ক্লাসরুম থেকে ডেকে ছাত্রীকে খুন, তারপর…’, যা ঘটল শুনলে গা শিউরে উঠবে!

সাসেবোতে এক ভয়াবহ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা, যেখানে এক স্কুলছাত্রী তার সহপাঠীকে নৃশংসভাবে খুন করে, সারা বিশ্বকে নাড়া দিয়েছে। ২০০৪ সালের ১লা জুন, জাপানের এই শহরে ঘটে যাওয়া এই ঘটনায় হতবাক হয়ে গিয়েছিল সবাই।

ওকুবো এলিমেন্টারি স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী সাতোমি মিতারাইকে ক্লাসরুম থেকে ডেকে নিয়ে যায় তার ১১ বছর বয়সী সহপাঠী, যাকে পুলিশ ‘গার্ল এ’ নামে চিহ্নিত করেছে। লাঞ্চের বিরতির ঠিক আগে, পড়াশোনার একটি কক্ষে নিয়ে গিয়ে ধারালো একটি বক্স কাটার দিয়ে সাতোমির গলায় আঘাত করে সে।

শুধু তাই নয়, আঘাতের পর সাতোমিকে লাথিও মারে ‘গার্ল এ’। ঘটনার পর, রক্তাক্ত অবস্থায়, ‘গার্ল এ’ ফিরে আসে ক্লাসে।

উপস্থিত ছাত্রছাত্রীদের হতবাক করে দিয়ে সে নাকি বলেছিল, “এটা আমার রক্ত নয়”।

সংবাদ সংস্থা এপি’র খবর অনুযায়ী, কিছুক্ষণের মধ্যেই শিক্ষকেরা সাতোমিকে মেঝেতে নিথর অবস্থায় খুঁজে পান। খবর পাওয়া মাত্রই ছুটে আসেন সাতোমির বাবা।

তিনি জানান, “আমি আমার চোখের সামনে যা দেখলাম, তা বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। আমার অনুভূতি প্রকাশ করার মতো কোনও ভাষা নেই। আমি এখনো বুঝতে পারছি না, কেন এমনটা ঘটল।”

পুলিশের কাছে ‘গার্ল এ’ দ্রুতই তার অপরাধ স্বীকার করে। সে জানায়, “আমি একটি খারাপ কাজ করেছি।”

এই ঘটনার কয়েক বছর আগে, জাপানে শিশুদের দ্বারা সংঘটিত অপরাধের ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় উদ্বেগ বেড়ে গিয়েছিল। ১৯৯৭ সালে, ১৪ বছর বয়সী এক কিশোর ১১ বছর বয়সী জুন হাসেকে খুন করে, তার মুণ্ডু স্কুলের গেটে ফেলে রেখেছিল।

২০০৩ সালেও, ১২ বছর বয়সী এক কিশোর নাগাাসাকির একটি পার্কিং লটের ছাদ থেকে ৪ বছর বয়সী শিশুকে ধাক্কা মেরে হত্যা করে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, ‘গার্ল এ’-এর “Battle Royale” নামের একটি সিনেমার প্রতি তীব্র আসক্তি ছিল। এই সিনেমাটি ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে মারামারি এবং খুনের ঘটনাকে কেন্দ্র করে তৈরি।

ধারণা করা হয়, অনলাইনে তার চেহারা নিয়ে করা কিছু মন্তব্যের কারণে ‘গার্ল এ’ ক্ষিপ্ত ছিল। বিবিসি’র একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘গার্ল এ’ পুলিশকে জানায়, “ঘটনার কয়েক দিন আগে সে আমার চেহারা নিয়ে অনলাইনে খারাপ কথা লিখেছিল। তাই, আমি তাকে স্টাডি রুমে ডেকে নিয়ে গলায় আঘাত করি।”

জানা যায়, ঘটনার চার দিন আগে সে সাতোমিকে মারার সিদ্ধান্ত নেয় এবং একটি টিভি শো দেখে এই মারামারির পদ্ধতি বেছে নেয়। মেইনিচি শিম্বুন পত্রিকার বরাত দিয়ে বিবিসি আরও জানায়, “আমি সেই নাটকটি দেখেছিলাম। আমি সেভাবেই কাজটি করার কথা ভেবেছিলাম।”

সাতোমির মৃত্যুর পর, স্কুলের পক্ষ থেকে ছাত্রছাত্রীদের জানানো হয়, তারা চাইলে তাদের গ্র্যাজুয়েশন হ্যান্ডবুকে সাতোমি এবং ‘গার্ল এ’-এর ছবি রাখতে পারে।

ছাত্রছাত্রী এবং অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলার পর, স্কুল কর্তৃপক্ষ সাতোমির ছবি হ্যান্ডবুকে অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেয়। তবে ‘গার্ল এ’-এর ছবি যুক্ত করার বিষয়টি শিক্ষার্থীদের ইচ্ছের ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়।

সাতোমিকে সম্মান জানাতে, স্কুল কর্তৃপক্ষ তাকে মরণোত্তর গ্র্যাজুয়েশন সার্টিফিকেট দেয়। একই সময়ে, ‘গার্ল এ’-কেও একটি সার্টিফিকেট দেওয়া হয়, কারণ সে তখন একটি কিশোর সংশোধনমূলক কেন্দ্রে ছিল।

কর্তৃপক্ষের ধারণা ছিল, এর মাধ্যমে সে জুনিয়র হাই স্কুলে প্রবেশ করতে এবং সমাজের সঙ্গে পুনরায় মিশতে পারবে।

২০০৪ সালের সেপ্টেম্বরে, একটি পারিবারিক আদালত ‘গার্ল এ’-কে একটি সরকারি কিশোর সংশোধনমূলক কেন্দ্রে পাঠানোর নির্দেশ দেয়। একই সঙ্গে, পুনর্বাসন কর্মসূচির অংশ হিসেবে তাকে কাউন্সেলিং করানোরও নির্দেশ দেওয়া হয়।

তথ্য সূত্র: পিপল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *