ব্রিটিশ লেখিকা জেন অস্টিনের ২৫০তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে বিশ্বজুড়ে তাঁর অনুরাগী পাঠকদের মধ্যে উৎসবের মেজাজ তৈরি হয়েছে। অষ্টাদশ শতাব্দীর এই জনপ্রিয় লেখকের সৃষ্টি আজও একইভাবে মানুষের মনে আলোড়ন তোলে।
বিশেষ করে, তাঁর উপন্যাসের প্রেক্ষাপট ও চরিত্রগুলোর প্রতি আকৃষ্ট হয়ে বহু মানুষ সেই সময়ের জীবনযাত্রার সঙ্গে একাত্মতা অনুভব করেন।
যুক্তরাজ্যের বাথ শহরে এই উপলক্ষে আয়োজিত হয়েছে দশ দিনব্যাপী এক উৎসব।
“প্রাইড এন্ড প্রেজুডিস” ও “সেন্স এন্ড সেন্সিবিলিটি”-র মতো কালজয়ী উপন্যাসগুলোর স্রষ্টার প্রতি উৎসর্গীকৃত এই উৎসবে যোগ দিতে বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে ‘জেনিট’ নামে পরিচিত অস্টিন ভক্তরা ভিড় জমাচ্ছেন।
উৎসবের একটি প্রধান আকর্ষণ হলো – ‘রিজেন্সি কস্টিউমড প্রমনেড’। যেখানে প্রায় ২ হাজার মানুষ নিজেদের তৈরি করা রিজেন্সি যুগের পোশাকে সজ্জিত হয়ে বাথের রাস্তা প্রদক্ষিণ করেন।
এই শোভাযাত্রাটি ‘রিজেন্সি পোশাক পরিহিত মানুষের বৃহত্তম সমাবেশ’ হিসেবে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডও গড়েছে।
শুধু বাথ শহরই নয়, জেন অস্টিনের জন্মস্থান হ্যাম্পশায়ারের একটি ছোট গ্রাম, স্টিভেন্টনেও উৎসবের আমেজ লেগেছে।
সেখানেও অনেকে একত্রিত হয়ে লেখকের প্রতি শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন।
এই উৎসবগুলোতে আসা মানুষেরা শুধু পাঠক নন, বরং তারা জেন অস্টিনের সৃষ্ট জগৎটাকে নিজেদের মধ্যে ধারণ করতে চান।
পোশাক তৈরি থেকে শুরু করে, সেই সময়ের নাচের ধরন – সবকিছুই তারা খুঁটিয়ে পর্যবেক্ষণ করেন।
এই প্রসঙ্গে, হ্যাম্পশায়ার রিজেন্সি ডান্সার্সের কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করা যায়।
এই দলের সদস্যরা প্রতি সপ্তাহে একত্রিত হয়ে জেন অস্টিনের উপন্যাসের দৃশ্য অবলম্বনে তৈরি করা নাচ অনুশীলন করেন।
তারা বিশেষভাবে খেয়াল রাখেন, পোশাক থেকে শুরু করে ছোট ছোট বোতাম বা সেলাইয়ের খুঁটিনাটি – সবকিছু যেন সেই সময়ের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ হয়।
তাদের মতে, এর মাধ্যমে তারা অস্টিনের সময়ের জীবনযাত্রা সম্পর্কে জানতে পারেন, যা তাদের লেখককে আরও ভালোভাবে বুঝতে সাহায্য করে।
এই উৎসবগুলোতে আসা মানুষের মধ্যে তরুণ প্রজন্মের অংশগ্রহণও উল্লেখযোগ্য।
তাদের মতে, নেটফ্লিক্সের জনপ্রিয় সিরিজ ‘ব্রিজার্টন’-এর কারণে জেন অস্টিনের কাজের প্রতি মানুষের আগ্রহ বেড়েছে।
এই সিরিজে রিজেন্সি যুগের গল্প আধুনিক আঙ্গিকে উপস্থাপন করা হয়েছে, যা তরুণদের মধ্যে ফ্যাশন এবং জীবনযাত্রার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ইন্ডিয়ানা থেকে আসা ৬৯ বছর বয়সী বনি ওয়াইজ জানিয়েছেন, তিনি ইতিমধ্যে ছয়টি জেন অস্টিন উৎসবে যোগ দিয়েছেন।
তিনি বলেন, ১৯৯৫ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত “সেন্স এন্ড সেন্সিবিলিটি”-র চলচ্চিত্রটি তাঁকে এতটাই প্রভাবিত করেছিল যে, তিনি এই লেখকের প্রতি আকৃষ্ট হন।
বনি আরও জানান, জেন অস্টিনের লেখার মাধুর্য, তাঁর হাস্যরস এবং সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি তাঁকে মুগ্ধ করে।
তিনি লেখকের জীবন থেকে অনুপ্রাণিত হন, বিশেষ করে সেই যুগে একজন নারী হিসেবে তাঁর দৃঢ়তা ও লেখক হওয়ার পথে তাঁর লড়াইকে তিনি শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন।
জেন অস্টিনের কাজের আবেদন যে আজও ফুরিয়ে যায়নি, তা এই উৎসবগুলোর মাধ্যমে স্পষ্ট।
তাঁর লেখাগুলো সময়ের গণ্ডি পেরিয়ে আজও মানুষকে আনন্দ দেয় এবং একইসঙ্গে অতীতের একটি সুন্দর জগতের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে তোলে।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস