ফিলিস্তিন ইস্যুতে ভিন্ন মতের কারণে কিছু ইহুদি পরিবারে দেখা দিয়েছে বিভেদ, যা বর্তমান সময়ে একটি উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাত নিয়ে ভিন্ন অবস্থান নেওয়ায় অনেক ইহুদি পরিবারে ভাঙন সৃষ্টি হয়েছে।
সম্প্রতি গাজায় ইসরায়েলি হামলা এবং ৭ অক্টোবরের ঘটনার পর এই বিভেদ আরও বেড়েছে। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায়, এই পরিস্থিতিতে অনেকে তাদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করতে বাধ্য হচ্ছেন।
অস্ট্রিয়ার ডালিয়া সারিগ এর একটি উদাহরণ। তিনি দীর্ঘদিন ধরে ফিলিস্তিনের পক্ষে কথা বলেন। তার এই অবস্থানের কারণে পরিবারের সঙ্গে তার দূরত্ব তৈরি হয়েছে।
ডালিয়ার বাবা-মা দুজনেই জায়নবাদী, যারা একটি ইহুদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পক্ষে। ডালিয়া মনে করেন, ইসরায়েলের এই আগ্রাসন ফিলিস্তিনিদের ওপর চরম নির্যাতন চালাচ্ছে।
ডালিয়া আল জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জানান, তিনি যখন ফিলিস্তিনের পক্ষে কথা বলেন, তখন তার বাবা-মা’র সঙ্গে তার তীব্র মতবিরোধ হয়। এক পর্যায়ে তার বাবা তাকে স্পষ্ট জানিয়ে দেন যে তিনি যেন তার রাজনৈতিক অবস্থান পরিবর্তন করেন, না হলে তাদের মধ্যে সম্পর্ক থাকবে না।
মা তাকে বিশ্বাসঘাতক এবং পরিবারের সম্মান নষ্টকারী হিসেবেও উল্লেখ করেন। ডালিয়া জানান, এই ঘটনার পর থেকে তিনি কার্যত তার বাবা-মায়ের সঙ্গে সম্পর্ক হারিয়েছেন।
শুধু ডালিয়া নন, এমন পরিস্থিতিতে আরও অনেক ইহুদি পরিবার পড়েছেন। জোনাথন অফির নামের একজন শিল্পী ডেনমার্কে বসবাস করেন। তিনি একসময় জায়নবাদী আদর্শে বিশ্বাসী ছিলেন।
কিন্তু পরে তিনি উপলব্ধি করেন যে ফিলিস্তিনিদের দৃষ্টিভঙ্গি সম্পূর্ণভাবে উপেক্ষা করা হচ্ছে। ইসরায়েলের গাজায় চালানো যুদ্ধের সময় তিনি যখন এর সমালোচনা করে ফেসবুকে পোস্ট করেন, তখন তার পরিবারের সদস্যরা তার ওপর ক্ষিপ্ত হন এবং তার সঙ্গে সম্পর্ক ছেদ করেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পরিবারে এমন বিভেদ মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলে। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউরোসায়েন্টিস্ট ড. ফাইসাল শরিফ বলেছেন, সামাজিক বিচ্ছিন্নতা শারীরিক ব্যথার মতোই মস্তিষ্কে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে।
তিনি আরও বলেন, ভালোবাসার শর্ত হিসেবে যখন নীরবতা বা কোনো অন্যায়ের প্রতি সমর্থন চাওয়া হয়, তখন তা গভীর ক্ষত সৃষ্টি করে।
এই পরিস্থিতিতে, পরিবারগুলোর মধ্যে আলোচনা জরুরি। যুদ্ধের মতো কঠিন বিষয়গুলোতে আবেগ এবং অনুভূতির প্রতি মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন। আলোচনার মাধ্যমে ভয়, অপরাধবোধ এবং দুঃখের মতো বিষয়গুলো চিহ্নিত করা গেলে সম্পর্কের উন্নতি হতে পারে।
বর্তমানে, ডালিয়া সারিগ অন্যান্য ইহুদি কর্মীদের সঙ্গে মিলে একটি সম্মেলনের আয়োজন করছেন, যেখানে জায়নবাদ বিরোধী ব্যক্তিরা একত্রিত হবেন। গাজায় ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলের হামলা এখনো চলছে।
ডালিয়া মনে করেন, এখন ফিলিস্তিনিদের পাশে দাঁড়ানো উচিত।
তথ্যসূত্র: আল জাজিরা