ট্রাম্পের শুল্কের কোপে জাপান: চীন-মার্কিন দ্বন্দ্বে টোকিওর কূটনীতি!

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক নীতির গ্যাঁড়াকলে: চীন ও আমেরিকার মধ্যে ভারসাম্য রক্ষার চেষ্টা জাপানের।

আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে অস্থিরতা চলছে, আর এর মাঝে জাপানের জন্য সবচেয়ে কঠিন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। একদিকে যেমন তাদের প্রধান মিত্র যুক্তরাষ্ট্র, তেমনি চীনের সাথে রয়েছে গভীর অর্থনৈতিক সম্পর্ক।

সম্প্রতি, সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতির কারণে যুক্তরাষ্ট্র জাপানের বিভিন্ন পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপ করেছে, যা টোকিও’র জন্য উদ্বেগের কারণ। এমন পরিস্থিতিতে জাপান কিভাবে এই দুই পরাশক্তির মধ্যে তাদের অবস্থান বজায় রাখবে, সেটিই এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন।

যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য নীতি জাপানের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। ট্রাম্প প্রশাসন জাপানি পণ্য, বিশেষ করে ইস্পাত, অ্যালুমিনিয়াম এবং গাড়ির যন্ত্রাংশের ওপর শুল্ক বসিয়েছে।

এর ফলে জাপানে অনেকেই এখন যুক্তরাষ্ট্রের নির্ভরযোগ্যতা নিয়ে সন্দিহান। অন্যদিকে, চীনও চাইছে এই সুযোগ কাজে লাগাতে। বেইজিং চাইছে জাপানের সঙ্গে সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ করতে।

চীনের পক্ষ থেকে সম্প্রতি ইতিবাচক ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। এপ্রিল মাসে জাপানের একটি প্রতিনিধি দল যখন বেইজিং সফর করে, তখন চীনা কর্মকর্তারা ইঙ্গিত দেন যে, তারা যুক্তরাষ্ট্রের সাথে শুল্ক নিয়ে চলমান বিতর্কে কিছুটা সমস্যায় রয়েছেন।

এরপর তারা টোকিওর সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে আগ্রহ প্রকাশ করেন। যদিও চীন এখনো জাপানের খাদ্যপণ্যের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়নি, তবে ফুকুশিমা দাইচি পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে পরিশোধিত তেজস্ক্রিয় বর্জ্য পানি সাগরে ফেলার বিষয়ে তারা ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছে।

জাপান এবং চীনের মধ্যে সম্পর্ক ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে বেশ জটিল। অতীতে বিভিন্ন সময়ে দুই দেশের মধ্যে সীমান্ত নিয়ে বিরোধ দেখা গেছে, যা এখনো বিদ্যমান।

চীনের সামরিক শক্তি বৃদ্ধি এবং জাপানি নাগরিকদের ওপর চীনে সহিংসতার ঘটনাও দুই দেশের সম্পর্কে ফাটল ধরিয়েছে।

অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে জাপানের সম্পর্ক জো বাইডেনের আমলে আরও ঘনিষ্ঠ হয়েছে। কিন্তু বেইজিং এটিকে চীনকে নিয়ন্ত্রণে রাখার মার্কিন কৌশলের অংশ হিসেবে দেখেছে।

চীন তাই জাপানকে তাদের অতীত ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিতে বলেছে।

জাপান বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শুল্ক সংক্রান্ত বিষয়গুলো আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করতে চাইছে। একইসঙ্গে তারা চাইছে, চীন যেন যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানের মধ্যেকার সম্পর্কের সুযোগ নিতে না পারে।

জাপানের বাণিজ্য প্রতিনিধি দল ওয়াশিংটনে গিয়ে শুল্ক কমানোর জন্য জোর চেষ্টা চালাচ্ছে। জাপানের অটোমোবাইল শিল্প এই শুল্কের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তাই তারা দ্রুত একটি সমঝোতায় পৌঁছাতে চাইছে।

জাপান শুধু যুক্তরাষ্ট্র বা চীনের সঙ্গেই নয়, বরং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গেও সম্পর্ক জোরদার করতে চাইছে। এই অঞ্চলে চীন ও জাপান—উভয়েই নিজেদের প্রভাব বাড়াতে চাইছে।

ভিয়েতনাম ও ফিলিপাইনের সঙ্গে নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরও জোরদার করতে সম্প্রতি জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে ঐ দেশগুলো সফর করেছেন। সেখানে তিনি বহুপাক্ষিক মুক্ত বাণিজ্য ব্যবস্থা বজায় রাখার ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন।

বিশ্লেষকদের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক নীতির কারণে অনেক এশীয় দেশ এখন ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। তারা হয়তো চীনের দিকে ঝুঁকতে পারে, যা জাপান চায় না।

তথ্যসূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *