জাপানে বেসবলের উত্থান: কিভাবে দেশটি তৈরি করলো এক ঝাঁক তারকা খেলোয়াড়
ক্রিকেট বাংলাদেশের মানুষের কাছে অত্যন্ত প্রিয় একটি খেলা। সারা বিশ্বেও বিভিন্ন ধরণের খেলা জনপ্রিয়, তাদের মধ্যে অন্যতম হলো বেসবল।
জাপানেও এই খেলাটির জনপ্রিয়তা আকাশচুম্বী। সম্প্রতি, লস অ্যাঞ্জেলেস ডজার্স এবং শিকাগো ক্লাবসের মতো দুটি আমেরিকান দল জাপানে তাদের মৌসুমের সূচনা করতে যাচ্ছে।
এই প্রেক্ষাপটে জাপানে বেসবলের উত্থান এবং এর পেছনের গল্প নিয়ে আজকের এই আলোচনা।
উনিশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে জাপানে বেসবলের আগমন ঘটে। ১৮৯৬ সালে জাপানিজ এবং আমেরিকানদের মধ্যে প্রথম আনুষ্ঠানিক খেলা অনুষ্ঠিত হয়, যা এই খেলার প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
টোকিওর একটি স্কুলের ছাত্র দল, যারা আমেরিকান ব্যবসায়ী, মিশনারি এবং ব্যবসায়ীদের নিয়ে গঠিত একটি দলের বিরুদ্ধে খেলেছিল। সেই খেলায় জাপানিজ দল জয়লাভ করে, যা জাপানে বেসবলের উন্মাদনা সৃষ্টি করে।
ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটও জাপানে বেসবলের জনপ্রিয়তার ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলেছিল। এক সময় জাপান বহির্বিশ্বের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে ‘সাকোকু’ নীতি গ্রহণ করে।
এর ফলস্বরূপ, দেশটি অন্যান্য দেশ থেকে পিছিয়ে পড়েছিল। বেসবল খেলার মাধ্যমে জাপানিরা পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক স্থাপন করতে শুরু করে এবং খেলাটি দ্রুত জাতীয় খেলা হিসেবে পরিচিতি লাভ করে।
জাপানি সংস্কৃতির সঙ্গে বেসবলের একটি বিশেষ সম্পর্ক রয়েছে। জাপানে ‘ওয়াকন ইয়োসাই’ ধারণা প্রচলিত ছিল, যার অর্থ হলো জাপানি আত্মা এবং পশ্চিমা জ্ঞান।
বেসবল খেলার ক্ষেত্রেও এই দর্শনের প্রতিফলন দেখা যায়। জাপানিরা খেলাটিকে গ্রহণ করে তাদের নিজস্ব সংস্কৃতি এবং মূল্যবোধের সঙ্গে মিশিয়ে নেয়।
খেলার শৃঙ্খলা এবং কঠোর পরিশ্রমের সংস্কৃতি জাপানি খেলোয়াড়দের মধ্যে বিশেষভাবে দেখা যায়।
১৯৩০ এর দশকে বাবে রুথ, লউ গেইরিগ এবং জিমি ফক্সের মতো বিশ্বখ্যাত খেলোয়াড়দের নিয়ে গঠিত একটি আমেরিকান দল জাপান সফর করে।
তারা জাপানি অল-স্টার দলের সঙ্গে ১৮টি ম্যাচ খেলেছিল এবং সবগুলোতেই জয়লাভ করে। এরপর, জাপানে বেসবল আরও জনপ্রিয় হয়ে ওঠে এবং নিজস্ব পেশাদার লীগ তৈরি হয়।
১৯৫০ সালে জাপানিজ বেসবল লীগ ‘নিপ্পন প্রফেশনাল বেসবল’ (এনপিবি) নামে পরিচিত হয়। ১৯৬০-এর দশকে, সাদাহারু ওহ এবং সিগেও নাগাশিমার মতো খেলোয়াড়দের আবির্ভাব হয়, যারা জাপানি বেসবলের ইতিহাসে কিংবদন্তী হয়ে আছেন।
সাদাহারু ওহ-এর ৮৬৮টি হোম রান এখনো পেশাদার বেসবলে একটি রেকর্ড।
নব্বইয়ের দশকে হিদেও নোমোর হাত ধরে জাপানি খেলোয়াড়দের এমএলবি-তে খেলার সুযোগ তৈরি হয়।
এরপর ইচিরো সুজুকি, হিদেকি মাতসুই এবং কেনটা মায়েদার মতো খেলোয়াড়রা এমএলবি-তে নিজেদের দক্ষতা প্রমাণ করেছেন।
সম্প্রতি, শোওহেই ওতানি বিশ্বজুড়ে বেসবলপ্রেমীদের মন জয় করেছেন। তিনি একইসঙ্গে একজন অসাধারণ পিচার এবং হিটার।
তার সাফল্যের কারণে জাপানের বেসবল খেলোয়াড়দের নিয়ে বিশ্বজুড়ে আগ্রহ বেড়েছে।
জাপানে বেসবলের এই সাফল্যের পেছনে রয়েছে দেশটির কঠোর পরিশ্রমের সংস্কৃতি, যা খেলোয়াড়দের আরও ভালো করতে সহায়তা করে।
তবে, জাপানি খেলোয়াড়দের এমএলবি-তে খেলার প্রবণতা বেড়ে যাওয়ায়, দেশের অভ্যন্তরে বেসবলের জনপ্রিয়তা কিছুটা কমে যাচ্ছে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন