শিরোনাম: লন্ডনের পাতাল রেলে ভুলবশত নিহত ব্রাজিলের নাগরিক, ঘটনার সত্যতা তুলে ধরছে নতুন নাটক।
২০০৫ সালের জুলাই মাসের এক ভয়াবহ দিনে লন্ডনের পাতাল রেলে পুলিশের গুলিতে নিহত হন জঁ শার্ল দে মেনেজেস নামের এক নিরীহ ব্রাজিলীয় নাগরিক। ঘটনার দুই সপ্তাহ আগে লন্ডনে ৭/৭ বোমা হামলার ঘটনা ঘটেছিল, যার রেশ তখনও কাটেনি।
এই পরিস্থিতিতে পুলিশের ধারণা ছিল, দে মেনেজেস একজন সন্ত্রাসী এবং তার কাছে বোমা রয়েছে। পরবর্তীতে জানা যায়, পুলিশের এই ধারণা ছিল সম্পূর্ণ ভুল এবং একজন নিরীহ মানুষকে জীবন দিতে হয়েছে।
ঘটনার বিবরণ অনুযায়ী, ২৭ বছর বয়সী জঁ শার্ল দে মেনেজেস স্টকওয়েল টিউব স্টেশনে ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সাদা পোশাকের কয়েকজন পুলিশ সদস্য তাকে অনুসরণ করে এবং এক পর্যায়ে তারা তাকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়।
এই ঘটনাটি দ্রুত সারা বিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টি করে, বিশেষ করে যখন জানা যায় দে মেনেজেস কোনো সন্ত্রাসী ছিলেন না।
এই ঘটনার প্রেক্ষাপটে নির্মিত হয়েছে একটি নতুন নাটক, যার নাম ‘সাসপেক্ট: দ্য শুটিং অফ জঁ শার্ল দে মেনেজেস’। নাটকটি নির্মাণে মূল উদ্দেশ্য ছিল, ঘটনার সত্যতা তুলে ধরা এবং সেই সময়ের ভুল ধারণাগুলো ভেঙে দেওয়া।
নাটকের পরিচালক ও কলাকুশলীরা জানিয়েছেন, তারা চেয়েছিলেন, ঘটনার ভয়াবহতা এবং দে মেনেজেসের পরিবারের কষ্টগুলো যেন যথাযথভাবে ফুটিয়ে তোলা যায়।
নাটকে জঁ শার্ল দে মেনেজেসের চরিত্রে অভিনয় করেছেন অভিনেতা এডিসন আলকাইডে। তিনি জানান, ঘটনার শিকার ব্যক্তির চরিত্রে অভিনয় করাটা তার জন্য অত্যন্ত কঠিন ছিল, কারণ এটি একটি বাস্তব ঘটনা এবং এতে অনেক মানুষের জীবন জড়িত।
তিনি আরও বলেন, “আমি যখন লন্ডনে আসি, তখন জানতে পারি, এই শহরেই জঁ শার্লের বাড়ি ছিল। তার স্মৃতিস্তম্ভ দেখে আমার মনে হয়েছিল, আসলে কি ঘটেছিল?”
নাটকে পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের ভূমিকাও তুলে ধরা হয়েছে। তাদের মধ্যে রয়েছেন মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার ইয়ান ব্লেয়ার, যিনি ঘটনার প্রাথমিক তথ্যের ভিত্তিতে দ্রুত বিবৃতি দিয়েছিলেন।
এছাড়াও, এই ঘটনায় জড়িত ছিলেন ক্রিসিডা ডিক এবং ব্রায়ান প্যাডিকসহ আরও অনেকে। ব্রায়ান প্যাডিক সেই সময়কার অনেক মিথ্যা তথ্যের প্রতিবাদ করেছিলেন এবং দে মেনেজেসের সম্মান রক্ষার চেষ্টা করেছিলেন।
নাটকের নির্মাতারা জানিয়েছেন, এই ঘটনার পেছনে থাকা আসল সত্য উন্মোচন করাই তাদের প্রধান লক্ষ্য ছিল। তারা চেয়েছেন, দর্শক যেন বুঝতে পারে, কীভাবে একটি ভুল তথ্যের কারণে একজন মানুষের জীবন চলে যেতে পারে এবং এর প্রভাব কত সুদূরপ্রসারী হতে পারে।
এই নাটকের মাধ্যমে ভুল তথ্যের কুফল এবং সত্যের গুরুত্ব সম্পর্কে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে। নির্মাতারা আশা করছেন, এই নাটক মানুষকে সচেতন করবে এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ করতে সহায়ক হবে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান