বিখ্যাত চলচ্চিত্র ‘জস’-এর পঞ্চাশ বছর পূর্তি: সিনেমার জগৎ থেকে কীভাবে বদলে গেল হাঙরের ধারণা।
সিনেমা মানুষের মনে গভীর প্রভাব ফেলে। সিনেমার গল্প, চরিত্র এবং দৃশ্যপট অনেক সময় বাস্তব জীবনের ধারণাগুলোকেও প্রভাবিত করে।
স্টিভেন স্পিলবার্গ পরিচালিত ১৯৭৫ সালের সাড়া জাগানো ছবি ‘জস’ তেমনই একটি উদাহরণ। এই ছবিতে হাঙরকে যেভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে, তা দর্শকদের মধ্যে হাঙর সম্পর্কে এক ভিন্ন ধারণা তৈরি করেছে।
ছবিটি মুক্তির পঞ্চাশ বছর পরেও, এর প্রভাব আজও দৃশ্যমান।
‘জস’ চলচ্চিত্রটি শুধু একটি সিনেমা ছিল না, এটি ছিল গ্রীষ্মের সিনেমা নির্মাণের ধারণার প্রবর্তক।
এর সাফল্যের পরে, একই ধরনের আরও অনেক সিনেমা তৈরি হয়েছে, যেখানে হাঙরকে কেন্দ্র করে ভীতি ও উত্তেজনার গল্প বলা হয়েছে।
ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিষয়ক ইতিহাসবিদ জেনিফার মার্টিনের মতে, “এই সিনেমাটি অন্য কোনো প্রাণীর সম্পর্কে মানুষের ধারণাকে এত শক্তিশালীভাবে প্রভাবিত করেছে এমন উদাহরণ খুঁজে পাওয়া কঠিন।
সিনেমার আগে, হাঙর সম্পর্কে মানুষের ধারণা খুব স্পষ্ট ছিল না।
তারা হয়তো জানত, হাঙর একটি ভয়ংকর প্রাণী।
কিন্তু ‘জস’-এর মাধ্যমে, হাঙরকে যেন মানুষের জন্য এক আতঙ্কের প্রতীক হিসেবে উপস্থাপন করা হলো।
সিনেমায় মানুষখেকো হাঙরের ধারণা এতটাই শক্তিশালী ছিল যে, মুক্তির পর কিছু মানুষ হাঙর শিকারের প্রতিযোগিতায় মেতে উঠেছিল।
তবে, সিনেমার এই চিত্র হাঙর সম্পর্কে মানুষের মনে ভীতি সৃষ্টি করলেও, এর ভালো দিকও ছিল।
অনেক বিজ্ঞানী ও গবেষক এই সিনেমার মাধ্যমে হাঙর সম্পর্কে আরও ভালোভাবে জানতে আগ্রহী হন।
তারা হাঙরের আচরণ, প্রজাতি এবং তাদের পরিবেশের ভূমিকা নিয়ে গবেষণা শুরু করেন।
সমুদ্রের গভীরের এই প্রাণীগুলো আসলে কতটা ভয়ঙ্কর?
মেরিন বায়োলজিস্ট গ্রেগরি স্কোমালের মতে, “জস’ সিনেমাটি মানুষের মনে ভীতি জাগিয়েছিল, কারণ বন্য প্রাণীর কামড়, বিশেষ করে সমুদ্রের কোনো প্রাণীর কামড়, এমনিতেই ভীতিকর।
সিনেমায়ে হাঙরকে মানুষের মাংসলোভী হিসেবে দেখানো হলেও, বাস্তবে এর ভিন্নতা রয়েছে।
হাঙর সাধারণত মানুষকে শিকার হিসেবে বিবেচনা করে না।
একসময়, হাঙরকে “আবর্জনা ভুক” হিসেবেও দেখা হতো।
উপকূলের শহরগুলো সমুদ্রে ময়লা ফেলত, আর হাঙর সেই আবর্জনা খাওয়ার জন্য আসত।
মানুষের জলক্রীড়া ও সমুদ্রের গভীরে বিচরণ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হাঙরের সঙ্গে মানুষের সাক্ষাৎ হওয়ার সম্ভাবনাও বাড়ে।
ফ্লোরিডা প্রোগ্রামের পরিচালক গ্যাভিন নেইলরের মতে, “তখন শুধু সময়ের অপেক্ষা ছিল, কখন মানুষের সঙ্গে হাঙরের দেখা হবে।
তবে, বর্তমানে হাঙর সম্পর্কে মানুষের ধারণা অনেকটাই বদলে গেছে।
বিজ্ঞানীরা এখন তাদের সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিচ্ছেন।
কারণ অতিরিক্ত মাছ ধরার কারণে অনেক হাঙর প্রজাতি বিলুপ্তির পথে।
জেনিফার মার্টিনের মতে, “আমরা যদি তাদের বাস্তুতন্ত্রের শীর্ষস্থানীয় প্রাণী হিসেবে বুঝতে পারি, তবে তাদের প্রতি আরও শ্রদ্ধাশীল হতে পারব।”
সিনেমার প্রভাব এবং মানুষের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তনের কারণে, বর্তমানে হাঙর সংরক্ষণে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
এই প্রসঙ্গে গ্যাভিন নেইলর বলেন, “হাঙর এখন নতুন আদরের প্রাণী হতে চলেছে।
তারা মানুষ শিকার করে না, তবে কিছু পরিস্থিতিতে, বিশেষ করে যখন জল ঘোলাটে থাকে, তখন ভুল করে ফেলতে পারে।”
সুতরাং, ‘জস’-এর মতো সিনেমা আমাদের ভয় ধরিয়ে দিতে পারে, তবে এটি হাঙর সম্পর্কে জানার এবং তাদের সংরক্ষণে উৎসাহিত করতেও সাহায্য করে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন