চলচ্চিত্র ‘জস’-এর পঞ্চাশ বছর: মার্থাস ভিনিয়ার্ডের জীবনে এক রূপান্তর। সিনেমা জগৎ শুধু বিনোদনের মাধ্যম নয়, বরং এটি একটি শক্তিশালী হাতিয়ার যা একটি অঞ্চলের সংস্কৃতি, অর্থনীতি এবং পরিচিতিকে বদলে দিতে পারে।
স্টিভেন স্পিলবার্গ-এর বিখ্যাত সিনেমা ‘জস’ মুক্তি পাওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রের মার্থাস ভিনিয়ার্ড দ্বীপের জীবনেও এসেছিল এমনই এক পরিবর্তন। ১৯৭৫ সালের ২০শে জুন মুক্তি পাওয়া এই সিনেমাটি, এক সময়ের শান্ত ও নিস্তব্ধ দ্বীপটিকে পরিণত করে বিশ্বজুড়ে পরিচিত এক পর্যটন কেন্দ্রে।
সিনেমাটি মুক্তি পাওয়ার আগে, মার্থাস ভিনিয়ার্ড ছিল হলিউডের থেকে অনেক দূরে। এখানকার স্থানীয় বাসিন্দাদের জীবনযাত্রা ছিল খুবই সাধারণ। কিন্তু ‘জস’ মুক্তি পাওয়ার পরেই যেন সব কিছু বদলে যেতে শুরু করে।
দ্বীপটি বিশ্ববাসীর কাছে পরিচিতি লাভ করে, এবং পর্যটকদের আনাগোনা বাড়তে থাকে। শুধু পর্যটকদের আগমনই নয়, এই সিনেমার শুটিংয়ের সঙ্গে যুক্ত হওয়া স্থানীয় মানুষগুলোর জীবনেও আসে পরিবর্তন।
সিনেমাটির শুটিংয়ের সময়কার স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে অনেকে তাদের অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন। সিনেমায় অভিনয় করা জেফরি ক্রেমার জানান, “এই সিনেমা আমাদের পরিচিতি এনে দিয়েছে। এর মাধ্যমেই সারা বিশ্ব থেকে মানুষজন মার্থাস ভিনিয়ার্ডে আসা শুরু করে।”
সিনেমা নির্মাণের সময়কার কিছু মজার ঘটনা আজও লোকমুখে ফেরে। যেমন, একটি দৃশ্যের শুটিংয়ের সময় কলাকুশলীদের মধ্যে খাবার নিয়ে মারামারি হয়েছিল, যা পরবর্তীতে হোটেল কর্তৃপক্ষের কাছে একটি গল্পের মতো হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সিনেমাটি এখানকার মানুষের জীবনযাত্রায় কেমন প্রভাব ফেলেছিল, সেই বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে মার্থাস ভিনিয়ার্ড মিউজিয়ামের গবেষণা লাইব্রেরিয়ান বো ভ্যান রিপার জানান, “আমি তখন সমুদ্র সৈকতে দাঁড়িয়ে সিনেমাটির শুটিং দেখছিলাম।
সহকারী পরিচালক আমাদের ডেকে, একশোজন সাহসী মানুষকে পানিতে নামতে বললেন। আমরাও সেই দলে ছিলাম। ঠান্ডা পানিতে বেশ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে ছিলাম, যেন আমরা সাঁতার কাটছি। সত্যি বলতে, কাজটি খুব সহজ ছিল না।”
সিনেমাটির কারণে দ্বীপের অর্থনীতিতে আসে পরিবর্তন। স্থানীয় অনেক মানুষ এই সিনেমার সঙ্গে বিভিন্নভাবে যুক্ত ছিলেন, কেউ অভিনেতা হিসেবে, কেউ ক্রু সদস্য হিসেবে, আবার কেউবা বিভিন্ন সাপ্লাইয়ের কাজ করেছেন।
চার্লি ব্লেয়ার, যিনি একসময় এখানকার হারবারমাস্টার ছিলেন, তিনি জানান, “ইউনিভার্সাল পিকচার্সের হয়ে আমি প্রায় দিনই ২০ ঘণ্টার বেশি কাজ করতাম। তাদের (সিনেমা নির্মাতাদের) পানির বিষয়ে তেমন কোনও ধারণা ছিল না। ফলে প্রায়ই নৌকাডুবির মতো ঘটনা ঘটত।”
সিনেমাতে ‘অ্যালেক্স কুইন্ট’ নামের একটি চরিত্রে অভিনয় করা জেফরি ভোরহিস জানান, “শুটিংয়ের শুরুতে আমাকে বলা হয়েছিল, প্রতিদিন ৪০ ডলার করে দেওয়া হবে। সিনেমায় আমার একটি সংলাপ ছিল।
স্টিভেন স্পিলবার্গ আমাকে বলেছিলেন, একটি দৃশ্যে আমার শরীরে রক্তের ফোয়ারা দেখানো হবে। প্রথমবার শুটিং করার সময়, দৃশ্যটি ভালো হয়নি। এরপর আরও কয়েকবার চেষ্টা করার পর দৃশ্যটি সম্পন্ন করা হয়।”
‘জস’ সিনেমার কারণে এখানকার মানুষের মধ্যে হাঙর সম্পর্কে নতুন ধারণা জন্মেছিল। এর কারণ ছিল, সিনেমায় হাঙরকে ভিলেন হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছিল।
মার্থাস ভিনিয়ার্ড চেম্বার অফ কমার্সের নির্বাহী পরিচালক এরিকা অ্যাশটন বলেন, “জস এবং মার্থাস ভিনিয়ার্ড একে অপরের সঙ্গে অবিচ্ছেদ্যভাবে জড়িত। এই সিনেমা শুধু সমুদ্রের উত্তেজনাকেই ধারণ করেনি, বরং এখানকার মানুষের জীবন এবং দ্বীপের চরিত্রকেও তুলে ধরেছে। সিনেমাটি আমাদের তৈরি করতে সাহায্য করেছে, এবং আমরাও সিনেমাটিকে নতুন রূপ দিয়েছি।”
‘জস’-এর মতো সিনেমাগুলো একটি অঞ্চলের সংস্কৃতি এবং পর্যটনকে উন্নত করতে পারে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটেও এমন অনেক উদাহরণ রয়েছে, যেখানে সিনেমার শুটিং লোকেশনগুলি পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় গন্তব্য হয়ে উঠেছে।
তথ্যসূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক