মার্কিন নৌ অ্যাকাডেমি থেকে ইহুদি নারী গ্র্যাজুয়েটদের ছবি ও স্মারকচিহ্ন সরিয়ে ফেলার ঘটনা ঘটেছে। পরে অবশ্য সেগুলো আবার ফিরিয়ে আনা হয়েছে।
জানা গেছে, কর্মকর্তাদের ভুল বোঝাবুঝির কারণে এই ঘটনা ঘটেছিল। পেন্টাগনের পক্ষ থেকে পাঠানো ‘বৈচিত্র্য, সমতা ও অন্তর্ভুক্তিমূলক’ (ডিইআই) বিষয়ক কিছু নির্দেশনার সঙ্গে সঙ্গতি রাখতেই সম্ভবত এমনটা করা হয়েছিল।
নৌবাহিনীর একজন মুখপাত্র সিএনএনকে জানিয়েছেন, “কমিডোর ইউরিয়া পি. লেভি সেন্টারে বিশিষ্ট নেতা ও গ্র্যাজুয়েটদের ছবি ও অন্যান্য জিনিস ভুল করে সরিয়ে ফেলা হয়েছিল।” মুখপাত্র আরও জানান, “নৌ অ্যাকাডেমির নেতৃত্ব দ্রুত ব্যবস্থা নিয়েছিল এবং ১ এপ্রিলের মধ্যে সব জিনিস পুনরুদ্ধার করে প্রদর্শনীতে রাখা হয়।”
ঘটনাটি ঘটে যখন প্রতিরক্ষামন্ত্রী, পেট হেগসেথ অ্যাকাডেমি পরিদর্শনে গিয়েছিলেন এবং সেখানে মিডশিপম্যানদের সঙ্গে কথা বলেছিলেন ও সুপারিনটেনডেন্ট ভাইস অ্যাডমিরাল ইভেট ডেভিডসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
সিএনএন-এর হাতে আসা একটি ইমেইল থেকে জানা যায়, ‘ফ্রেন্ডস অফ দ্য জিউইশ চ্যাপেল’ নামক একটি অলাভজনক সংস্থা, যা ইউনাইটেড স্টেটস নেভাল একাডেমির ইহুদি মিডশিপম্যানদের ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক জীবনকে উন্নত করার জন্য গঠিত হয়েছিল, তারা তাদের সদস্যদের জানায়, নৌ অ্যাকাডেমির কর্মকর্তাদের সঙ্গে তাদের কথা হয়েছে।
তাদের মতে, হেগসেথের সফরের সময়টাতেই প্রদর্শনী সরিয়ে ফেলার ঘটনা ঘটে। কারণ ডেভিডসও অ্যাকাডেমিকে ডিইআই সম্পর্কিত নির্বাহী আদেশ ও পেন্টাগন নীতি নির্দেশিকা মেনে চলতে বলেছিলেন।
ইমেইলটিতে আরও উল্লেখ করা হয়, ডেভিডস এবং অ্যাকাডেমির অন্যান্য নেতারা নিশ্চিত করেছেন যে, অপসারণের বিষয়টি সংশোধন করা হয়েছে।
পেন্টাগন মুখপাত্র শন পার্নেল বুধবার এক প্রশ্নের জবাবে জানান, সকল সামরিক একাডেমি “প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশগুলো সম্পূর্ণরূপে কার্যকর করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”
জানা গেছে, ২৮ মার্চ ‘দ্য জিউইশ উইমেন অফ দ্য নেভাল অ্যাকাডেমি’ প্রদর্শনীর বিষয়বস্তু সরিয়ে ফেলা হয় এবং পরে সিনিয়র নৌ অ্যাকাডেমি নেতাদের নজরে আসার পর তা পুনরুদ্ধার করা হয়।
ইমেইলটিতে ব্যাখ্যা করা হয়েছে, কমান্ড চেইনের একজন সদস্য ডেভিডসের অভিপ্রায় ভুল বুঝেছিলেন এবং স্টেইন সোশ্যাল হলের নারী কর্মকর্তাদের ছবি সরানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন।
সামরিক ধর্মীয় স্বাধীনতা ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা মাইকেল ওয়াইনস্টেইন বুধবার সিএনএনকে জানান, প্রায় ৩০ জন অ্যাকাডেমি শিক্ষক ও মিডশিপম্যান সোমবার এই বিষয়টি তাদের নজরে আনেন।
এমআরএফএফ (MRFF) অনলাইনে প্রদর্শিত ছবিগুলোতে দেখা যায়, একটি প্রদর্শনীতে একটি কার্ডবোর্ড দিয়ে সাইন বোর্ড ঢেকে দেওয়া হয়েছে, যেখানে নৌবাহিনীতে ইহুদি নারীদের অর্জন ও ইতিহাস তুলে ধরা হয়েছিল।
অভিযোগ করা হয়, অ্যাকাডেমি থেকে উত্তীর্ণ ইহুদি নারী গ্র্যাজুয়েটদের ছবি ও পুরস্কার সরিয়ে ফেলা হয়েছে। এদের মধ্যে ব্রোঞ্জ স্টার পাওয়া ব্যক্তিও ছিলেন।
ওয়াইনস্টেইন বলেন, “নেভাল একাডেমি থেকে পাস করা ইহুদি নারীদের চিহ্নিত করে তাদের ছবি সরিয়ে ফেলা, যাদের কেউ কেউ যুদ্ধ পদক পেয়েছেন, আবার কেউ শিক্ষাগত বা ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছেন, এমনকি সামরিক বিভাগে বৈমানিক হিসেবেও কাজ করেছেন, তাদের ছবি সরিয়ে দেওয়াটা ক্ষমার অযোগ্য।”
বিষয়টি সম্পর্কে অবগত একজন ব্যক্তি জানিয়েছেন, এই পদক্ষেপটি ছিল সম্ভবত একটি ‘স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া’।
কারণ, “ডিইআই বিষয়ক বিষয়গুলো আসলে কী, সে সম্পর্কে কারও স্পষ্ট ধারণা নেই… তাই তারা হয়তো ভেবেছে, চলো, নারীদের সব ছবি সরিয়ে দিই।”
হেগসেথ যখন পেন্টাগনের ‘উইক’ বা ডিইআই সম্পর্কিত বিষয়গুলো অপসারণের ওপর জোর দিয়েছেন, তখন থেকে এ ধরনের আরও বেশ কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে।
উদাহরণস্বরূপ, পেন্টাগন নারী ও ভিন্ন বর্ণের মানুষদের প্রশংসা করে এমন ঐতিহাসিক বিষয়বস্তু সরিয়ে ফেলেছে বা প্রতিরক্ষা বিভাগের ভিজ্যুয়াল ডেটাবেস থেকে ছবি সরানোর নির্দেশ দিয়েছে।
মার্চ মাসে পেন্টাগন মুখপাত্র শন পার্নেল স্বীকার করেছেন, হেগসেথের নির্দেশে কিছু “গুরুত্বপূর্ণ বিষয়বস্তু ভুলভাবে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।”
পার্নেল আরও বলেন, “আমরা খুব স্পষ্ট করে বলতে চাই: ইতিহাস ডিইআই নয়।
যখন কোনো বিষয়বস্তু ভুল করে সরানো হয় – অথবা ইচ্ছাকৃতভাবে সরানো হয় – আমরা দ্রুত তা পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করি।”
তথ্য সূত্র: সিএনএন