জাপানের এই আকর্ষণীয় পুতুলগুলির আসল রহস্য! জানলে অবাক হবেন!

জাপানের ঐতিহ্যবাহী একটি প্রতীক: দারুমা পুতুল আর কাৎসুই-জি মন্দির।

জাপানের সংস্কৃতিতে সৌভাগ্য এবং সাফল্যের প্রতীক হিসেবে পরিচিত দারুমা পুতুল। উজ্জ্বল লাল রঙের এই পুতুলগুলো শুধু জাপানেই নয়, সারা বিশ্বে তাদের স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের জন্য পরিচিত। determination এবং উচ্চাকাঙ্ক্ষার প্রতীক হিসেবেও এদের কদর রয়েছে। এই পুতুলগুলোর পেছনের গল্প, তাদের তৈরি প্রক্রিয়া এবং জাপানি সংস্কৃতিতে তাদের গুরুত্ব নিয়ে একটি বিশেষ প্রতিবেদন।

ওসাকা শহর থেকে এক ঘণ্টার দূরত্বে অবস্থিত মাইনো জাতীয় উদ্যানে রয়েছে কাৎসুই-জি মন্দির। এই মন্দিরটি “দারুমা মন্দির” নামেই সুপরিচিত। মন্দিরের আনাচে-কানাচে, গাছপালার ফাঁকে, এমনকি পথের ধারেও দেখা যায় অসংখ্য দারুমা পুতুল। ছোট আকারের কয়েক ইঞ্চি থেকে শুরু করে কয়েক ফুট পর্যন্ত লম্বা এই পুতুলগুলো যেন দর্শকদের স্বাগত জানায়। এই মন্দিরে আসা মানুষেরা তাদের আশা পূরণের জন্য এই পুতুলগুলোর একটি চোখ আঁকেন। যখন তাদের মনোবাসনা পূর্ণ হয়, তখন তারা এসে অন্য চোখটিও এঁকে দেন।

দারুমা পুতুলের ধারণা এসেছে বৌদ্ধধর্মের একজন সাধু, বোধিধর্ম থেকে। এই সাধু দীর্ঘ সময় ধরে ধ্যানমগ্ন ছিলেন। কথিত আছে, তিনি এত গভীরভাবে ধ্যান করতেন যে তার হাত-পা ধীরে ধীরে নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। এই কারণে দারুমা পুতুলের আকার গোলাকার এবং এদের পা দেখা যায় না। এই পুতুলগুলো সবসময় সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে, যা অধ্যবসায় এবং ঘুরে দাঁড়ানোর প্রতীক। তাদের ভ্রু এবং গোঁফ ক্রেন ও কচ্ছপের মতো করে তৈরি করা হয়, যা জাপানে দীর্ঘায়ু এবং সৌভাগ্যের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হয়।

দারুমা পুতুল তৈরি হয় মূলত তাকাসাকি শহরে। এখানকার কারিগররা প্রায় ২০০ বছর ধরে এই ঐতিহ্য ধরে রেখেছেন। তাকাসাকিতে উৎপাদিত দারুমা পুতুল সারা দেশে পাওয়া যায়। কাৎসুই-জি মন্দিরে দর্শনার্থীরা তাদের জন্য বিশেষভাবে তৈরি করা “কাচি-দারুমা” (বিজয়ী দারুমা) এবং “দারুমা-মিকুজি” (ভাগ্যগণনার দারুমা) বেছে নিতে পারেন। কাচি-দারুমা নির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জনের জন্য ব্যবহার করা হয়, অন্যদিকে দারুমা-মিকুজিতে ভাগ্য সম্পর্কিত পরামর্শ থাকে।

জাপানে পর্যটকদের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে, এবং ২০২৩ সালে প্রায় ৩ কোটি ৬৮ লক্ষ বিদেশি পর্যটক এখানে এসেছিলেন। যদিও ওসাকা একটি জনপ্রিয় গন্তব্য, কাৎসুই-জি মন্দির এখনো অনেক পর্যটকের কাছে অজানা। প্রতি বছর প্রায় ৮ থেকে ১০ লক্ষ পর্যটকদের আগমন ঘটে, যাদের মধ্যে ৭০ থেকে ৮০ শতাংশই বিদেশি। মন্দির কর্তৃপক্ষ পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করে। তাদের মধ্যে একটি হলো “স্ট্যাম্প র‍্যালি”, যা দর্শকদের মন্দিরের বিভিন্ন স্থান ঘুরে এসে স্ট্যাম্প সংগ্রহ করতে উৎসাহিত করে। এই র‍্যালিটি যেন এক ধরনের পরিকল্পনা, যা একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জনের পথে ধাপে ধাপে এগিয়ে যেতে সাহায্য করে।

দারুমা পুতুল জাপানের সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এটি শুধু একটি খেলনা বা স্যুভেনিয়ার নয়, বরং এটি একটি আকাঙ্ক্ষা, অধ্যবসায় এবং সাফল্যের প্রতীক। কাৎসুই-জি মন্দিরের মতো স্থানগুলো এই ঐতিহ্যকে বাঁচিয়ে রেখেছে, যা একই সাথে পর্যটকদের কাছে এক আকর্ষণীয় গন্তব্য।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *