১,৩০০ বছর ধরে চলছে! জাপানের মন্দিরের এই ‘পুনর্গঠন’ দেখলে অবাক হবেন

জাপানের এক সুপ্রাচীন মন্দির, প্রতি ২০ বছর পর যা নতুন করে গড়া হয়

জাপানের ইসে গ্র্যান্ড শ্রাইন (Ise Grand Shrine), যা শিন্তো ধর্মের পবিত্রতম স্থানগুলোর মধ্যে অন্যতম, এক অনন্য ঐতিহ্য বহন করে চলেছে এক হাজার বছরেরও বেশি সময় ধরে। প্রতি কুড়ি বছর পর এই মন্দিরটিকে ভেঙে নতুন করে গড়ার এক অসাধারণ রীতি আজও বিদ্যমান।

এই দীর্ঘ প্রক্রিয়াটি জাপানি সংস্কৃতির এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত, যা একইসঙ্গে ঐতিহ্য ও আধুনিকতার এক অপূর্ব মেলবন্ধন।

ইসে গ্র্যান্ড শ্রাইন মূলত দুটি প্রধান মন্দির নিয়ে গঠিত। এর মধ্যে ‘নাইকু’ (Naiku) বা অভ্যন্তরীণ মন্দিরটি সূর্যের দেবী আমাতেরাসুর প্রতি উৎসর্গীকৃত, আর ‘গাইকু’ (Geku) বা বাইরের মন্দিরটি খাদ্য ও শস্যের দেবী তোয়ুকে-ও-কামির প্রতি উৎসর্গীকৃত।

এই মন্দিরগুলো নির্মাণের জন্য প্রয়োজন হয় অত্যন্ত দক্ষ কারিগর, কাঠমিস্ত্রি এবং শিল্পীগোষ্ঠীর। গাছ থেকে কাঠ সংগ্রহ থেকে শুরু করে প্রতিটি নকশা তৈরি পর্যন্ত, সবকিছুই অত্যন্ত নিষ্ঠা ও সতর্কতার সঙ্গে সম্পন্ন করা হয়।

এই মন্দির পুনর্গঠনের মূল কারণ হলো, শিন্তো ধর্মানুসারে, সবকিছুই সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ক্ষয়প্রাপ্ত হয় এবং দেবতাদের নতুন স্থানে স্থানান্তরিত করা উচিত। তাই, প্রতি কুড়ি বছর পর পুরনো মন্দির ভেঙে নতুন করে তৈরি করা হয়।

এই প্রক্রিয়া ‘শিকিনেন সেঙ্গু’ নামে পরিচিত। এটি কেবল মন্দির পুনর্গঠন নয়, বরং জাপানি সংস্কৃতির ধারাবাহিকতা ও ঐতিহ্যের প্রতিচ্ছবি।

পুরনো মন্দির ভেঙে ফেলার পর, এর ভেতরের পবিত্র জিনিসপত্র, যেমন – আয়না, তরবারি ও অন্যান্য মূল্যবান সামগ্রী নতুন মন্দিরে স্থাপন করা হয়।

এই বিশাল কর্মযজ্ঞে প্রায় নয় বছর সময় লাগে এবং এর নির্মাণ ব্যয় প্রায় ৩৯ কোটি মার্কিন ডলার। এই কাজটি সুচারুরূপে সম্পন্ন করার জন্য প্রয়োজন হয় দেশের সেরা শিল্পী ও কারিগরদের।

পুরনো কাঠ সংগ্রহ করা থেকে শুরু করে, নতুন কাঠ তৈরি করা এবং প্রতিটি নকশা তৈরি করার ক্ষেত্রে তারা তাদের দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা কাজে লাগান। নতুন মন্দির নির্মাণের পর, পুরাতন মন্দিরটিকে ভেঙে ফেলা হয়, যা জীবনের পরিবর্তনশীলতার প্রতীক।

এই মন্দিরগুলোতে ব্যবহৃত কাঠ সংগ্রহ করা হয় জাপানি আল্পসের গভীর অরণ্য থেকে। বিশেষ রীতি-নীতি মেনে পুরোহিত এবং বনকর্মীরা গাছ কাটেন।

গাছ কাটার সময়ও চলে বিশেষ প্রার্থনা ও আচার-অনুষ্ঠান। গাছের বয়স ৩০০ বছরের বেশি হতে হয়।

গাছ কাটার পর, তা থেকে তৈরি করা হয় নতুন মন্দিরের কাঠামো।

২০২৩ সালে এই মন্দিরের ৬৩তম পুনর্গঠন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এর আগে, প্রথমবার মন্দিরটি ৬৯০ খ্রিস্টাব্দে তৈরি করা হয়েছিল।

এই দীর্ঘ ইতিহাসে, মন্দির নির্মাণের প্রক্রিয়াটি কেবল একবার, ১৫ ও ১৬ শতকে জাপানের গৃহযুদ্ধের সময় এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে বন্ধ ছিল।

এই মন্দির শুধু জাপানের নয়, বরং সারা বিশ্বের মানুষের কাছে এক বিশেষ আকর্ষণ। প্রতি বছর প্রায় ৭০ লক্ষ তীর্থযাত্রী এখানে আসেন।

এই মন্দির পরিদর্শন, জাপানি সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের প্রতি গভীর শ্রদ্ধার একটি অংশ।

তথ্যসূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *