জাপান পরিচ্ছন্নতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত, কিন্তু সেখানে ময়লার ঝুড়ি খুঁজে পাওয়া কঠিন কেন?
পরিচ্ছন্নতার ধারণা নিয়ে জাপান সারা বিশ্বে সুপরিচিত। সেখানকার রাস্তাঘাট, গণপরিবহন—সবকিছুতেই যেন পরিচ্ছন্নতার এক অন্যরকম ছোঁয়া।
কিন্তু জাপানে ঘুরতে যাওয়া পর্যটকদের মনে প্রায়ই একটা প্রশ্ন উঁকি দেয়—এত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন একটা দেশে, ডাস্টবিন বা ময়লার ঝুড়ি এত কম কেন?
এই বিষয়টি নিয়ে সিঙ্গাপুর ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ক্রিস ম্যাকমরান প্রায়ই তাঁর ছাত্রদের সঙ্গে আলোচনা করেন। তাঁর মতে, জাপানে আসা অনেক পর্যটকের কাছেই এটা একটা বড় সমস্যা।
জাপানে ঘুরতে আসা বিদেশি পর্যটকদের মধ্যে ২২ শতাংশের মতে, সেখানে ময়লা ফেলার জায়গা খুঁজে পাওয়াটাই সবচেয়ে কঠিন। পর্যটকদের জন্য অসুবিধার তালিকায় এর পরেই রয়েছে ইংরেজি ভাষাভাষীর অভাব (১৫%) এবং জনপ্রিয় স্থানগুলোতে অতিরিক্ত ভিড় (১৩%)।
আসলে, জাপানি সংস্কৃতির কিছু বিশেষ দিক এর সঙ্গে জড়িত। জাপানিরা সাধারণত বাইরে খাবার খাওয়ার চেয়ে দোকানে কিনে তা বাড়িতে নিয়ে যান।
রাস্তায় বসে খাবার খাওয়ার চলও সেখানে খুব একটা দেখা যায় না। কেউ যদি বাইরে খানও, সঙ্গে একটা ছোট ব্যাগ রাখেন, যাতে ময়লা ভরে পরে তা বাড়িতে ফেলতে পারেন।
পর্যটকদের আনাগোনায় জাপানের কিছু অঞ্চলে ময়লার সমস্যা বেড়েছে। উদাহরণস্বরূপ, ওসাকা থেকে বুলেট ট্রেনে ৪৫ মিনিটের পথ পেরিয়ে ইউনেস্কো-তালিকাভুক্ত শহর নারাতে প্রতি বছর বহু পর্যটকের সমাগম হয়।
এখানকার ঐতিহাসিক মন্দির এবং বৌদ্ধমূর্তি ছাড়াও বন্য হরিণের জন্য এই শহরের খ্যাতি রয়েছে। পর্যটকদের দেওয়া খাবার খেয়ে কিছু হরিণের মৃত্যুও হয়েছে, কারণ তারা প্লাস্টিক বর্জ্য হজম করতে পারেনি।
১৯৮৫ সালে নারার পার্ক থেকে ময়লার ঝুড়ি সরিয়ে ফেলা হয়, যাতে হরিণগুলো খাবারের লোভে সেগুলি খাওয়ার চেষ্টা না করে।
পর্যটকদের সচেতন করতে বিভিন্ন স্থানে সাইনবোর্ড লাগানো হয়, যেখানে ময়লা না ফেলার জন্য সতর্ক করা হয়। কিন্তু পর্যটকদের সংখ্যা বাড়তে থাকায় দেখা যায়, এই ব্যবস্থা যথেষ্ট নয়।
তাই বর্তমানে শহরের ব্যস্ত স্থানগুলোতে কিছু সৌর-বিদ্যুৎ চালিত ময়লার ঝুড়ি বসানো হয়েছে, যেগুলোতে “Save the deer” লেখা রয়েছে।
তবে শুধু পর্যটকদের কারণেই নয়, নিরাপত্তার কারণেও অনেক সময় ডাস্টবিন সরিয়ে ফেলার ঘটনা ঘটেছে। ১৯৯৫ সালের ২০ মার্চ, টোকিও সাবওয়েতে সারিন গ্যাস হামলা হয়, যেখানে ১৪ জন নিহত এবং ৫,৫০০ জনের বেশি আহত হয়েছিলেন।
এর ফলস্বরূপ, টোকিও এবং অন্যান্য শহরের স্টেশনগুলো থেকে ময়লার ঝুড়ি সরিয়ে ফেলা হয়।
জাপানের এই পরিচ্ছন্নতার ধারণা এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনার বিষয়টি বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বেশ শিক্ষনীয়। আমাদের দেশেও পরিচ্ছন্নতার বিষয়ে সচেতনতা বাড়ানো দরকার।
ব্যক্তিগত পর্যায়ে ময়লা ফেলার দায়িত্ব নেওয়ার পাশাপাশি, সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়েও বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।
জাপানের মতো উন্নত দেশেও যখন ডাস্টবিন নিয়ে সমস্যা দেখা যায়, তখন আমাদের দেশের জন্য বিষয়টি আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে।
আমাদের শহরগুলোতে পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে হলে, নাগরিকদের সচেতনতার পাশাপাশি কর্তৃপক্ষের সক্রিয় ভূমিকাও জরুরি।
তথ্য সূত্র: সিএনএন