বাঙ্কার থেকে সার্ফ স্কুল: যুদ্ধের স্মৃতি নিয়ে জার্সির আকর্ষণীয় সফর!

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন: জার্সির উপকূলবর্তী বাঙ্কারগুলো এখন নতুন রূপে। ইংলিশ চ্যানেল-এর বুকে অবস্থিত জার্সির দ্বীপপুঞ্জ, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নাৎসি জার্মানির দখলে ছিল।

সেই সময় দ্বীপটির উপকূল জুড়ে তৈরি হয়েছিল অসংখ্য বাঙ্কার, যা হিটলারের “আটলান্টিক ওয়াল”-এর গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল। যুদ্ধের পর, সময়ের সাথে সাথে এই বাঙ্কারগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ কঠিন হয়ে পড়েছিল।

তবে বর্তমানে, এই বাঙ্কারগুলো নতুন রূপে ফিরে এসেছে, যা একদিকে যেমন অতীতের স্মৃতি বহন করে, তেমনই দ্বীপের পর্যটন শিল্পে যোগ করেছে নতুন মাত্রা। ৮০ বছর আগে, ১৯৪৫ সালের ৯ই মে জার্মানির হাত থেকে মুক্তি পায় জার্সি।

সেই উপলক্ষে, দ্বীপটিতে চলছে নানা উৎসবের আয়োজন। একদিকে যেমন অতীতের দুঃসহ স্মৃতি, তেমনই বর্তমানের সম্ভাবনা—সবকিছুই যেন মিলেমিশে একাকার। এই বাঙ্কারগুলোর নতুন রূপান্তর তারই প্রমাণ।

এক সময়ের সামরিক ঘাঁটি ‘নিকোল টাওয়ার’ এখন একটি আকর্ষণীয় হলিডে হোম। এখানে পর্যটকেরা যুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত পরিবেশে ছুটি কাটানোর সুযোগ পান।

টাওয়ারের জানালাগুলো থেকে সমুদ্রের মনোরম দৃশ্য দেখা যায়, যা এক ভিন্ন অভিজ্ঞতা এনে দেয়। এক সময়ের গোপন আস্তানা ‘জার্সি ওয়ার টানেল’, যা একসময় একটি সামরিক হাসপাতাল ছিল, এখন জাদুঘরে পরিণত হয়েছে।

এখানে যুদ্ধের সময় দ্বীপবাসীর জীবনযাত্রা, জার্মান সেনাদের কার্যকলাপ, এবং স্থানীয় মানুষের প্রতিরোধ সংগ্রামের গল্প তুলে ধরা হয়। টানেলের ভেতরের আলো-আঁধারি পরিবেশ যুদ্ধের বিভীষিকা ফুটিয়ে তোলে।

সেন্ট অবিনের উপসাগরের কাছে, সমুদ্রের দিকে মুখ করা একটি বাঙ্কারে এখন ‘জার্সি ওয়ার ট্যুরস’-এর অফিস। এখানে আসা পর্যটকদের দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কার সামরিক কৌশল সম্পর্কে ধারণা দেওয়া হয়।

দ্বীপের উত্তর-পশ্চিম প্রান্তে অবস্থিত ‘ফকল্যান্ড ফিশারিজ’। এটি এক সময় একটি বাঙ্কার ছিল, যেখানে কামান বসানো হত। বর্তমানে এটি একটি মাছের বাজার ও ক্যাফেতে রূপান্তরিত হয়েছে।

এখানকার তাজা সামুদ্রিক খাবার পর্যটকদের কাছে খুবই প্রিয়। সেন্ট ওয়েন’স বে-র কাছে, একটি পরিত্যক্ত বাঙ্কার এখন ‘জার্সি সার্ফ স্কুল’-এর ঠিকানা।

এখানে সার্ফিং শেখার পাশাপাশি, বাঙ্কারটির ঐতিহাসিক গুরুত্ব সম্পর্কেও ধারণা দেওয়া হয়। জার্সির পুরনো বাঙ্কারগুলোর মধ্যে অন্যতম আকর্ষণীয় স্থান হল ‘ব্যাটেরি লথরিঞ্জেন’।

এটি একটি বিশাল সামরিক ঘাঁটি ছিল, যা বর্তমানে একটি জাদুঘর। এখানে যুদ্ধের সময়ের বিভিন্ন নিদর্শন, যেমন— পুরনো ছবি, অস্ত্রশস্ত্র, এবং সৈন্যদের ব্যবহৃত জিনিসপত্র প্রদর্শিত হয়।

জার্সি হেরিটেজ-এর তত্ত্বাবধানে, এই বাঙ্কারগুলোর সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণ করা হচ্ছে। তারা একদিকে যেমন ঐতিহাসিক গুরুত্ব বজায় রাখছে, তেমনই সেগুলোকে পর্যটকদের জন্য আকর্ষণীয় করে তুলছে।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত এই বাঙ্কারগুলো বর্তমানে দ্বীপটির সংস্কৃতি ও অর্থনীতির অবিচ্ছেদ্য অংশ। তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *