মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেরি ডি. ভ্যান্সের গ্রিনল্যান্ড সফরকে কেন্দ্র করে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। ডেনমার্কের অধীনস্থ স্ব-শাসিত অঞ্চল গ্রিনল্যান্ডে অপ্রত্যাশিত এই সফর নিয়ে ইতোমধ্যেই বিতর্ক শুরু হয়েছে, বিশেষ করে যখন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বীপটি কিনে নেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন।
শুক্রবার (তারিখ উল্লেখ করা হলো) গ্রিনল্যান্ডের একটি প্রত্যন্ত অঞ্চলে অবস্থিত মার্কিন সামরিক ঘাঁটিতে (পিটফিক) ভাইস প্রেসিডেন্ট ভ্যান্সের যাওয়ার কথা রয়েছে। এই সফরের ওপর নুউক ও কোপেনহেগেন-এর নেতারা গভীর নজর রাখছেন, কারণ ট্রাম্পের পুরনো মন্তব্যের জেরে তাঁরা এই সফরের বিরোধিতা করেছেন।
ডেনমার্কের প্রধানমন্ত্রী মেটে ফ্রেডেরিকসেন এক প্রতিক্রিয়ায় জানান, গ্রিনল্যান্ড ডেনিশ রাজ্যের অংশ এবং এতে কোনো পরিবর্তন হবে না। তিনি আরও বলেন, “আমরা যুক্তরাষ্ট্রকে সঙ্গে নিয়ে প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা বিষয়ক সহযোগিতা করতে আগ্রহী, বিশেষ করে ইউক্রেন এবং ইউরোপে। তবে গ্রিনল্যান্ড গ্রিনল্যান্ডবাসীরই।
অন্যদিকে, ডেনমার্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী লার্স লওক রাসমুসেন জানিয়েছেন, ডেনিশ রাজনীতিবিদরা পিটফিকে ভাইস প্রেসিডেন্ট ভ্যান্সকে স্বাগত জানাবেন না, কারণ এটি তাঁদের বিষয় নয়। রাসমুসেনের মতে, “এটি একজন মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্টের গ্রিনল্যান্ডে তাঁর নিজস্ব সামরিক স্থাপনা পরিদর্শনের বিষয়, এর সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই।
গ্রিনল্যান্ডে এই সফর এমন এক সময়ে হচ্ছে, যখন সেখানকার রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনের পর ঐক্যের বার্তা দিতে একটি জোট গঠনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। স্থানীয় গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, পার্লামেন্টের পাঁচটি দলের মধ্যে চারটি দলই—যারা ডেমোক্র্যাটদের নেতা জেনস ফ্রেডেরিক নিelsen-এর নেতৃত্বে জোট গড়তে রাজি হয়েছে। নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটরা ৩০ শতাংশ ভোট পেয়েছিল।
শুরুতে ভাইস প্রেসিডেন্টের স্ত্রী উশা ভ্যান্সের নেতৃত্বে নুউক ও সিসিমিয়ুটে যাওয়ার কথা ছিল। এমনকি বুলেটপ্রুফ গাড়িও সেখানে পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু গ্রিনল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী মুতে ইগেডে ও ডেনমার্কের প্রধানমন্ত্রীর আপত্তির পর হোয়াইট হাউস তাদের পরিকল্পনা পরিবর্তন করে পিটফিকে সফরের সিদ্ধান্ত নেয়।
ভাইস প্রেসিডেন্ট ভ্যান্স এক ভিডিও বার্তায় বলেছেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের পক্ষ থেকে তিনি গ্রিনল্যান্ডের জনগণের নিরাপত্তা পুনরুজ্জীবিত করতে চান, কারণ তাঁদের মতে এটি “পুরো বিশ্বের নিরাপত্তা”র জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
ডেনমার্কের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ট্রলস লান্ড পাউলসেন ট্রাম্পের মন্তব্যকে “অপ্রত্যাশিত” এবং “একটি লুকানো হুমকি” হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, “মার্কিন প্রেসিডেন্টের এমন ভাষা ব্যবহার করা উচিত হয়নি। গ্রিনল্যান্ডের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করা এবং গ্রিনল্যান্ডের জনগণের ভবিষ্যৎ নির্ধারণের অধিকারকে সম্মান না করা—উভয় দিক থেকেই এটি ভুল।
এদিকে, নির্বাচনে দ্বিতীয় স্থানে আসা নালেরাক দলের নেতা পেলে ব্রোবার্গ এই সফর নিয়ে কূটনৈতিক মতানৈক্যকে “গ্রিনল্যান্ডের রাজনীতিবিদদের চরম কূটনৈতিক ব্যর্থতা” হিসেবে অভিহিত করেছেন।
অন্যদিকে, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গ্রিনল্যান্ড অধিগ্রহণের পরিকল্পনার সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেন, “আমরা গ্রিনল্যান্ড নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের গুরুতর পরিকল্পনাের কথা বলছি, যার দীর্ঘ ঐতিহাসিক ভিত্তি রয়েছে।
আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে এই প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে।