সাবওয়ের নায়ক থেকে কুখ্যাত: জ্যারেড ফোগলের কারাগারে জীবন!

সুবের প্রাক্তন মুখপাত্র জ্যারেড ফোগলের জীবন: খ্যাতি থেকে পতন।

একসময় যিনি ‘সুবওয়ে গাই’ নামে পরিচিত ছিলেন, সেই জ্যারেড ফোগল এখন কারাগারে বন্দী জীবন কাটাচ্ছেন। ফোগল একসময় ছিলেন অনেকের কাছেই পরিচিত মুখ, যিনি সুবওয়ের বিজ্ঞাপনে স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রার ধারণা তুলে ধরেছিলেন।

কিন্তু শিশুদের যৌন নিপীড়ন ও পর্নোগ্রাফির অভিযোগে তার খ্যাতি দ্রুত ধূলিসাৎ হয়ে যায়।

২০০০ সালে, ফোগল সুবওয়ের স্যান্ডউইচ খেয়ে ওজন কমানোর গল্প শুনিয়ে পরিচিত হন। তিনি দাবি করেছিলেন যে, এই খাদ্যাভ্যাস অনুসরণ করে তিনি প্রায় ২২০ পাউন্ড ওজন কমিয়েছেন।

এরপর এক দশকের বেশি সময় ধরে তিনি এই ফাস্ট ফুড চেইনের বিজ্ঞাপনে কাজ করেন। খ্যাতির শীর্ষে থাকা অবস্থায় তার সম্পদের পরিমাণ ছিল প্রায় ১ কোটি ৫০ লক্ষ ডলার।

কিন্তু ২০১৫ সালে তার বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ ওঠে। শিশুদের সঙ্গে যৌন সম্পর্ক স্থাপন এবং তাদের পর্নোগ্রাফি তৈরি ও সংগ্রহ করার অভিযোগে তাকে বরখাস্ত করা হয়।

একই বছর আগস্ট মাসে আদালতে হাজির হওয়ার পর তার আইনজীবী জানান, ফোগলের একটি ‘চিকিৎসা সংক্রান্ত সমস্যা’ রয়েছে এবং তিনি এর চিকিৎসা করাবেন।

বিচার শেষে ফোগলকে ১৫ বছরের বেশি কারাদণ্ড দেওয়া হয়। বর্তমানে তিনি কলোরাডোর একটি ফেডারেল কারাগারে সাজা ভোগ করছেন।

জ্যারেড ফোগল কে ছিলেন?

কলেজে থাকাকালীন ফোগলের ওজন ছিল প্রায় ৪২৫ পাউন্ড। তিনি সুবওয়ের খাবার খেয়ে ২৪৫ পাউন্ড ওজন কমানোর পর আলোচনায় আসেন। ফোগল দাবি করেন, তিনি প্রতিদিন একটি ‘ফুটলং ভেজি’ এবং একটি ‘সিক্স-ইঞ্চ টার্কি’ খেতেন, যেখানে প্রচুর সবজি, সামান্য সরিষা এবং মেয়োনেজ ছাড়া খাবার থাকত।

সুবওয়ের সঙ্গে তার সম্পর্ক গড়ে ওঠে এবং তিনি দ্রুত এর মুখপাত্র হিসেবে পরিচিত হন। ২০০০ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে তিনি ৩০০টির বেশি বিজ্ঞাপনে কাজ করেছেন।

এমনকি সুস্থ জীবনযাপনের প্রচারের জন্য তিনি একটি দাতব্য সংস্থাও তৈরি করেন।

কিন্তু ২০১৫ সালের জুলাই মাসে তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলো তার সম্মান ও খ্যাতির ওপর চরম আঘাত হানে। এফবিআই তার বাড়িতে অভিযান চালায় এবং তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

অভিযোগ ছিল, তিনি শিশুদের পর্নোগ্রাফি সংগ্রহ করেছেন এবং নাবালকদের সঙ্গে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করেছেন।

ফোগলের অপরাধগুলো কি ছিল?

ফেডারেল প্রসিকিউটরদের নথি অনুযায়ী, ফোগল ২০১১ সাল থেকে শিশুদের পর্নোগ্রাফি সংগ্রহ করা শুরু করেন এবং তা নিয়মিত দেখতেন। তিনি তার সহযোগীর কাছ থেকে আরও পর্নোগ্রাফি চেয়েছিলেন, যেখানে ৬ বছর বয়সী শিশুর ছবিও ছিল।

এছাড়াও, নাবালকদের সঙ্গে যৌন সম্পর্ক স্থাপনের জন্য তিনি বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছিলেন।

ফোগল বিবাহিত ছিলেন এবং তার দুটি সন্তান ছিল। অভিযোগের পর তার স্ত্রী বিবাহবিচ্ছেদ করেন।

২০১৫ সালের নভেম্বরে, ফোগল শিশুদের পর্নোগ্রাফি বিতরণ ও সংগ্রহের পাশাপাশি নাবালকের সঙ্গে যৌন সম্পর্ক স্থাপনের কথা স্বীকার করেন।

ফোগলের সাজা

ফোগলকে ১৫ বছর ৮ মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এছাড়াও, তিনি ১৪ জন ভুক্তভোগীকে ১.৪ মিলিয়ন ডলার ক্ষতিপূরণ দিতে রাজি হন।

বর্তমানে বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ প্রায় ১৫ কোটি টাকার বেশি। বিচারক এই মামলার রায় দিতে গিয়ে বলেছিলেন, ফোগলের “বিকৃত রুচি ও বেআইনি কার্যকলাপ ছিল চরম পর্যায়ে”।

কারাগারে ফোগলের জীবন

বর্তমানে ফোগল কলোরাডোর একটি কারাগারে সাজা ভোগ করছেন। কারাগারের অভ্যন্তরে তাকে কয়েকবার আক্রান্ত হতে হয়েছে।

কারাগারে থাকাকালীন ফোগল প্রতিদিন প্রায় ৪ থেকে ৫ মাইল দৌড়ান। তিনি জানান, কারাগারে তার জীবনযাত্রার ওপর তেমন নিয়ন্ত্রণ নেই, তবে শরীরচর্চা করার সুযোগ রয়েছে।

তিনি স্বাস্থ্যকর খাবার খান এবং জাঙ্ক ফুড এড়িয়ে চলেন। তিনি নিয়মিতভাবে ‘দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস’ পড়েন এবং খেলা দেখতে পছন্দ করেন।

আদালতের নথি থেকে জানা যায়, ফোগলকে ২০২৯ সালের মার্চ মাসে মুক্তি দেওয়া হতে পারে।

তথ্য সূত্র: পিপল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *