুত তাদের অভ্যন্তরীণ উৎপাদনে ফিরতে পারবে না। একটি নতুন কারখানা তৈরি করতে কমপক্ষে তিন থেকে চার বছর সময় লাগে।

সম্প্রতি, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিভিন্ন বাণিজ্য অংশীদারদের ওপর নতুন শুল্ক আরোপ করেন, যা পরে আংশিকভাবে প্রত্যাহার করা হয়। এর কারণ হিসেবে জানা যায়, দেশগুলোকে প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনার সুযোগ দেওয়া হবে।

বর্তমানে, প্রায় ১০০টি দেশ শুল্ক নিয়ে আলোচনার প্রস্তাব দিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য কর্মকর্তাদের জন্য নতুন চুক্তি করা সময়সাপেক্ষ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে একটি চুক্তির মাধ্যমে উভয় দেশের পণ্যের ওপর থেকে শুল্ক কমানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, যা ৯০ দিনের জন্য কার্যকর হবে।

তবে, চীনের বেশিরভাগ পণ্যের ওপর এখনো ৩০ শতাংশ শুল্ক বহাল রয়েছে, যা ছোট মার্কিন ব্যবসায়ীদের জন্য বেশ উদ্বেগের কারণ।

ডিমন মনে করেন, ‘স্ট্যাগফ্লেশন’-এর ঝুঁকি অন্যদের পূর্বাভাসের দ্বিগুণ হতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে ঋণের ক্ষতি বাড়বে, যা ২০০৮ সালের আর্থিক সংকটের চেয়ে হয়তো বেশি না হলেও, অনেকের ধারণার চেয়ে খারাপ হতে পারে।

এদিকে, মুডি’স-এর রেটিং হ্রাস এবং বাজারের অস্থিরতা নিয়ে আলোচনা করা যাক। গত ১৬ই মে, মুডি’স যুক্তরাষ্ট্রের ঋণমান কমিয়েছে।

এই সিদ্ধান্তের কারণ হিসেবে তারা যুক্তরাষ্ট্রের ক্রমবর্ধমান ঋণ এবং বাজেট ঘাটতি সমাধানের ক্ষেত্রে অনড় অবস্থানকে দায়ী করেছে।

এই ঘটনার পর, মার্কিন শেয়ার বাজারে সামান্য উত্থান দেখা গেলেও, ট্রেজারি বন্ড বিক্রি হয়েছে এবং ডলারের দর পতন হয়েছে।

একই সময়ে, সোনার দাম বেড়েছে, যা বিনিয়োগকারীদের মধ্যে অনিশ্চয়তা এবং উদ্বেগের ইঙ্গিত দেয়।

এসব ঘটনার প্রেক্ষাপটে, আন্তর্জাতিক অর্থনীতিতে বাংলাদেশের জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব সৃষ্টি হতে পারে।

বিশ্ব অর্থনীতির এই অস্থিরতা বাংলাদেশের বাণিজ্য, বিশেষ করে রপ্তানি বাজারে প্রভাব ফেলতে পারে। এছাড়া, রেমিট্যান্স প্রবাহ এবং আমদানি খরচও এতে প্রভাবিত হতে পারে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশ্ব অর্থনীতির এই পরিবর্তনগুলো বাংলাদেশের জন্য একটি সতর্কবার্তা। দেশের নীতিনির্ধারকদের পরিস্থিতি বিবেচনা করে উপযুক্ত পদক্ষেপ নিতে হবে, যাতে সম্ভাব্য ঝুঁকিগুলো মোকাবিলা করা যায়।

এছাড়াও, আন্তর্জাতিক বাজারের এই পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক নীতিগুলোতেও পরিবর্তন আনা প্রয়োজন।

তথ্যসূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *