স্তন ক্যান্সারের সেই রূপ, যা সহজে ধরা যায় না! বাড়ছে আক্রান্তের হার, কীভাবে বাঁচবেন?

স্তন ক্যান্সার নারীদের মধ্যে একটি গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা, যা বর্তমানে বিশ্বজুড়ে উদ্বেগের কারণ। বিভিন্ন ধরনের স্তন ক্যান্সারের মধ্যে একটি হলো ইনভেসিভ লোবুলার কার্সিনোমা (Invasive Lobular Carcinoma বা ILC)।

সম্প্রতি, এই বিশেষ ধরনের ক্যান্সার সম্পর্কে নতুন কিছু তথ্য উঠে এসেছে, যা আমাদের সকলের জন্য জানা জরুরি।

যুক্তরাষ্ট্রে হওয়া এক গবেষণায় দেখা গেছে, অন্যান্য স্তন ক্যান্সারের তুলনায় ILC-র বৃদ্ধি দ্রুত হারে বাড়ছে। গত এক দশকে, অন্যান্য সব ধরনের স্তন ক্যান্সারের তুলনায় এই ILC-র বৃদ্ধি প্রায় তিনগুণের বেশি হয়েছে।

গবেষণায় উঠে এসেছে, ILC প্রতি বছর প্রায় ২.৮% হারে বাড়ছে, যেখানে অন্যান্য স্তন ক্যান্সারের বৃদ্ধি ছিল বছরে প্রায় ০.৮%।

এই ক্যান্সার শনাক্তকরণে কিছু সমস্যা দেখা যায়। নিয়মিত ম্যামোগ্রামে সবসময় এটি ধরা নাও পড়তে পারে।

ইনভেসিভ লোবুলার কার্সিনোমা আসলে কী? এটি স্তনের লোবিউল নামক দুগ্ধ উৎপাদনকারী গ্রন্থি থেকে শুরু হয়ে আশেপাশের টিস্যুতে ছড়িয়ে পরে।

এটি স্তন ক্যান্সারের দ্বিতীয় সাধারণ প্রকারভেদ এবং মোট স্তন ক্যান্সারের ১০ থেকে ১৫ শতাংশ ক্ষেত্রে এই ধরনের ক্যান্সার দেখা যায়। যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি বছর প্রায় ৪৭,৫০০ জন নারীর মধ্যে এই ক্যান্সার শনাক্ত করা হয়।

এই ক্যান্সার সনাক্তকরণে সমস্যা হওয়ার কারণ হলো, এই টিউমারগুলো এমনভাবে বাড়ে যা স্তনের স্বাভাবিক গঠনকে খুব বেশি পরিবর্তন করে না।

এর বদলে, ক্যান্সার কোষগুলো টিস্যুর মধ্যে সরু সুতার মতো ছড়িয়ে যায়, যা ইমেজিং পরীক্ষায় স্বাভাবিক স্তন কোষের মতোই দেখায়।

ফলে, ম্যামোগ্রামে এর উপস্থিতি বোঝা কঠিন হতে পারে। অনেক সময় নারীরা নিজেরা স্তনে কোনো চাকা অনুভব করেন না, যার ফলে রোগ নির্ণয় হতে দেরি হয়।

তাহলে, এই ক্যান্সার নির্ণয়ের অন্য কোনো উপায় আছে কি? হ্যাঁ, কিছু অতিরিক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে এটি সনাক্ত করা যেতে পারে।

একটি স্তন আলট্রাসাউন্ড পরীক্ষার মাধ্যমে, ম্যামোগ্রামে ধরা না পড়া টিস্যুর ঘন এলাকাগুলো চিহ্নিত করা যেতে পারে। এছাড়া, স্তন এমআরআই (MRI) আরও বিস্তারিত চিত্র সরবরাহ করে, যা ঘন স্তন টিস্যুর মধ্যে লুকানো ক্যান্সার সনাক্ত করতে সাহায্য করতে পারে।

তবে, এই পরীক্ষাগুলো সবার জন্য নিয়মিতভাবে করার প্রয়োজন হয় না। সাধারণত, ম্যামোগ্রাফিই প্রধান স্ক্রিনিং পদ্ধতি হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

এই ক্যান্সারের ঝুঁকি কাদের বেশি? বয়স একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ৬৫ বছর বা তার বেশি বয়সী নারীদের মধ্যে ILC হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।

এছাড়া, এশিয়ান আমেরিকান এবং প্যাসিফিক আইল্যান্ডার নারীদের মধ্যে এই ক্যান্সারের বৃদ্ধি বেশি দেখা গেছে। হরমোনের পরিবর্তন, অতিরিক্ত ওজন, মদ্যপান এবং জীবনযাত্রার ধরনের পরিবর্তনের কারণেও এই ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়তে পারে।

চিকিৎসা পদ্ধতি অন্যান্য স্তন ক্যান্সারের মতোই। সাধারণত, অস্ত্রোপচার, রেডিওথেরাপি এবং হরমোন থেরাপি ব্যবহার করা হয়। কিছু ক্ষেত্রে কেমোথেরাপিও প্রয়োজন হতে পারে।

উন্নত চিকিৎসার জন্য, নতুন কিছু ওষুধও পাওয়া যাচ্ছে।

স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে কিছু বিষয় মনে রাখতে হবে। ধূমপান পরিহার করা, মদ্যপান সীমিত করা, স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখা এবং শারীরিক কার্যকলাপ বাড়ানো এক্ষেত্রে সহায়ক।

স্বাস্থ্যকর খাবার, যেমন ফল, সবজি এবং শস্য, গ্রহণ করা প্রয়োজন। এছাড়াও, নিয়মিত স্ক্রিনিং করানো এবং স্তনে কোনো পরিবর্তন দেখা দিলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

মনে রাখবেন, স্তন ক্যান্সার সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং রোগ সম্পর্কে সঠিক ধারণা থাকা খুবই জরুরি। যেকোনো সন্দেহজনক লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করুন।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *