জাপানে রাজনৈতিক অস্থিরতা: পদত্যাগ করছেন না, জানালেন প্রধানমন্ত্রী

জাপানের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শিনজো আবে’র পদত্যাগের জল্পনার মধ্যে বাণিজ্য চুক্তির দিকে নজর

টোকিও, [তারিখ]। জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো ইশিবা আসন্ন পদত্যাগের খবর অস্বীকার করেছেন। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত নির্বাচনে তার দলের পরাজয়ের পর এমন জল্পনা উঠেছিল।

তবে তিনি জানিয়েছেন, তার প্রধান মনোযোগ এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি নতুন বাণিজ্য চুক্তি কার্যকর করার দিকে।

রবিবার অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি) এবং তাদের সহযোগী দল কোমেতো উভয়ই সংসদের উচ্চকক্ষে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়েছে। এই পরাজয় ইশিবাকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেওয়ার চাপ সৃষ্টি করেছে। একইসঙ্গে জাপানের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতাও প্রশ্নের মুখে পড়েছে।

নির্বাচনে পরাজয়ের ফলে ইশাবার নেতৃত্বাধীন জোট, যা গত অক্টোবরে নিম্নকক্ষেও সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়েছিল, উভয় কক্ষেই সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়েছে। ফলে সরকারের পক্ষে নীতিগত লক্ষ্য অর্জন করা আরও কঠিন হয়ে পড়েছে এবং জাপানে রাজনৈতিক অস্থিরতা বাড়ছে।

সোমবার, ইশিবা রাজনৈতিক শূন্যতা তৈরি না করে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শুল্ক আলোচনা সহ জরুরি সমস্যাগুলো মোকাবিলা করার ঘোষণা করেন। এরপরেই দলীয় এবং বাইরের বিভিন্ন মহল থেকে দ্রুত পদত্যাগের জন্য তার প্রতি আহ্বান জানানো হয়।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি সম্পন্ন হওয়ার প্রেক্ষাপটে, জাপানি গণমাধ্যম জানায়, সম্ভবত আগস্টের মধ্যে তিনি পদত্যাগের ঘোষণা দিতে পারেন। ইয়োমিউরি সংবাদপত্র বুধবারের বিশেষ সংস্করণে জানায়, ইশিবা তার প্রধান বাণিজ্য আলোচক রিয়োসেই আকাজাওয়ার কাছ থেকে বিস্তারিত প্রতিবেদন পাওয়ার পর জুলাই মাসের শেষ নাগাদ পদত্যাগের ঘোষণা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এর মাধ্যমে দলের পরবর্তী নেতা নির্বাচনের পথ সুগম হবে।

তবে, ইশিবা এই খবর অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, তিনি বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র-জাপান বাণিজ্য চুক্তির উপর মনোযোগ দিতে চান। এই চুক্তির আওতায় জাপানের উৎপাদিত ৪,০০০-এর বেশি পণ্যের ওপর শুল্কের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

বুধবার দলীয় সদর দফতরে ইশিবা দলের শীর্ষস্থানীয় নেতা এবং প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী তারো আসো, ফুমিও কিশিদা এবং ইয়োশিহিদে সুগার সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকের পর সাংবাদিকদের তিনি জানান, তাদের মধ্যে পদত্যাগ বা নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। তারা কেবল নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে আলোচনা করেছেন, সংকট অনুভব করেছেন এবং দলের মধ্যে বিভেদ এড়ানোর প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে একমত হয়েছেন।

বুধবার ইশিবা বাণিজ্য চুক্তিকে স্বাগত জানান। এই চুক্তিতে জাপানে তৈরি গাড়ি ও অন্যান্য পণ্য যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানির ক্ষেত্রে ১৫ শতাংশ শুল্ক ধার্য করা হয়েছে। আগে এই শুল্কের পরিমাণ ছিল ২৫ শতাংশ। তিনি বলেন, এটি জাতীয় স্বার্থ রক্ষার জন্য কঠিন আলোচনার ফল। এর মাধ্যমে উভয় পক্ষই আরও বেশি কর্মসংস্থান ও বিনিয়োগ সৃষ্টি করতে পারবে।

তবে, ইশিবা তার সম্ভাব্য পদক্ষেপ সম্পর্কে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, প্রথমে তাকে বাণিজ্য চুক্তিটি ভালোভাবে পর্যালোচনা করতে হবে।

রবিবারের নির্বাচনে, ক্রমবর্ধমান দ্রব্যমূল্য এবং মজুরি বৃদ্ধি না হওয়ায় ভোটারদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দেয়। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে ক্ষমতাসীন সরকারের প্রবীণ ভোটারদের প্রতি মনোযোগের কারণে অসন্তোষ বাড়ে।

এর ফলস্বরূপ, ডেমোক্রেটিক পার্টি ফর দ্য পিপল এবং সানসেইতোর মতো নতুন রক্ষণশীল এবং ডানপন্থী পপুলিস্ট দলগুলোর দিকে তাদের সমর্থন বাড়ে।

বিরোধী দলগুলো ক্ষমতাসীন জোটের সঙ্গে পূর্ণাঙ্গ জোট গঠনের আগ্রহ দেখায়নি, তবে তারা নীতিগত বিষয়ে সহযোগিতা করতে প্রস্তুত বলে জানিয়েছে।

তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *