ভালোবাসার হোটেল: জাপানের গোপন দুনিয়া!

জাপানের ‘লাভ হোটেল’: এক ভিন্ন ধরনের স্থাপত্য শৈলী

জাপানে এমন কিছু হোটেল রয়েছে যেগুলোর স্থাপত্যশৈলী দেখলে চোখ জুড়িয়ে যায়। এই হোটেলগুলো ‘লাভ হোটেল’ নামে পরিচিত। বিশেষ করে যুগলদের জন্য তৈরি হওয়া এই হোটেলগুলোতে থাকে কিছু বিশেষত্ব।

ফ্রান্সের আলোকচিত্রী ফ্রাঁসোয়া প্রোস্ট এই লাভ হোটেলগুলোর ছবি তুলে বিশ্বজুড়ে পরিচিতি এনেছেন। তাঁর ক্যামেরায় ধরা পড়েছে জাপানের এই ব্যতিক্রমী সংস্কৃতির এক অনন্য দিক।

লাভ হোটেলগুলো আসলে কি?

লাভ হোটেলগুলো হল জাপানের এক ধরনের বিশেষ হোটেল, যেখানে যুগলরা স্বল্প সময়ের জন্য গোপনীয়তা উপভোগ করতে পারে। এখানে বিশ্রাম নেওয়ারও সুযোগ থাকে।

এই হোটেলগুলোতে বিভিন্ন ধরনের থিম ব্যবহার করা হয়, যা দর্শকদের আকৃষ্ট করে। উদাহরণস্বরূপ, বিশাল আকারের তিমি মাছের আদলে তৈরি হোটেল থেকে শুরু করে, ইউএফও বা ভিনগ্রহের যান অথবা রূপকথার ক্যাসেলের মতো ডিজাইনও এখানে দেখা যায়।

ইতিহাসের পাতা থেকে

১৬০০ শতকে, এডো পিরিয়ডে ‘দেয়াই চায়া’ নামে পরিচিত গোপনীয় স্থান থেকে লাভ হোটেলের ধারণা আসে। যেখানে পরিবারের চোখ এড়িয়ে প্রেমিক-প্রেমিকারা মিলিত হতে পারত।

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে, এই স্থানগুলো আরও আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে। বিংশ শতাব্দীর শুরুতে, শাওয়া যুগে, এই চায়াগুলো বিভিন্ন থিমের সঙ্গে রঙিন হয়ে ওঠে, যা দৈনন্দিন জীবন থেকে আলাদা একটা জগৎ তৈরি করে।

বিভিন্ন ধরনের থিম

জাপানের লাভ হোটেলগুলোতে বিভিন্ন ধরনের থিম দেখা যায়। কিছু হোটেলের ডিজাইন রূপকথার জগৎ থেকে অনুপ্রাণিত, আবার কিছু তৈরি করা হয়েছে সাই-ফাই বা বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী অথবা মধ্যযুগীয় নানা ধারণা নিয়ে।

এখানে আলপাইন কুটির, ক্রুজ শিপ, এমনকি ডাইনোসরের আদলে তৈরি হোটেলও রয়েছে। হোটেলগুলোতে প্রবেশ করা এবং ঘর নির্বাচন করাও বেশ সহজ।

গ্রাহকদের জন্য গোপনীয়তা রক্ষার সব ধরনের ব্যবস্থা এখানে বিদ্যমান।

আধুনিক যুগে লাভ হোটেল

বর্তমানে, লাভ হোটেলগুলোতে শুধু যুগলরাই নয়, বন্ধু-বান্ধবীরাও একত্রিত হয়। এখানে তারা পার্টি করে, যেখানে থাকে আধুনিক সব সুবিধা, যেমন – কারাওকে, বড় টিভি, ম্যাসাজ চেয়ার এবং হট টাব।

এই হোটেলগুলো জাপানের সংস্কৃতিতে একটি বিশেষ স্থান দখল করে আছে।

ফ্রাঁসোয়া প্রোস্টের চোখে

ফ্রাঁসোয়া প্রোস্ট নামের একজন ফরাসি ফটোগ্রাফার জাপানের লাভ হোটেলগুলির স্থাপত্যশৈলী নিয়ে কাজ করেছেন। তিনি এই হোটেলগুলোর বাইরের ডিজাইন ক্যামেরাবন্দী করেছেন।

তাঁর তোলা ছবিগুলোতে হোটেলের ভিন্নতা ও আকর্ষণ ফুটে উঠেছে। তাঁর এই কাজের মাধ্যমে, জাপানের সংস্কৃতির একটি বিশেষ দিক বিশ্ববাসীর কাছে উন্মোচিত হয়েছে।

জাপানের এই লাভ হোটেলগুলো তাদের স্থাপত্যশৈলী এবং সংস্কৃতির কারণে আজও মানুষের কাছে আকর্ষণীয়।

তথ্যসূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *