ক্যাথলিক চার্চের প্রভাবশালী শিল্পী, ফাদার মার্কো রুপনিকের বিরুদ্ধে যৌন, মানসিক ও আধ্যাত্মিক নির্যাতনের অভিযোগ আনা নারীদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে যিশু সংঘ (Jesuit Order)। এই ঘটনায় ন্যায়বিচারের জন্য বছরের পর বছর ধরে অপেক্ষা করা প্রায় ২০ জন নারীর প্রতি এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। খবরটি জানিয়েছে আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি)।
যিশু সংঘের রোমের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা ফাদার জোহান ভারসুচেন বুধবার জানান, রুপনিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা নারীদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার প্রস্তাব জানিয়ে তিনি একটি চিঠি পাঠিয়েছেন। রুপনিক স্লোভেনিয়ার একজন খ্যাতনামা শিল্পী।
ক্যাথলিক চার্চে তাঁর মোজাইক শিল্পকর্মের বেশ কদর রয়েছে। ভ্যাটিকান সিটিতেও তাঁর শিল্পকর্ম দেখা যায়।
২০২৩ সালে যিশু সংঘ রুপনিককে তাদের সংগঠন থেকে বহিষ্কার করে। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তিনি ৩০ বছর ধরে বহু নারীকে যৌন ও মানসিক নির্যাতন করেছেন।
নির্যাতিতাদের মধ্যে কেউ কেউ রুপনিকের সঙ্গে শিল্পকর্মের সহযোগী হিসেবে কাজ করতেন। রুপনিক যদিও তাঁর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
তিনি এখনও যাজক হিসেবে বহাল আছেন।
অভিযোগকারীরা বহু বছর আগেই রুপনিকের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছিলেন। তবে, ঘটনার গুরুত্ব এবং চার্চের ভেতর তাঁর বিশেষ অবস্থানের কারণে প্রথমে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এমনকি পোপ ফ্রান্সিসের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছিল।
যিশু সংঘ জানিয়েছে, এখন তারা বিশ্বাস করে যে ক্ষতিগ্রস্থদের আরোগ্য লাভের সম্ভাবনা রয়েছে। ফাদার ভারসুচেন তাঁর চিঠিতে উল্লেখ করেছেন, রুপনিক সত্য ও ক্ষতিপূরণের পথে হাঁটতে রাজি হননি।
দীর্ঘদিন ধরে চার্চও তাঁদের অভিযোগ আমলে নেয়নি। ভারসুচেন আরও জানান, ক্ষতিগ্রস্থদের প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যক্তিগত, বেনামী ও কেস-টু-কেস ভিত্তিতে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।
কিছু নারীর আইনজীবী লরা সগ্রো এই পদক্ষেপের জন্য যিশু সংঘকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। তিনি ভ্যাটিকানের ডকট্রিন অফ দ্য ফেইথ বিষয়ক বিভাগকে রুপনিকের বিচার করে ক্ষতিগ্রস্থদের সম্মান ফিরিয়ে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
রুপনিকের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলো প্রকাশ্যে আসার পর পোপ ফ্রান্সিসও সমালোচনার মুখে পড়েন। প্রথমে, ভ্যাটিকান পুরোনো অভিযোগগুলোর বিচার করতে রাজি হয়নি।
পরে, চাপের মুখে তিনি সময়সীমা শিথিল করেন, যাতে ভ্যাটিকান উপযুক্ত বিচার করতে পারে। যদিও এখনও পর্যন্ত কোনো বিচারিক কার্যক্রম শুরু হয়নি।
ডকট্রিন অফ দ্য ফেইথের প্রধান কার্ডিনাল ভিক্টর ম্যানুয়েল ফার্নান্দেজ জানিয়েছেন, বিচারক নিয়োগ করতে সমস্যা হচ্ছে। রুপনিকের প্রতি পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ ওঠায় বিষয়টি বেশ সংবেদনশীল হয়ে উঠেছে।
এছাড়া, বিশ্বজুড়ে রুপনিকের তৈরি করা অসংখ্য শিল্পকর্মের ভবিষ্যৎ নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
এ বিষয়ে রুপনিক এখনো কোনো মন্তব্য করেননি। তাঁর সমর্থকেরা এই ঘটনাকে মিডিয়ার ‘গণধোলাই’ বলে অভিহিত করেছেন।
তথ্যসূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস